ঘোস্ট রাইটিংয়ের আদ্যোপান্ত
আধুনিককালে বিশ্বের বহু রাজনৈতিক নেতা ও বিখ্যাত ব্যক্তির আত্মজীবনী লেখার পেছনে ছিলেন ঘোস্ট রাইটাররা। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বহু স্মৃতিকথা আসলে ঘোস্ট রাইটারদের লেখা। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ‘প্রোফাইলস ইন কারেজ’ বইটি তাঁর নামে প্রকাশিত হলেও এটি তাঁর বক্তৃতা লেখক টেড সোরেনসনের সহায়তায় লেখা হয়েছিল। ভারতের জওহরলাল নেহরুর কিছু লেখা সম্পাদনায় অন্যদের ভূমিকা ছিল। পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের আত্মজীবনীও ঘোস্ট রাইটাররা লিখে দিয়েছেন।
স্ট্রিম ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কি তাঁর নিজের লেখা, নাকি অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন? সম্প্রতি এই বিতর্কের সূত্রেই ‘ঘোস্ট রাইটিং’ বা অন্যের হয়ে লেখার প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বহু স্মৃতিকথা আসলে ঘোস্ট রাইটারদের লেখা। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ‘প্রোফাইলস ইন কারেজ’ বইটি তাঁর নিজের নামে প্রকাশিত হলেও এটি তাঁর বক্তৃতা লেখক টেড সোরেনসনের সহায়তায় লেখা হয়েছিল। ভারতের জওহরলাল নেহরুর কিছু লেখা সম্পাদনায় অন্যদের ভূমিকা ছিল। পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের আত্মজীবনীও ঘোস্ট রাইটাররা লিখে দিয়েছেন।
ঘোস্ট রাইটিং কী
ঘোস্ট রাইটিং হলো লেখালেখির এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন লেখক বা সম্পাদক কোনো ব্যক্তির নামে বই, নিবন্ধ, বক্তৃতা বা অন্য কোনো লিখিত কাজ তৈরি করেন। কিন্তু কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবে যার জন্য লেখা হয় সেই ব্যক্তির নামেই দেওয়া হয়। ঘোস্ট রাইটার সাধারণত পর্দার আড়ালে থাকেন এবং তাদের অবদান প্রকাশ্যে স্বীকৃত হয় না। লেখক হিসেবে তাদের নাম উল্লেখ করা হয় না।
ঘোস্ট রাইটিংয়ের ইতিহাস
ঘোস্ট রাইটিংয়ের প্রথম দৃষ্টান্ত প্রাচীন মিশর থেকে শুরু করে গ্রিস ও রোমান সভ্যতায়ও দেখা যায়। সে সময় নেতা-নেত্রীরা বক্তৃতা ও চিঠি লেখার জন্য লিপিকার ভাড়া করতেন।
রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা দীর্ঘদিন ধরে ঘোস্ট রাইটারের সাহায্যে বক্তৃতা লিখে আসছেন। এ ধরনের ঘোস্ট রাইটিংয়ের শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে ‘লোগোগ্রাফার’ নামে লেখকরা আদালতে ব্যবহারের জন্য বক্তৃতা লিখে দিতেন।
প্রাচীনকালে ঘোস্ট রাইটিং ছিল মূলত একটি বাস্তব প্রয়োজন। যারা লিখতে পারত, তারাই অন্যদের কথা লিখে রাখত। কিন্তু মধ্যযুগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে লেখকরা তাঁদের মনোযোগ বইয়ের দিকে ফেরান। মধ্যযুগে সন্ন্যাসীরাও এই কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা পাণ্ডুলিপি হাতে লিখে নকল করতেন। এটিও ছিল ঘোস্ট রাইটিংয়ের একটি রূপ। মধ্যযুগের ধর্মগ্রন্থগুলোও ধর্ম প্রবর্তকরা নিজ হাতে লেখেননি।
আধুনিক ঘোস্ট রাইটিং
রেনেসাঁর সময় মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবনের পর আধুনিক প্রকাশনা শিল্প জন্ম নেয় এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ফলে লেখকেরা কাজের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে থাকেন। তখন তারা ঘোস্ট রাইটার নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। এভাবেই আধুনিক ঘোস্ট রাইটিংয়ের জন্ম হয়। তবে বড় পরিসরে ঘোস্ট রাইটিং শুরু হয় ১৮ শতকে।
১৭০০ সালের পরপরই সাহিত্যের জগতে বড় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। উপন্যাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন নতুন রচনার চাহিদা তৈরি হয়। এতে লেখকদের ওপরও চাপ বাড়ে। তাই তারা ঘোস্ট রাইটারের সাহায্য নিতেন। এর একটি বিখ্যাত উদাহরণ হলেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি তাঁর অভিধান রচনায় ঘোস্ট রাইটার দলের সহায়তা নিয়েছিলেন।
১৯ শতকে বাণিজ্যিকভাবে ঘোস্ট রাইটিং শুরু হয়, বিশেষ করে সাহিত্য ও সংবাদপত্রে। পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকরাও প্রায়ই ছদ্মনাম ব্যবহার করে ঘোস্ট রাইটারদের দিয়ে লেখা প্রকাশ করতেন। যেমন, ‘ক্যারোলিন কিন’ নামটি আসলে একাধিক ঘোস্ট রাইটারের ছদ্মনাম। তাঁরাই লিখেছিলেন বিখ্যাত ‘ন্যান্সি ড্রিউ’ সিরিজের রহস্য উপন্যাসগুলো।
২০ শতকে এসে ঘোস্ট রাইটারদের চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। এসময় আত্মজীবনী ও সেলিব্রিটি ঘরানার বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ে। ১৯২০-এর দশকে ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটাররা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘ঘোস্ট রাইটার’ শব্দটিও এই সময়েই তৈরি হয়। আমেরিকার প্রথম ক্রীড়া এজেন্ট ক্রিস্টি ওয়ালশ ঘোস্ট রাইটার শব্দের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তিনি ‘ক্রিস্টি ওয়ালশ সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলেন ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী লেখার জন্য। সেখানে তিনি কিছু লেখককে নিয়োগ দিতেন, যাদের তিনি ‘ঘোস্ট’ বলে অভিহিত করতেন। আর তা থেকেই ‘ঘোস্ট রাইটার’ শব্দটির উদ্ভব হয়।
একুশ শতকে ঘোস্ট রাইটিং
ইন্টারনেট ঘোস্ট রাইটিংকে আমূল বদলে দিয়েছে। ডিজিটাল যুগে ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং ই-বুকের জন্য ঘোস্ট রাইটারদের চাহিদা বেড়েছে। এখন ফ্রিল্যান্স লেখকেরা দূরে বসেই কাজ করতে পারেন। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে অনলাইনে কাজ করছেন। ফলে ঘোস্ট রাইটিং একটি সমৃদ্ধ শিল্পে পরিণত হয়েছে। ফ্রিল্যান্স লেখকেরা ওয়েব কনটেন্ট, ব্লগপোস্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টসহ পূর্ণাঙ্গ বই ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখে দেন।
ঘোস্ট রাইটিংয়ের ইতিহাস এক আকর্ষণীয় অধ্যায়। এটি প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ এবং পাঠকের চাহিদার পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাচীন লিপিকার থেকে শুরু করে আধুনিক ফ্রিল্যান্সার— ঘোস্ট রাইটাররা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ গল্প ও ভাবনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে ঘোস্ট রাইটিং
সেবা প্রকাশনী প্রথম বাংলাদেশে অফিশিয়ালি ঘোস্ট রাইটারদের দিয়ে বই লেখানো শুরু করে। তাদের তিন গোয়েন্দা সিরিজের ঘোস্ট রাইটার ছিলেন রকিব হাসান ও শামসুদ্দীন নওয়াব। মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম ১১টি বই প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন নিজে লিখেছেন। কিন্তু পরবর্তী বইগুলোর ক্ষেত্রে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন শেখ আব্দুল হাকিম, কাজী মায়মুর হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন, ইফতেখার আমিন সহ বিভিন্ন লেখক। এছাড়াও কুয়াশা সহ ওয়েস্টার্ন সিরিজগুলোর ক্ষেত্রে সেবা প্রকাশনী ঘোস্ট রাইটার ব্যবহার করেছে বলে কথিত আছে।
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম তার লেখা বইগুলোর লেখক হিসেবে মালিকানাস্বত্ব দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে মামলা করে দেন। সেই মামলার রায়ে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আব্দুল হাকিমকে ঘোষণা করা হয়। ওই মামলার পরই ঘোস্ট রাইটিংয়ের বিষয়টি প্রথম বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে?
লেখালেখি ও গবেষণায় সাহায্যের জন্য জনপ্রিয়তা পাওয়া চ্যাটজিপিটি ও গ্রকের মতো এআই চ্যাটবটগুলো এখন সবাই ব্যবহার করেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে? এর উত্তর হলো ‘না’।
এই বিষয়ে খোদ চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়, ‘এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে?’ উত্তরে চ্যাটজিপিটি বলে, ‘না। কারণ এআই মানুষের হুবহু নকল করতে পারে এআই তথ্য দিতে পারে, কিন্তু ঘোস্ট রাইটার আনতে পারে সূক্ষ্মতা, দক্ষতা এবং মানবিক স্পর্শ।’
তবে এটা সত্য যে, এআই ঘোস্ট রাইটিং পেশার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে সাধারণ কোনও কনটেন্ট বা লেখা তৈরির ক্ষেত্রে। তবে, যারা অনন্য, ব্যক্তিগত বা বিশেষায়িত কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। এআই-কে প্রতিযোগী হিসেবে দেখার পরিবর্তে, ঘোস্ট রাইটাররা এটিকে সহযোগী টুল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে পারেন।
ঘোস্ট রাইটিং কি অবৈধ?
শিক্ষা ও গবেষণা ছাড়া ঘোস্ট রাইটিং আর কোথাও সাধারণত অবৈধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বা থিসিস লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটার নিয়োগ করা বা নিজের নামে অন্যের লেখা জমা দেয়া অবৈধ এবং অনৈতিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বই, প্রবন্ধ, ইমেইল, বক্তৃতা বা গান লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটার ব্যবহার করা বৈধ।
আইনে সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, মূল লেখক এবং ঘোস্ট রাইটার সম্মতির ভিত্তিতেই একটি চুক্তি করেন। যেখানে ঘোস্ট রাইটার একটি সেবা দিচ্ছেন এবং লেখক তার আর্থিক মূল্য পরিশোধ করছেন। যিনি সেবা জন্য অর্থ পরিশোধ করেন, তিনি উৎপন্ন সামগ্রীর মালিক হন। অতএব, একবার ঘোস্ট রাইটারের ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ করলে, কপিরাইট মূল লেখকের হয়ে যায়।
ইতিহাসের বিখ্যাত কয়েকজন ঘোস্ট রাইটার
ঘোস্ট রাইটিং করা বই লেখকের নিজের লেখা বই থেকে আলাদা কিছু নয়। এই তালিকার লেখকদের বই নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
অ্যালান ডিন ফস্টার: জর্জ লুকাসের ক্লাসিক স্পেস অপেরা ‘স্টার ওয়ার্স’-কে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে উপন্যাসে রুপ দেন ডিন ফস্টার। ‘স্টার ওয়ার্স: ফ্রম দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ লুক স্কাইওয়াকার’ বইটি লুকাসের নামে লেখা হলেও ফস্টার ছিলেন এর আসল লেখক।
এইচ পি লাভক্র্যাফট: অসাধারণ ভয় ও রহস্যময়তার স্রষ্টা লাভক্র্যাফট মূলত ‘কথুলু মিথস’ এর জনক হিসেবে পারিচিত। স্বনামধন্য এস্কেপ আর্টিস্ট বা জাদুকর হ্যারি হুডিনির জন্য ‘ইমপ্রিজন্ড উইথ দ্য ফারাওস’ নামের গল্পটি লেখেন তিনি। এটি হুডিনির পারফর্মেন্সের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে লেখা।
রেমন্ড বেনসন: ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের বেশ কয়েকটি কাহিনিকে উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন রেমন্ড বেনসন। এর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ এবং ‘টুমরো নেভার ডাইজ’। জেমস বন্ড উপন্যাসগুলোর লেখক হিসেবে কৃতিত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তবে খ্যাতনামা গোয়েন্দা ঔপন্যাসিক টম ক্ল্যান্সির জন্য ঘোস্ট রাইটিংও করেছিলেন। বিশেষ করে স্প্লিন্টার সেল সিরিজের জন্য। বেনসন ওই সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় বইয়ের জন্য ‘ডেভিড মাইকেলস’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন।
মার্ক টোয়েন: এই নামটি তালিকায় দেখে আপনি অবাক হতে পারেন। কিন্তু আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ হাস্যরসিক এই লেখক একসময় প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস. গ্রান্টকে তার আত্মজীবনী লেখায় সহায়তা করেছিলেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে টোয়েন গ্রান্টকে স্মৃতিকথা লিখতে উৎসাহিত করেন। পরবর্তীতে সেই বই বেস্টসেলার হয়ে ওঠে।
ঘোস্ট রাইটারদের আয় কেমন
ঘোস্ট রাইটারদের আয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কাজের ধরন, ক্লায়েন্টের বাজেট এবং ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ঘোস্ট রাইটারদের আয় সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া যায়:
বাংলাদেশে ঘোস্ট রাইটারদের আয়
বাংলাদেশের ঘোস্ট রাইটাররা ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করলে প্রতি শব্দে ১ সেন্ট থেকে ৫ সেন্ট পর্যন্ত আয় করতে পারেন। তার মানে ১০০০ শব্দের একটি লেখার জন্য ১০-৫০ ডলার (প্রায় ১২০০-৬০০০ টাকা) পেতে পারেন। টেকনিকাল রাইটিং, মেডিকেল রাইটিং প্রতি শব্দে ১০ সেন্ট বা তার বেশি আয় করতে পারেন।
বাংলাদেশে স্থানীয় ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করলে আয় তুলনামূলক কম হতে পারে। একটি ব্লগ বা কনটেন্টের জন্য ৫০০-৫০০০ টাকা পাওয়া যায়।
কোনো বই বা ই-বুক লেখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একজন ঘোস্ট রাইটার ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বা তার বেশি আয় করতে পারেন, তবে এটি প্রজেক্টের আকার ও ক্লায়েন্টের বাজেটের উপর নির্ভর করে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ঘোস্ট রাইটারদের আয়
আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন ঘোস্ট রাইটাররা প্রতি শব্দে ৩-১০ সেন্ট আয় করেন। ১০০০ শব্দের একটি লেখার জন্য ৩০-১০০ ডলার আয় হতে পারে। অভিজ্ঞতা থাকলে প্রতি শব্দে ১০-৫০ সেন্ট পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বই লেখার ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বা বিশেষায়িত ঘোস্ট রাইটাররা (যেমন সেলিব্রিটি বা ব্যবসায়ীদের জন্য বই লেখা) প্রতি প্রজেক্টে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার বা তার বেশি আয় করতে পারেন। ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ এর ঘোস্ট রাইটার জে আর মোহরিংগার ১০ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ঘোস্ট রাইটাররা মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করলে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কি তাঁর নিজের লেখা, নাকি অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন? সম্প্রতি এই বিতর্কের সূত্রেই ‘ঘোস্ট রাইটিং’ বা অন্যের হয়ে লেখার প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বহু স্মৃতিকথা আসলে ঘোস্ট রাইটারদের লেখা। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ‘প্রোফাইলস ইন কারেজ’ বইটি তাঁর নিজের নামে প্রকাশিত হলেও এটি তাঁর বক্তৃতা লেখক টেড সোরেনসনের সহায়তায় লেখা হয়েছিল। ভারতের জওহরলাল নেহরুর কিছু লেখা সম্পাদনায় অন্যদের ভূমিকা ছিল। পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের আত্মজীবনীও ঘোস্ট রাইটাররা লিখে দিয়েছেন।
ঘোস্ট রাইটিং কী
ঘোস্ট রাইটিং হলো লেখালেখির এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন লেখক বা সম্পাদক কোনো ব্যক্তির নামে বই, নিবন্ধ, বক্তৃতা বা অন্য কোনো লিখিত কাজ তৈরি করেন। কিন্তু কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবে যার জন্য লেখা হয় সেই ব্যক্তির নামেই দেওয়া হয়। ঘোস্ট রাইটার সাধারণত পর্দার আড়ালে থাকেন এবং তাদের অবদান প্রকাশ্যে স্বীকৃত হয় না। লেখক হিসেবে তাদের নাম উল্লেখ করা হয় না।
ঘোস্ট রাইটিংয়ের ইতিহাস
ঘোস্ট রাইটিংয়ের প্রথম দৃষ্টান্ত প্রাচীন মিশর থেকে শুরু করে গ্রিস ও রোমান সভ্যতায়ও দেখা যায়। সে সময় নেতা-নেত্রীরা বক্তৃতা ও চিঠি লেখার জন্য লিপিকার ভাড়া করতেন।
রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা দীর্ঘদিন ধরে ঘোস্ট রাইটারের সাহায্যে বক্তৃতা লিখে আসছেন। এ ধরনের ঘোস্ট রাইটিংয়ের শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে ‘লোগোগ্রাফার’ নামে লেখকরা আদালতে ব্যবহারের জন্য বক্তৃতা লিখে দিতেন।
প্রাচীনকালে ঘোস্ট রাইটিং ছিল মূলত একটি বাস্তব প্রয়োজন। যারা লিখতে পারত, তারাই অন্যদের কথা লিখে রাখত। কিন্তু মধ্যযুগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে লেখকরা তাঁদের মনোযোগ বইয়ের দিকে ফেরান। মধ্যযুগে সন্ন্যাসীরাও এই কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা পাণ্ডুলিপি হাতে লিখে নকল করতেন। এটিও ছিল ঘোস্ট রাইটিংয়ের একটি রূপ। মধ্যযুগের ধর্মগ্রন্থগুলোও ধর্ম প্রবর্তকরা নিজ হাতে লেখেননি।
আধুনিক ঘোস্ট রাইটিং
রেনেসাঁর সময় মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবনের পর আধুনিক প্রকাশনা শিল্প জন্ম নেয় এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ফলে লেখকেরা কাজের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে থাকেন। তখন তারা ঘোস্ট রাইটার নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। এভাবেই আধুনিক ঘোস্ট রাইটিংয়ের জন্ম হয়। তবে বড় পরিসরে ঘোস্ট রাইটিং শুরু হয় ১৮ শতকে।
১৭০০ সালের পরপরই সাহিত্যের জগতে বড় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। উপন্যাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন নতুন রচনার চাহিদা তৈরি হয়। এতে লেখকদের ওপরও চাপ বাড়ে। তাই তারা ঘোস্ট রাইটারের সাহায্য নিতেন। এর একটি বিখ্যাত উদাহরণ হলেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি তাঁর অভিধান রচনায় ঘোস্ট রাইটার দলের সহায়তা নিয়েছিলেন।
১৯ শতকে বাণিজ্যিকভাবে ঘোস্ট রাইটিং শুরু হয়, বিশেষ করে সাহিত্য ও সংবাদপত্রে। পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকরাও প্রায়ই ছদ্মনাম ব্যবহার করে ঘোস্ট রাইটারদের দিয়ে লেখা প্রকাশ করতেন। যেমন, ‘ক্যারোলিন কিন’ নামটি আসলে একাধিক ঘোস্ট রাইটারের ছদ্মনাম। তাঁরাই লিখেছিলেন বিখ্যাত ‘ন্যান্সি ড্রিউ’ সিরিজের রহস্য উপন্যাসগুলো।
২০ শতকে এসে ঘোস্ট রাইটারদের চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। এসময় আত্মজীবনী ও সেলিব্রিটি ঘরানার বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ে। ১৯২০-এর দশকে ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটাররা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘ঘোস্ট রাইটার’ শব্দটিও এই সময়েই তৈরি হয়। আমেরিকার প্রথম ক্রীড়া এজেন্ট ক্রিস্টি ওয়ালশ ঘোস্ট রাইটার শব্দের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তিনি ‘ক্রিস্টি ওয়ালশ সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলেন ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী লেখার জন্য। সেখানে তিনি কিছু লেখককে নিয়োগ দিতেন, যাদের তিনি ‘ঘোস্ট’ বলে অভিহিত করতেন। আর তা থেকেই ‘ঘোস্ট রাইটার’ শব্দটির উদ্ভব হয়।
একুশ শতকে ঘোস্ট রাইটিং
ইন্টারনেট ঘোস্ট রাইটিংকে আমূল বদলে দিয়েছে। ডিজিটাল যুগে ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং ই-বুকের জন্য ঘোস্ট রাইটারদের চাহিদা বেড়েছে। এখন ফ্রিল্যান্স লেখকেরা দূরে বসেই কাজ করতে পারেন। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে অনলাইনে কাজ করছেন। ফলে ঘোস্ট রাইটিং একটি সমৃদ্ধ শিল্পে পরিণত হয়েছে। ফ্রিল্যান্স লেখকেরা ওয়েব কনটেন্ট, ব্লগপোস্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টসহ পূর্ণাঙ্গ বই ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখে দেন।
ঘোস্ট রাইটিংয়ের ইতিহাস এক আকর্ষণীয় অধ্যায়। এটি প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ এবং পাঠকের চাহিদার পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাচীন লিপিকার থেকে শুরু করে আধুনিক ফ্রিল্যান্সার— ঘোস্ট রাইটাররা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ গল্প ও ভাবনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে ঘোস্ট রাইটিং
সেবা প্রকাশনী প্রথম বাংলাদেশে অফিশিয়ালি ঘোস্ট রাইটারদের দিয়ে বই লেখানো শুরু করে। তাদের তিন গোয়েন্দা সিরিজের ঘোস্ট রাইটার ছিলেন রকিব হাসান ও শামসুদ্দীন নওয়াব। মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম ১১টি বই প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন নিজে লিখেছেন। কিন্তু পরবর্তী বইগুলোর ক্ষেত্রে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন শেখ আব্দুল হাকিম, কাজী মায়মুর হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন, ইফতেখার আমিন সহ বিভিন্ন লেখক। এছাড়াও কুয়াশা সহ ওয়েস্টার্ন সিরিজগুলোর ক্ষেত্রে সেবা প্রকাশনী ঘোস্ট রাইটার ব্যবহার করেছে বলে কথিত আছে।
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম তার লেখা বইগুলোর লেখক হিসেবে মালিকানাস্বত্ব দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে মামলা করে দেন। সেই মামলার রায়ে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আব্দুল হাকিমকে ঘোষণা করা হয়। ওই মামলার পরই ঘোস্ট রাইটিংয়ের বিষয়টি প্রথম বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে?
লেখালেখি ও গবেষণায় সাহায্যের জন্য জনপ্রিয়তা পাওয়া চ্যাটজিপিটি ও গ্রকের মতো এআই চ্যাটবটগুলো এখন সবাই ব্যবহার করেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে? এর উত্তর হলো ‘না’।
এই বিষয়ে খোদ চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়, ‘এআই কি ঘোস্ট রাইটারদের পেশা কেড়ে নিতে পারে?’ উত্তরে চ্যাটজিপিটি বলে, ‘না। কারণ এআই মানুষের হুবহু নকল করতে পারে এআই তথ্য দিতে পারে, কিন্তু ঘোস্ট রাইটার আনতে পারে সূক্ষ্মতা, দক্ষতা এবং মানবিক স্পর্শ।’
তবে এটা সত্য যে, এআই ঘোস্ট রাইটিং পেশার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে সাধারণ কোনও কনটেন্ট বা লেখা তৈরির ক্ষেত্রে। তবে, যারা অনন্য, ব্যক্তিগত বা বিশেষায়িত কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। এআই-কে প্রতিযোগী হিসেবে দেখার পরিবর্তে, ঘোস্ট রাইটাররা এটিকে সহযোগী টুল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে পারেন।
ঘোস্ট রাইটিং কি অবৈধ?
শিক্ষা ও গবেষণা ছাড়া ঘোস্ট রাইটিং আর কোথাও সাধারণত অবৈধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বা থিসিস লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটার নিয়োগ করা বা নিজের নামে অন্যের লেখা জমা দেয়া অবৈধ এবং অনৈতিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বই, প্রবন্ধ, ইমেইল, বক্তৃতা বা গান লেখার জন্য ঘোস্ট রাইটার ব্যবহার করা বৈধ।
আইনে সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, মূল লেখক এবং ঘোস্ট রাইটার সম্মতির ভিত্তিতেই একটি চুক্তি করেন। যেখানে ঘোস্ট রাইটার একটি সেবা দিচ্ছেন এবং লেখক তার আর্থিক মূল্য পরিশোধ করছেন। যিনি সেবা জন্য অর্থ পরিশোধ করেন, তিনি উৎপন্ন সামগ্রীর মালিক হন। অতএব, একবার ঘোস্ট রাইটারের ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ করলে, কপিরাইট মূল লেখকের হয়ে যায়।
ইতিহাসের বিখ্যাত কয়েকজন ঘোস্ট রাইটার
ঘোস্ট রাইটিং করা বই লেখকের নিজের লেখা বই থেকে আলাদা কিছু নয়। এই তালিকার লেখকদের বই নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
অ্যালান ডিন ফস্টার: জর্জ লুকাসের ক্লাসিক স্পেস অপেরা ‘স্টার ওয়ার্স’-কে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে উপন্যাসে রুপ দেন ডিন ফস্টার। ‘স্টার ওয়ার্স: ফ্রম দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ লুক স্কাইওয়াকার’ বইটি লুকাসের নামে লেখা হলেও ফস্টার ছিলেন এর আসল লেখক।
এইচ পি লাভক্র্যাফট: অসাধারণ ভয় ও রহস্যময়তার স্রষ্টা লাভক্র্যাফট মূলত ‘কথুলু মিথস’ এর জনক হিসেবে পারিচিত। স্বনামধন্য এস্কেপ আর্টিস্ট বা জাদুকর হ্যারি হুডিনির জন্য ‘ইমপ্রিজন্ড উইথ দ্য ফারাওস’ নামের গল্পটি লেখেন তিনি। এটি হুডিনির পারফর্মেন্সের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে লেখা।
রেমন্ড বেনসন: ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের বেশ কয়েকটি কাহিনিকে উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন রেমন্ড বেনসন। এর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ এবং ‘টুমরো নেভার ডাইজ’। জেমস বন্ড উপন্যাসগুলোর লেখক হিসেবে কৃতিত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তবে খ্যাতনামা গোয়েন্দা ঔপন্যাসিক টম ক্ল্যান্সির জন্য ঘোস্ট রাইটিংও করেছিলেন। বিশেষ করে স্প্লিন্টার সেল সিরিজের জন্য। বেনসন ওই সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় বইয়ের জন্য ‘ডেভিড মাইকেলস’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন।
মার্ক টোয়েন: এই নামটি তালিকায় দেখে আপনি অবাক হতে পারেন। কিন্তু আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ হাস্যরসিক এই লেখক একসময় প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস. গ্রান্টকে তার আত্মজীবনী লেখায় সহায়তা করেছিলেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে টোয়েন গ্রান্টকে স্মৃতিকথা লিখতে উৎসাহিত করেন। পরবর্তীতে সেই বই বেস্টসেলার হয়ে ওঠে।
ঘোস্ট রাইটারদের আয় কেমন
ঘোস্ট রাইটারদের আয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কাজের ধরন, ক্লায়েন্টের বাজেট এবং ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ঘোস্ট রাইটারদের আয় সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া যায়:
বাংলাদেশে ঘোস্ট রাইটারদের আয়
বাংলাদেশের ঘোস্ট রাইটাররা ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করলে প্রতি শব্দে ১ সেন্ট থেকে ৫ সেন্ট পর্যন্ত আয় করতে পারেন। তার মানে ১০০০ শব্দের একটি লেখার জন্য ১০-৫০ ডলার (প্রায় ১২০০-৬০০০ টাকা) পেতে পারেন। টেকনিকাল রাইটিং, মেডিকেল রাইটিং প্রতি শব্দে ১০ সেন্ট বা তার বেশি আয় করতে পারেন।
বাংলাদেশে স্থানীয় ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করলে আয় তুলনামূলক কম হতে পারে। একটি ব্লগ বা কনটেন্টের জন্য ৫০০-৫০০০ টাকা পাওয়া যায়।
কোনো বই বা ই-বুক লেখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একজন ঘোস্ট রাইটার ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বা তার বেশি আয় করতে পারেন, তবে এটি প্রজেক্টের আকার ও ক্লায়েন্টের বাজেটের উপর নির্ভর করে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ঘোস্ট রাইটারদের আয়
আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন ঘোস্ট রাইটাররা প্রতি শব্দে ৩-১০ সেন্ট আয় করেন। ১০০০ শব্দের একটি লেখার জন্য ৩০-১০০ ডলার আয় হতে পারে। অভিজ্ঞতা থাকলে প্রতি শব্দে ১০-৫০ সেন্ট পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বই লেখার ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বা বিশেষায়িত ঘোস্ট রাইটাররা (যেমন সেলিব্রিটি বা ব্যবসায়ীদের জন্য বই লেখা) প্রতি প্রজেক্টে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার বা তার বেশি আয় করতে পারেন। ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ এর ঘোস্ট রাইটার জে আর মোহরিংগার ১০ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ঘোস্ট রাইটাররা মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করলে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে।
এই লেখাটি সেইসব নিরীহ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য, যারা আড্ডায় 'প্যারাসাইট'কে কোরিয়ান থ্রিলার বলে নির্বাসিত হয়েছেন। আপনি যদি এই আধা-ধর্মীয় সিনেফাইল সমাজে টিকে থাকতে চান, তবে আপনাকে জানতে হবে কিছু 'পীর' পরিচালকের নাম, ও দেখে ফেলতে হবে তাঁদের ‘পড়া পানি’ অর্থাৎ এই সাতটি সিনেমা।
১ দিন আগেআজ বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস। আলোকচিত্রে চেনা কিছুকেও নতুন রূপে চেনা যায়। তরুণ ফটোগ্রাফার জীবন মালাকার গড়াই নদীকে ফ্রেমে ধরেছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। কুষ্টিয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদী কীভাবে তাঁর ফ্রেমে উঠে এল, তা লেখা থেকে জানা যাবে। সঙ্গে থাকছে তাঁর তোলা গড়াই নদীর ১০টি ছবি।
১ দিন আগেমানুষের জীবন দীর্ঘ করার জন্য দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই অভ্যাসগুলো মানা বা জীবনধারা বদলানো অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। সবাই ব্যস্ত, সময়ের অভাব, আবার কোথা থেকে শুরু করবেন বা কীভাবে করবেন—এসব প্রশ্ন মাথায় আসে।
২ দিন আগেমুর্তজা বশীর বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রজন্মের চিত্রশিল্পী। তাঁর জন্ম ১৯৩২ সালে ১৭ আগষ্ট ঢাকার শহরে। বাবা জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, মা মরগুবা খাতুন।
৩ দিন আগে