স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় অপার সম্ভাবনাময় দেশে নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ‘তৎকালীন সরকারের ব্যর্থতা’, ‘লাগামহীন দুর্নীতি’, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা‘র বিষয়গুলো নিয়েই মূলত এই বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে—স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় কেন এমন চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হলো বাংলাদেশকে? সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছিল সদ্য স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক সংকটের গভীর চিত্র।
স্ট্রিম ডেস্ক
স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় এক দেউলিয়া অর্থনীতির মুখোমুখি বাংলাদেশ। অনাহারে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। জটিল আমলাতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সীমাহীন দুর্নীতির মিশ্রণ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতাও চলছে।
৯ মাসের পাকিস্তানি সেনা সন্ত্রাস ও তিন সপ্তাহের যুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণে ফসল, কারখানা, সেতু, রেলপথ ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর তিন বছর আগে জাতিসংঘ অনুমান করেছিল, স্বাধীনতার সংগ্রামের সহিংসতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দেশটির দেড় বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঘিরে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ দেখা দিয়েছিল ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের স্রোত নেমেছিল। পরের গ্রীষ্ম নাগাদ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু দুর্নীতিতে জর্জরিত, কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করাতে ও জন্মহার মোকাবিলায় সুসংহত কৃষিনীতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় দাতাদের হতাশা বেড়েছে। দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় বছরে মাত্র ৬৭ ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে নিচু স্তরের একটি।
উদ্বেগজনক পূর্বাভাস
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, ত্রাণ কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা দেশের সমস্যার ভয়াবহতা নিয়ে কখনো হতাশ, কখনো আতঙ্কিত। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘যা হয়তো আশির দশকে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বাকি অংশে ঘটবে, তা এখনই এখানে ঘটছে।’
এক প্রবীণ বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমি আশা হারিয়েছি। জানি না এরপর কী হবে। আমি নিজেই আমার পরিবারকে খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছি। এখানে কোনো পরিবর্তন দেখছি না, যদি কিছু হয়ও তবে আরও খারাপের দিকেই যাবে।’
এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা শুধু হতাশাজনক নয়, বরং করুণ। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ঘটনাবলীর এক মাঝখানে আমরা ফেঁসে গেছি, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’
বন্যায় গ্রীষ্মকালীন ফসল ধ্বংস হওয়ার কারণে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা গেছে। গত বছরে (১৯৭৩) মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস পাটকলগুলোতে গত চার বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। হাজার হাজার কৃষক হাঁড়ি-পাতিল, বলদ, এমনকি জমিও বিক্রি করে খাবার কিনেছে। ঢাকার রাস্তায় টাকার জন্য নগ্ন, অস্থিচর্মসার নবজাতক কোলে নিয়ে ভিক্ষা করা মহিলায় ভরে গেছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি মিনিটে সাতটি শিশু জন্ম নিচ্ছে। জনসংখ্যা প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই হারে চলতে থাকলে দুই দশকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ‘এই জনসংখ্যা টিকে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে সক্ষম নয়। সেই টিকে থাকাটাও আন্তর্জাতিক দানের ওপর নির্ভরশীল।’
জন্মনিয়ন্ত্রণে অনীহা
গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গ মাত্র একবার এসেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার উপকরণ বিতরণ করার জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গত গ্রীষ্মে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো তা চালু হয়নি। সম্প্রতি জার্মানির একটি দল এই উদ্দেশ্যে দুই সপ্তাহের সফরে এলেও এক সপ্তাহের মাথায় চলে যায়। তাঁরা মন্তব্য করে, দেশটি যখন জন্মনিয়ন্ত্রণে সত্যিই গুরুত্ব দেবে, তখন তারা ফিরবে।
সরকারি কর্মকর্তারা অকপটে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশ এখন দুর্বল ও অসুস্থ। তাঁরা বলেন, পাকিস্তান সরকারের ২৫ বছরের শোষণ এবং নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর গঠিত মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের (পশ্চিম পাকিস্তান) অংশ ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু উন্নয়ন তহবিল, বৈদেশিক সাহায্য, সরকারি প্রকল্প ও শিল্পের মূল অংশ চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। হাজার মাইল দূরের পূর্বাঞ্চল থেকে সম্পদ শোষণ করে পশ্চিমের উন্নয়ন হতো। ফলে বাংলাদেশি মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ নিতে থাকে তিন বছর আগে এই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে পাকিস্তান ভেঙে যায়।
এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার মতে, ‘যুদ্ধের আগে আমাদের রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী তৈরি করার সুযোগই হয়নি। ঢাকায় কয়েকটা টেলিফোন আর উঁচু দালান ছাড়া আমাদের কিছুই ছিল না। আমরা যেন মধ্যযুগীয় সমাজ। এর মধ্যে যুদ্ধ ছিল এক ধ্বংসাত্মক আঘাত। আমাদের ৮০ শতাংশ কর্মকর্তাই ছিলেন অ-বাঙালি। আমাদের সিভিল সার্ভেন্টরা ছিলেন অ-বাঙালি। আমাদের ব্যাংক, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কারখানা—সবই ছিল অ-বাঙালি চালিত। আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বা ভবিষ্যৎ সমাজের কোনো দৃষ্টি না থাকার মূল কারণ হল, আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। গড়ে তোলার কিছুই ছিল না।’
এক বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘দেশে এক লুটপাটের সমাজ তৈরি হয়েছে। এরা জীবনে কখনো টাকা বানায়নি, আর হঠাৎ করে কারখানা চালানো, লাইসেন্স-পরমিট দেওয়া, চেক লেখা, শেয়ার বিক্রি করা এসবের ক্ষমতা এদের হাতে এসেছে। তাই মাথা ঘুরে গেছে।’
রাষ্ট্রীয়করণ ও লুটপাট
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। দুই বছর আগেও বাংলাদেশিদের কাছে শেখ মুজিবের সমালোচনা এক অকল্পনীয় বিষয় ছিল। আজ সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝেও শোনা যাচ্ছে, ‘পাকিস্তানি আমলেই ভাল ছিলাম’ এর হাহাকার।
এক প্রকাশক মতে, ‘এ এক ট্র্যাজেডি। সরকার সমস্যাগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার মতো আবেগ বা সক্ষমতা কিছুই দেখাচ্ছে না। তারা বাংলাদেশকে একটা জাতি হিসেবে ভাবে না। আত্মীয়স্বজন আর প্রিয়জনদের ক্ষমতায় বসিয়ে কোনো গোষ্ঠীর প্রধান যেন একটা গ্রাম চালাচ্ছে।’
১৯৭২ সালের মার্চে ফেলে যাওয়া পাকিস্তানি মালিকানাধীন শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, বীমা, নৌপরিবহন সবই জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এক বিদেশি অর্থনীতিবিদ জানান, ‘এসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলীয় রাজনীতিবিদ ও সুযোগসন্ধানী আপনজনদের। তাঁরা যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছে, মজুদ পাচার করেছে, ঘুষ খেয়েছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে ডুবে আছে। ইস্পাত, প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ, কাগজ ও সার শিল্প এমন করুণ অবস্থায় যে এ বছরের সম্মিলিত উৎপাদন লক্ষ্যের মাত্র ৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
গত এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। এদিকে আমদানি বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ, অথচ পাট ও চা রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। চলতি বছরের (১৯৭৪) বাণিজ্য ঘাটতি এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ঢাকায় দুর্নীতি নিয়ে গল্প-গুজব ও তার দৃশ্যমান প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। এক সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, সাত টিন শিশুখাদ্যের মধ্যে মাত্র একটি গরিবদের কাছে পৌঁছায়, ১৩টি কম্বলের মধ্যে মাত্র একটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের প্রধান ও ঢাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফাসহ শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্য ও শিল্প, যোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাগনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পরিত্যক্ত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সরকারি অনুমতি নিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে ঘুষ নেওয়া হয়। সম্প্রতি ভারতে থেকে ফিরে আসা এক প্রবীণ অ-বাঙালির ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা আবারও খোলার অনুমতি শেখ মুজিব নিজে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিতে হয়েছে শেখ মুজিবের ভাগনেকে।
পশ্চিমবঙ্গে চাল চোরাচালানের পরিমাণের হিসাব ৩ লাখ টন থেকে বিস্ময়করভাবে ১০ লাখ টন পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০ জন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, লেখক ও আইনজীবী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দুর্ভিক্ষ ছিল মানুষসৃষ্ট এবং ‘নির্লজ্জ লুটপাট, শোষণ, সন্ত্রাস, তোষামোদ, প্রতারণা ও কুশাসনের প্রত্যক্ষ ফলাফল।’ সরকার ‘সুস্পষ্টভাবে চোরাকারবারি ও মুনাফাখোরদের দখলে।’
শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠজনেরাও স্বীকার করেন, তিনি ভালো প্রশাসক নন। এমনকি ছাত্রদের ভিসাপ্রাপ্তি, বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি, কিংবা কোনো কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মতো তুচ্ছ বিষয়ও তাঁর টেবিলে গিয়ে ঠেকে।
একজন বাংলাদেশি বলেন, ‘তিনি চান মানুষ তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম দিক, তাঁকে পিতৃতুল্য সম্বোধন করুক। তাঁর আনুগত্য পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি। তিনি বিশ্বাসই করেন না যে এরা দুর্নীতিগ্রস্ত ও তাঁকেই ঠকাতে পারে।’
অদক্ষ আমলাতন্ত্র
শুধু দুর্নীতি নয়, অদক্ষ আমলাতন্ত্রও উন্নয়ন স্থব্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। সরকারি কর্মচারীরা কম বেতনে কাজ করেন, আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে ভীত থাকেন, ও প্রায়শই এরা অদক্ষ। সম্প্রতি এক বিদেশি পরামর্শকের চুক্তি অনুমোদন হতে ২০৪ জনের টেবিল ঘুরে আসতে হয়েছে।
এক বিদেশি বলেন, ‘আপনি কোনো প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন, তারা বলে চিঠি পাঠান। আপনি খসড়া করেন, ছয় মাস লাগে জবাব পেতে।’
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশ্বব্যাংক ২৫ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনর্গঠন ঋণ অনুমোদন করেছিল। যা থেকে এখন পর্যন্ত সরকার খরচ করেছে মাত্র ২ মিলিয়ন।
শেখ মুজিব তাঁর বিরাট জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩১৫টির মধ্যে ৩০৮ আসনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট ছিলেন না। ৫০ হাজার পুলিশ ও সেনা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেই তৈরি করেন ১০ হাজার সদস্যের ‘রক্ষীবাহিনী’ নামক এক নিরাপত্তা বাহিনী।
সমালোচকেরা বলছেন, এই বাহিনী মেশিনগান হাতে গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, ওয়ারেন্ট ছাড়াই মানুষ গ্রেপ্তার করে, অস্ত্র খুঁজতে গ্রামে কারফিউ জারি করে ও সরকারের দমনযন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
অর্থনীতির উন্নতির জন্য বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধান ও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সাহায্যের ওপর নির্ভর করছেন শেখ মুজিব। গত বছর থেকেই সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহায়তা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মোট ১০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পৌঁছেছে।
দানে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভারত, জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকও বড় দাতা। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ২.৫ লাখ টনের বেশি খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং শিগগিরই আরও দেবে।
যদিও ফলাফল হতাশাজনক, তবুও ত্রাণ সংস্থা ও বিদেশি মিশনগুলো তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছে। চলতি মৌসুমের ফসল আপাতত দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কিছুটা কমিয়েছে, তবে কর্মকর্তারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করছেন।
সহায়তার দাতারা সরকারকে জানিয়েছে যে, জনসংখ্যা কমানো, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও চোরাকারবারি ও কালোবাজারিদের দমন করতে জরুরি কর্মসূচি নিতে হবে।
দাতা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সমস্যা হলো, কেউ সরকারের ভেতর থেকে কোনো প্রকৃত প্রতিশ্রুতি বা উদ্যম দেখতে পাচ্ছে না। সবাই উদ্বিগ্ন, শুধু সরকার ছাড়া। যদি আমরা এখানে কিছু করতে না পারি, তবে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ অন্ধকার।’
স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় এক দেউলিয়া অর্থনীতির মুখোমুখি বাংলাদেশ। অনাহারে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। জটিল আমলাতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সীমাহীন দুর্নীতির মিশ্রণ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতাও চলছে।
৯ মাসের পাকিস্তানি সেনা সন্ত্রাস ও তিন সপ্তাহের যুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণে ফসল, কারখানা, সেতু, রেলপথ ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর তিন বছর আগে জাতিসংঘ অনুমান করেছিল, স্বাধীনতার সংগ্রামের সহিংসতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দেশটির দেড় বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঘিরে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ দেখা দিয়েছিল ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের স্রোত নেমেছিল। পরের গ্রীষ্ম নাগাদ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু দুর্নীতিতে জর্জরিত, কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করাতে ও জন্মহার মোকাবিলায় সুসংহত কৃষিনীতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় দাতাদের হতাশা বেড়েছে। দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় বছরে মাত্র ৬৭ ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে নিচু স্তরের একটি।
উদ্বেগজনক পূর্বাভাস
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, ত্রাণ কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা দেশের সমস্যার ভয়াবহতা নিয়ে কখনো হতাশ, কখনো আতঙ্কিত। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘যা হয়তো আশির দশকে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বাকি অংশে ঘটবে, তা এখনই এখানে ঘটছে।’
এক প্রবীণ বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমি আশা হারিয়েছি। জানি না এরপর কী হবে। আমি নিজেই আমার পরিবারকে খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছি। এখানে কোনো পরিবর্তন দেখছি না, যদি কিছু হয়ও তবে আরও খারাপের দিকেই যাবে।’
এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা শুধু হতাশাজনক নয়, বরং করুণ। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ঘটনাবলীর এক মাঝখানে আমরা ফেঁসে গেছি, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’
বন্যায় গ্রীষ্মকালীন ফসল ধ্বংস হওয়ার কারণে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা গেছে। গত বছরে (১৯৭৩) মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস পাটকলগুলোতে গত চার বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। হাজার হাজার কৃষক হাঁড়ি-পাতিল, বলদ, এমনকি জমিও বিক্রি করে খাবার কিনেছে। ঢাকার রাস্তায় টাকার জন্য নগ্ন, অস্থিচর্মসার নবজাতক কোলে নিয়ে ভিক্ষা করা মহিলায় ভরে গেছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি মিনিটে সাতটি শিশু জন্ম নিচ্ছে। জনসংখ্যা প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই হারে চলতে থাকলে দুই দশকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ‘এই জনসংখ্যা টিকে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে সক্ষম নয়। সেই টিকে থাকাটাও আন্তর্জাতিক দানের ওপর নির্ভরশীল।’
জন্মনিয়ন্ত্রণে অনীহা
গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গ মাত্র একবার এসেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার উপকরণ বিতরণ করার জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গত গ্রীষ্মে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো তা চালু হয়নি। সম্প্রতি জার্মানির একটি দল এই উদ্দেশ্যে দুই সপ্তাহের সফরে এলেও এক সপ্তাহের মাথায় চলে যায়। তাঁরা মন্তব্য করে, দেশটি যখন জন্মনিয়ন্ত্রণে সত্যিই গুরুত্ব দেবে, তখন তারা ফিরবে।
সরকারি কর্মকর্তারা অকপটে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশ এখন দুর্বল ও অসুস্থ। তাঁরা বলেন, পাকিস্তান সরকারের ২৫ বছরের শোষণ এবং নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর গঠিত মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের (পশ্চিম পাকিস্তান) অংশ ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু উন্নয়ন তহবিল, বৈদেশিক সাহায্য, সরকারি প্রকল্প ও শিল্পের মূল অংশ চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। হাজার মাইল দূরের পূর্বাঞ্চল থেকে সম্পদ শোষণ করে পশ্চিমের উন্নয়ন হতো। ফলে বাংলাদেশি মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ নিতে থাকে তিন বছর আগে এই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে পাকিস্তান ভেঙে যায়।
এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার মতে, ‘যুদ্ধের আগে আমাদের রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী তৈরি করার সুযোগই হয়নি। ঢাকায় কয়েকটা টেলিফোন আর উঁচু দালান ছাড়া আমাদের কিছুই ছিল না। আমরা যেন মধ্যযুগীয় সমাজ। এর মধ্যে যুদ্ধ ছিল এক ধ্বংসাত্মক আঘাত। আমাদের ৮০ শতাংশ কর্মকর্তাই ছিলেন অ-বাঙালি। আমাদের সিভিল সার্ভেন্টরা ছিলেন অ-বাঙালি। আমাদের ব্যাংক, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কারখানা—সবই ছিল অ-বাঙালি চালিত। আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বা ভবিষ্যৎ সমাজের কোনো দৃষ্টি না থাকার মূল কারণ হল, আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। গড়ে তোলার কিছুই ছিল না।’
এক বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘দেশে এক লুটপাটের সমাজ তৈরি হয়েছে। এরা জীবনে কখনো টাকা বানায়নি, আর হঠাৎ করে কারখানা চালানো, লাইসেন্স-পরমিট দেওয়া, চেক লেখা, শেয়ার বিক্রি করা এসবের ক্ষমতা এদের হাতে এসেছে। তাই মাথা ঘুরে গেছে।’
রাষ্ট্রীয়করণ ও লুটপাট
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। দুই বছর আগেও বাংলাদেশিদের কাছে শেখ মুজিবের সমালোচনা এক অকল্পনীয় বিষয় ছিল। আজ সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝেও শোনা যাচ্ছে, ‘পাকিস্তানি আমলেই ভাল ছিলাম’ এর হাহাকার।
এক প্রকাশক মতে, ‘এ এক ট্র্যাজেডি। সরকার সমস্যাগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার মতো আবেগ বা সক্ষমতা কিছুই দেখাচ্ছে না। তারা বাংলাদেশকে একটা জাতি হিসেবে ভাবে না। আত্মীয়স্বজন আর প্রিয়জনদের ক্ষমতায় বসিয়ে কোনো গোষ্ঠীর প্রধান যেন একটা গ্রাম চালাচ্ছে।’
১৯৭২ সালের মার্চে ফেলে যাওয়া পাকিস্তানি মালিকানাধীন শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, বীমা, নৌপরিবহন সবই জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এক বিদেশি অর্থনীতিবিদ জানান, ‘এসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলীয় রাজনীতিবিদ ও সুযোগসন্ধানী আপনজনদের। তাঁরা যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছে, মজুদ পাচার করেছে, ঘুষ খেয়েছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে ডুবে আছে। ইস্পাত, প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ, কাগজ ও সার শিল্প এমন করুণ অবস্থায় যে এ বছরের সম্মিলিত উৎপাদন লক্ষ্যের মাত্র ৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
গত এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। এদিকে আমদানি বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ, অথচ পাট ও চা রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। চলতি বছরের (১৯৭৪) বাণিজ্য ঘাটতি এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ঢাকায় দুর্নীতি নিয়ে গল্প-গুজব ও তার দৃশ্যমান প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। এক সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, সাত টিন শিশুখাদ্যের মধ্যে মাত্র একটি গরিবদের কাছে পৌঁছায়, ১৩টি কম্বলের মধ্যে মাত্র একটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের প্রধান ও ঢাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফাসহ শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্য ও শিল্প, যোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাগনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পরিত্যক্ত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সরকারি অনুমতি নিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে ঘুষ নেওয়া হয়। সম্প্রতি ভারতে থেকে ফিরে আসা এক প্রবীণ অ-বাঙালির ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা আবারও খোলার অনুমতি শেখ মুজিব নিজে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিতে হয়েছে শেখ মুজিবের ভাগনেকে।
পশ্চিমবঙ্গে চাল চোরাচালানের পরিমাণের হিসাব ৩ লাখ টন থেকে বিস্ময়করভাবে ১০ লাখ টন পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০ জন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, লেখক ও আইনজীবী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দুর্ভিক্ষ ছিল মানুষসৃষ্ট এবং ‘নির্লজ্জ লুটপাট, শোষণ, সন্ত্রাস, তোষামোদ, প্রতারণা ও কুশাসনের প্রত্যক্ষ ফলাফল।’ সরকার ‘সুস্পষ্টভাবে চোরাকারবারি ও মুনাফাখোরদের দখলে।’
শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠজনেরাও স্বীকার করেন, তিনি ভালো প্রশাসক নন। এমনকি ছাত্রদের ভিসাপ্রাপ্তি, বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি, কিংবা কোনো কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মতো তুচ্ছ বিষয়ও তাঁর টেবিলে গিয়ে ঠেকে।
একজন বাংলাদেশি বলেন, ‘তিনি চান মানুষ তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম দিক, তাঁকে পিতৃতুল্য সম্বোধন করুক। তাঁর আনুগত্য পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি। তিনি বিশ্বাসই করেন না যে এরা দুর্নীতিগ্রস্ত ও তাঁকেই ঠকাতে পারে।’
অদক্ষ আমলাতন্ত্র
শুধু দুর্নীতি নয়, অদক্ষ আমলাতন্ত্রও উন্নয়ন স্থব্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। সরকারি কর্মচারীরা কম বেতনে কাজ করেন, আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে ভীত থাকেন, ও প্রায়শই এরা অদক্ষ। সম্প্রতি এক বিদেশি পরামর্শকের চুক্তি অনুমোদন হতে ২০৪ জনের টেবিল ঘুরে আসতে হয়েছে।
এক বিদেশি বলেন, ‘আপনি কোনো প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন, তারা বলে চিঠি পাঠান। আপনি খসড়া করেন, ছয় মাস লাগে জবাব পেতে।’
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশ্বব্যাংক ২৫ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনর্গঠন ঋণ অনুমোদন করেছিল। যা থেকে এখন পর্যন্ত সরকার খরচ করেছে মাত্র ২ মিলিয়ন।
শেখ মুজিব তাঁর বিরাট জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩১৫টির মধ্যে ৩০৮ আসনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট ছিলেন না। ৫০ হাজার পুলিশ ও সেনা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেই তৈরি করেন ১০ হাজার সদস্যের ‘রক্ষীবাহিনী’ নামক এক নিরাপত্তা বাহিনী।
সমালোচকেরা বলছেন, এই বাহিনী মেশিনগান হাতে গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, ওয়ারেন্ট ছাড়াই মানুষ গ্রেপ্তার করে, অস্ত্র খুঁজতে গ্রামে কারফিউ জারি করে ও সরকারের দমনযন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
অর্থনীতির উন্নতির জন্য বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধান ও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সাহায্যের ওপর নির্ভর করছেন শেখ মুজিব। গত বছর থেকেই সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহায়তা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মোট ১০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পৌঁছেছে।
দানে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভারত, জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকও বড় দাতা। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ২.৫ লাখ টনের বেশি খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং শিগগিরই আরও দেবে।
যদিও ফলাফল হতাশাজনক, তবুও ত্রাণ সংস্থা ও বিদেশি মিশনগুলো তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছে। চলতি মৌসুমের ফসল আপাতত দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কিছুটা কমিয়েছে, তবে কর্মকর্তারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করছেন।
সহায়তার দাতারা সরকারকে জানিয়েছে যে, জনসংখ্যা কমানো, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও চোরাকারবারি ও কালোবাজারিদের দমন করতে জরুরি কর্মসূচি নিতে হবে।
দাতা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সমস্যা হলো, কেউ সরকারের ভেতর থেকে কোনো প্রকৃত প্রতিশ্রুতি বা উদ্যম দেখতে পাচ্ছে না। সবাই উদ্বিগ্ন, শুধু সরকার ছাড়া। যদি আমরা এখানে কিছু করতে না পারি, তবে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ অন্ধকার।’
বরাদ্দ পাওয়ার আশায় নিজেদের টাকায় সংস্কারকাজ করেছে অনেক বিদ্যালয়। এখন বরাদ্দ ফেরত যাওয়ায় তারাও পড়েছে বিপাকে। সেই সঙ্গে সংস্কার না হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান। স্ট্রিমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি স্ট্রিমকে বলেছেন, জুলাই সনদে কিন্তু শুধু ঐকমত্যের জায়গাই নেই, সঙ্গে নোট অব ডিসেন্টও আছে। আমরা সই করেছি ঐকমত্য এবং নোট অব ডিসেন্ট–দুটো বিষয় নিয়েই।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সাক্ষাৎকারে তাঁরা জানিয়েছেন জুলাই সনদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদে তাঁদের কয়েকটি মৌলিক দাবি বাদ পড়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেআমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, জুলাই সনদের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এক্ষেত্রে বিএনপি যদি একটু উদারতা ও আন্তরিকতা দেখায়, আশা করি একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
৭ ঘণ্টা আগে