leadT1ad

স্মারকলিপি দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা

মাইলস্টোনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৭ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ২৯
স্ট্রিম ছবি

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবার’-এর পক্ষ থেকে দেওয়া আট দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্ঘটনায় নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমার মামা লিয়ন মীর সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ তুলেছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষার পরও স্মারকলিপি দিতে না পেরে দুপুর দেড়টার দিকে একাডেমিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

এসময় তারা জানান, আগে থেকে অনুমতি নিয়েই স্মারকলিপি দিতে এসেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা প্রহরীদের বাধা উপেক্ষা করে কনফারেন্স রুমে প্রবেশের পরও কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।

পরিবারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি

উত্থাপিত আট দফা দাবির মধ্যে বলা হয়েছে, প্রথমত, বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাইলস্টোনসহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চতুর্থত, স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২ কোটি এবং আহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পঞ্চমত, রানওয়ের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে রানওয়ের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। ষষ্ঠত, কোচিং ব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা খাদিজাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সপ্তমত, দুর্ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরিবারগুলোর কাছে প্রদর্শন করতে হবে। সবশেষ, বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জনবসতিহীন এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিবারকে মোট ৭ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এর মধ্যে সরকারের কাছে ৫ কোটি ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা। অন্যদিকে আহত শিক্ষার্থীদের পরিবার প্রত্যেকে মোট ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। সরকার থেকে ১ কোটি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা।

কর্তৃপক্ষের পাল্টা ব্যাখ্যা

অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্মারকলিপি দিতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ তা নিতে রাজি হয়নি।

তবে কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের বলেছিলাম তিন-চার জনের প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি জমা দিতে পারে। কিন্তু তারা হট্টগোল করে একসঙ্গে ঢুকে পড়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই স্মারকলিপি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’

শাহ বুলবুল আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবির প্রতি সহমর্মী। তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখা হবে।’

অভিভাবকদের আক্ষেপ

সন্তানহারা পরিবারগুলো জানিয়েছেন, তারা কেবল সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা চান। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সামনে স্মারকলিপি নিতে অনীহা দেখিয়েছে, যা তাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে।

লিয়ন মীর বলেন, ‘আমরা সন্তান হারিয়েছি, তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। অথচ কর্তৃপক্ষের লোকজন ভেতরে লুকিয়ে থাকা আর সাংবাদিকদের সামনে না আসা আমাদের সঙ্গে নির্মম আচরণের শামিল।’

ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। পরিবারগুলো যেখানে স্বচ্ছ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা চান। কর্তৃপক্ষ সেখানে ‘বিশৃঙ্খলা’ ও ‘প্রক্রিয়া না মানা’র অভিযোগ তুলেছে। এর ফলে স্মারকলিপি ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত