সাদা পাথর লুটের ঘটনায় দুদকের প্রতিবেদন
সিলেটের ভোলাগঞ্জে পাথর লুটের ঘটনা তদন্তে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, পুলিশ, ৪২ রাজনৈতিক নেতাসহ ৫১ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়ী করা হয়েছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে (বিএমডি)। একই ঘটনা তদন্তে ১০ সুপারিশসহ ৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া সচিবকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
স্ট্রিম সংবাদদাতা
সিলেটের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর লুটের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ৫১ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমনকি পাথর কোয়ারি ইজারা পাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্যের কয়েক গুণ বেশি টাকা উৎকোচ দিতে হতো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সব তথ্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এসপি ছাড়াও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সীমান্তরক্ষী (বিজিবি) পাথর লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও রাজনীতিকদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের নাম এসেছে। তালিকায় রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও।
একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে (বিএমডি) দায়ী করা হয়েছে। সাদা পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত বা সুবিধাভোগী হিসেবে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিদেরও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুদকের সিলেট দফতর সূত্র বাংলা স্ট্রিমকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানে পাওয়া সব তথ্য পরে প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সাদা পাথর এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পর্যটন সেবা ও নদীর তীরে বিজিবি ক্যাম্পের টহল চালু আছে। এর মধ্যেই পর্যটনকেন্দ্রটি থেকে গত কয়েক মাসে কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় সংগঠিত হয়েছে এই কাজ। পাথর আত্মসাতের প্রক্রিয়াটি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশে সংঘটিত হয়। নদী ও পর্যটন এলাকা থেকে পাথর চুরি করে প্রথমে স্থানীয় স্টোন ক্র্যাশার কারখানাগুলোতে জমা করা হয়। এই পাথর দ্রুত ভাঙ্গানো হয়, যাতে চুরির অস্তিত্ব না পাওয়া যায়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। এরপর থেকে কোয়ারিগুলোতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি ছিল না। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আবার অবৈধভাবে পাথর তোলা শুরু হয়। গত ৩ মাসে পাথর তোলা হয়েছে সব চেয়ে বেশি।
পরিবেশগত সংরক্ষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সাদা পাথর এলাকায় ১৩ আগস্টের আগের ১৫ দিন নির্বিচারে পাথর উত্তোলন ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসময় ওই এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়। অসংখ্য গর্ত হওয়ার পাশাপাশি এলাকাটি এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ২০ নেতার নাম। তাঁরা হলেন—সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম।
আরও আছেন জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, একই উপজেলার যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন দুদু, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও সাজন মিয়া; উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, সদস্য মোজাফর আলী, দলের কর্মী জাকির হোসেন, মানিক মিয়া এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স।
এদিকে দুদকের প্রতিবেদনের বিষয়টি জানাজানির পর বুধবার বিকেলে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ওই দুই নেতা ‘চ্যালেঞ্জ করে’ বলেন, পাথর লুটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তাঁদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। যাঁরা এই ‘মিথ্যা তথ্যটি’ পরিবেশন করেছেন, তাঁদের এটি প্রমাণ করতেই হবে। অন্যথায় এই ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতার নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন। বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়ে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সিলেট জেলার কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমানের নাম এসেছে সাদা পাথর লুটের ঘটনায়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভিযুক্ত নেতারা আত্মগোপনে থেকে পাথর লুটে যুক্ত হন।
দুদকের প্রতিবেদনে নাম এসেছে সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর। তাঁদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার তিল পরিমাণ সংশ্লিষ্টতা এখানে নায় (নাই)। কেউ কোনো কিছু প্রমাণ করতোও পারতো নায়। যেই রিপোর্ট দিছে, এটা সম্পূর্ণ ভুয়া রিপোর্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
দুদকের অনুসন্ধানে সাদা পাথর লুটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া আরও ব্যক্তিরা হলেন– কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ বাংলা স্ট্রিমকে বলেন, ‘প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে অনুসন্ধান নথি চালুর জন্য অনুমতি চেয়ে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদা আলাদা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
এদিকে পাথর লুটের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি বুধবার গঠনসহ এক প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। সদ্য বদলি হওয়া সিলেটর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বাংলা স্ট্রিমকে প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনও পড়ে দেখা হয়নি। দেখার পর তা আজই (বুধবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসনের তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পুলিশ ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও তালিকার ভিত্তিতে তাঁরা দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে ১০টি সুপারিশ করেছেন। এতে জড়িতদের নামের তালিকাও রয়েছে। তবে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির কাছে সহযোগিতার চিঠি দিয়েও তাদের সাড়া মেলেনি।
প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাথর লুটের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন, সাদা পাথর এলাকায় বিএমডির কার্যালয় স্থাপন, চেকপোস্ট বাড়ানো, টাস্কফোর্স অভিযান বৃদ্ধি ইত্যাদি।
দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও পর্যটনস্থানের সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ও মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের আদেশে ৫ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
সিলেটের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর লুটের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ৫১ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমনকি পাথর কোয়ারি ইজারা পাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্যের কয়েক গুণ বেশি টাকা উৎকোচ দিতে হতো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সব তথ্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এসপি ছাড়াও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সীমান্তরক্ষী (বিজিবি) পাথর লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও রাজনীতিকদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের নাম এসেছে। তালিকায় রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও।
একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে (বিএমডি) দায়ী করা হয়েছে। সাদা পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত বা সুবিধাভোগী হিসেবে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিদেরও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুদকের সিলেট দফতর সূত্র বাংলা স্ট্রিমকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানে পাওয়া সব তথ্য পরে প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সাদা পাথর এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পর্যটন সেবা ও নদীর তীরে বিজিবি ক্যাম্পের টহল চালু আছে। এর মধ্যেই পর্যটনকেন্দ্রটি থেকে গত কয়েক মাসে কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় সংগঠিত হয়েছে এই কাজ। পাথর আত্মসাতের প্রক্রিয়াটি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশে সংঘটিত হয়। নদী ও পর্যটন এলাকা থেকে পাথর চুরি করে প্রথমে স্থানীয় স্টোন ক্র্যাশার কারখানাগুলোতে জমা করা হয়। এই পাথর দ্রুত ভাঙ্গানো হয়, যাতে চুরির অস্তিত্ব না পাওয়া যায়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। এরপর থেকে কোয়ারিগুলোতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি ছিল না। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আবার অবৈধভাবে পাথর তোলা শুরু হয়। গত ৩ মাসে পাথর তোলা হয়েছে সব চেয়ে বেশি।
পরিবেশগত সংরক্ষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সাদা পাথর এলাকায় ১৩ আগস্টের আগের ১৫ দিন নির্বিচারে পাথর উত্তোলন ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসময় ওই এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়। অসংখ্য গর্ত হওয়ার পাশাপাশি এলাকাটি এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ২০ নেতার নাম। তাঁরা হলেন—সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম।
আরও আছেন জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, একই উপজেলার যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন দুদু, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও সাজন মিয়া; উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, সদস্য মোজাফর আলী, দলের কর্মী জাকির হোসেন, মানিক মিয়া এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স।
এদিকে দুদকের প্রতিবেদনের বিষয়টি জানাজানির পর বুধবার বিকেলে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ওই দুই নেতা ‘চ্যালেঞ্জ করে’ বলেন, পাথর লুটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তাঁদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। যাঁরা এই ‘মিথ্যা তথ্যটি’ পরিবেশন করেছেন, তাঁদের এটি প্রমাণ করতেই হবে। অন্যথায় এই ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতার নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন। বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়ে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সিলেট জেলার কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমানের নাম এসেছে সাদা পাথর লুটের ঘটনায়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভিযুক্ত নেতারা আত্মগোপনে থেকে পাথর লুটে যুক্ত হন।
দুদকের প্রতিবেদনে নাম এসেছে সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর। তাঁদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার তিল পরিমাণ সংশ্লিষ্টতা এখানে নায় (নাই)। কেউ কোনো কিছু প্রমাণ করতোও পারতো নায়। যেই রিপোর্ট দিছে, এটা সম্পূর্ণ ভুয়া রিপোর্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
দুদকের অনুসন্ধানে সাদা পাথর লুটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া আরও ব্যক্তিরা হলেন– কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ বাংলা স্ট্রিমকে বলেন, ‘প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে অনুসন্ধান নথি চালুর জন্য অনুমতি চেয়ে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদা আলাদা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
এদিকে পাথর লুটের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি বুধবার গঠনসহ এক প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। সদ্য বদলি হওয়া সিলেটর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বাংলা স্ট্রিমকে প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনও পড়ে দেখা হয়নি। দেখার পর তা আজই (বুধবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসনের তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পুলিশ ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও তালিকার ভিত্তিতে তাঁরা দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে ১০টি সুপারিশ করেছেন। এতে জড়িতদের নামের তালিকাও রয়েছে। তবে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির কাছে সহযোগিতার চিঠি দিয়েও তাদের সাড়া মেলেনি।
প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাথর লুটের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন, সাদা পাথর এলাকায় বিএমডির কার্যালয় স্থাপন, চেকপোস্ট বাড়ানো, টাস্কফোর্স অভিযান বৃদ্ধি ইত্যাদি।
দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও পর্যটনস্থানের সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ও মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের আদেশে ৫ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ড উপাচার্যসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দিতে চায় না। অনেক সময় তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্বে রাখতে চায়। এতে ট্রাস্টি বোর্ডের দুটি সুবিধা। ১. খরচ কম ও ২. উপাচার্যরা তাদের কথামতো চলেন।
২ দিন আগেদুই বছর আগেও বাংলাদেশিদের কাছে শেখ মুজিবের সমালোচনা এক অকল্পনীয় বিষয় ছিল। আজ সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝেও শোনা যাচ্ছে, ‘পাকিস্তানি আমলেই ভাল ছিলাম’ এর হাহাকার।
৪ দিন আগেবরাদ্দ পাওয়ার আশায় নিজেদের টাকায় সংস্কারকাজ করেছে অনেক বিদ্যালয়। এখন বরাদ্দ ফেরত যাওয়ায় তারাও পড়েছে বিপাকে। সেই সঙ্গে সংস্কার না হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
৪ দিন আগেজুলাই সনদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান। স্ট্রিমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি স্ট্রিমকে বলেছেন, জুলাই সনদে কিন্তু শুধু ঐকমত্যের জায়গাই নেই, সঙ্গে নোট অব ডিসেন্টও আছে। আমরা সই করেছি ঐকমত্য এবং নোট অব ডিসেন্ট–দুটো বিষয় নিয়েই।
৪ দিন আগে