leadT1ad

সিএমপি কমিশনারের ওয়াকিটকি বক্তব্য ফাঁস

‘সংবেদনশীল’ তথ্য ফাঁস, কনস্টেবলের তিন দিনের রিমান্ড

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, একজন প্রশিক্ষিত কনস্টেবল হিসেবে গোপনীয়তা রক্ষা করা অমি দাশের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি তা পূরণ করেননি। এটি শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গ নয়, বরং পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

স্ট্রিম সংবাদদাতাচট্টগ্রাম
সাবেক পুলিশ কনস্টেবল অমি দাশ। সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের ওয়াকিটকি বক্তব্য প্রকাশ করায় পুলিশ কনস্টেবল অমি দাশের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ‘সংবেদনশীল’ তথ্য বিনা অনুমতিতে প্রকাশের অভিযোগে করা মামলায় তাঁর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

অমি দাশ পুলিশের টেলিকম ইউনিটের কনস্টেবল হিসেবে প্রেষণে সিএমপির খুলশী থানায় কর্মরত ছিলেন। এ সময় সিএমপির সদস্যদের উদ্দেশ্যে ওয়াকিটকিতে কমিশনারের দেওয়া বক্তব্য ফাঁস করেন তিনি। এ ঘটনায় রবিবার (১৭ আগস্ট) রাতে তাঁকে প্রথম আটক, পরে অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টে (১৯২৩) করা মামলা গ্রেপ্তার দেখায় খুলশী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরই তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

মামলার তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ আগস্ট চট্টগ্রামের খুলশী থানার গেটের সিঁড়িতে অবস্থানকালে কনস্টেবল অমি দাশ হাতে থাকা বেতার যন্ত্র ব্যবহার করে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের কৌশলগত নির্দেশনার ভিডিও ধারণ করেন। পরে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সম্পর্কে আগেই সতর্ক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, চলতি আগস্টের ১১ তারিখ রাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নগরের বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ গুরুতর আহত হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা করে বলে ধারণ করা হয়। এই ঘটনার পর দিন ১২ আগস্ট সিএমপির সব সদস্যের উদ্দেশে ওয়াকিটকিতে দেওয়া এক বার্তা দেন কমিশনার হাসিব আজিজ। এতে অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন কমিশন।

তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হওয়ায় কেবল পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং কৌশলগত অভিযানে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। একজন প্রশিক্ষিত কনস্টেবল হিসেবে গোপনীয়তা রক্ষা করা অমি দাশের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি তা পূরণ করেননি। এটি শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গ নয়, বরং পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

চট্টগ্রাম পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কমিশনারের নির্দেশ ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি বাইরে চলে আসায় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।’

আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ বলেন জানান, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট আইনে করা মামলায় অমি দাশের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’

আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট ধরনের আইন প্রয়োজন। তবে যেকোনো আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কনস্টেবল অমি দাশ যদি সত্যিই কমিশনারের নির্দেশ ফাঁস করে থাকেন, তবে এটি শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গুরুতর অপরাধ। কমিশনার কেবল আত্মরক্ষার আইনি অধিকার মনে করিয়ে দিয়েছেন।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত