জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া
রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, পিআর পদ্ধতিতে দ্বিমত।
মাইদুল ইসলাম
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ২৮ দফা সুপারিশ জানানো হয়েছিল। তা থেকে বাছাই করে ২২টি সুপারিশ প্রস্তাব আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত-দ্বিমত থাকলেও এসব সুপারিশের ব্যাপারে কেউই দ্বিমত পোষণ করেনি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ার অনুলিপি পাঠানো হয়। খসড়া পাঠিয়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রাপ্তি-স্বীকার করার অনুরোধ জানানো হয়।
সনদের চূড়ান্ত খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবিধানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা এবং তাঁর এখতিয়ার বাড়ানো, বিচারকদের পালনীয় আচরণবিধি, বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় দেখা গেছে, এ সব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান স্ট্রিমকে বলেন, এরকম হওয়ার পেছনে আপাত দৃষ্টিতে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, বিচার বিভাগের সংস্কারের বিষয়ে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবার চাওয়া। দ্বিতীয়ত, এই প্রস্তাবগুলো আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ফলে তারা সব প্রস্তাবের বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে, কীভাবে এটাকে মানে শক্ত আইনগত বা সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়া যাবে, ওটা এখনো ফাইনাল হয়নি। তবে, এখন আমরা আজকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সনদের খসড়া পাঠিয়েছি, রাজনৈতিক দলের নিশ্চয়ই কিছু মতামত থাকবে, তার ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে। আর আমরা আশা করছি, এর মধ্যেই আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত পাব। এরপর আমরা কীভাবে অগ্রসর হব, সেটা নির্ধারণ হবে এবং সম্ভবত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসব।
বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রস্তাব তোলা হয়। খসড়ায় বলা হয়, বাংলাদেশে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকবে, যার নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০০ সদস্য নিয়ে নিয়ে গঠন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ৩২টি রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছালেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে সিপিবি।
এই প্রস্তাবেই বলা হয়, নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বিএনপি ও এনডিএম।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর বা দুই মেয়াদ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করার প্রস্তাব তোলা হয়। বিষয়টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
বিচার বিভাগের সংস্কারের বিষয়ে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবার চাওয়া। দ্বিতীয়ত, এই প্রস্তাবগুলো আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ফলে তারা সব প্রস্তাবের বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
জুলাই জাতীয় সংসদের খসড়া অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। অভিশংসনের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। অভিশংসন প্রস্তাব আইনসভার নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে পাঠানো হবে। উচ্চকক্ষে শুনানির মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করার ক্ষমতা বহাল থাকবে রাষ্ট্রপতির। তবে নিঃশর্ত ক্ষমার ক্ষেত্রে আবেদন বিবেচনার পূর্বে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি নেওয়া হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে-কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে। আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে।
সনদের খসড়ায় বলা হয়, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে প্রস্তাবনাসহ সুনির্দিষ্ট কতগুলো অনুচ্ছেদ যেমন ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, (যেটি ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮৬ অনুচ্ছেদ হিসেবে সংবিধানে যুক্ত হবে তা) সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
আরও যে সব বিষয়ে ঐকমত্য
ভাষা ও নাগরিকত্ব: জুলাই সনদের খসড়ায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে বহাল রাখার পাশাপাশি সংবিধানে জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাগরিক পরিচয় নির্ধারণে ‘বাংলাদেশি’ পরিচিতি বহাল রাখার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে 'বাংলা' এবং বাংলাদেশে নাগরিকদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত অন্য সব ভাষাকে দেশের প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা ‘বাংলাদেশি’ বলে পরিচিত হবে।
সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান: খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে বহু–জাতি, বহু–ধর্ম, বহু–ভাষা ও বহু–সংস্কৃতির রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সংবিধানে স্পষ্টভাবে সব সম্প্রদায়ের মর্যাদা ও সহাবস্থানের নিশ্চয়তা যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি' উল্লেখ থাকবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি: অধিকাংশ দল রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সম্মিলিত নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাব সমর্থন করলেও কিছু দল সরাসরি জনভোটের দাবি করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ও প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। কারও প্রস্তাব ছিল নির্বাচনকালীন সরকারে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি প্রতিনিধিত্ব থাকবে, আবার কারও মতে এটি হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয়।
ধর্মীয় ধারা: সংবিধান থেকে ধর্মভিত্তিক বিশেষ ধারা অপসারণের বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। কিছু দল এর পক্ষে, কিছু দল এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতির হাতে বিচারক, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ ক্ষমতা থাকবে কিনা, এ প্রশ্নে ভিন্নমত থেকে গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আট দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে। অঙ্গীকারগুলো হলো— জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে সনদের প্রস্তাবগুলো আইনি রূপ দেওয়া; স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও স্বচ্ছ ভোট ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; বিচার বিভাগের নিয়োগ ও কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে পেশাদারত্ব নিশ্চিত করা; দুর্নীতি দমন কমিশন ও অডিট ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা; নারী ও জাতিগত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে কোটাভিত্তিক ব্যবস্থা কার্যকর করা; স্থানীয় সরকারকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া; রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ এবং তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ২৮ দফা সুপারিশ জানানো হয়েছিল। তা থেকে বাছাই করে ২২টি সুপারিশ প্রস্তাব আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত-দ্বিমত থাকলেও এসব সুপারিশের ব্যাপারে কেউই দ্বিমত পোষণ করেনি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ার অনুলিপি পাঠানো হয়। খসড়া পাঠিয়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রাপ্তি-স্বীকার করার অনুরোধ জানানো হয়।
সনদের চূড়ান্ত খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবিধানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা এবং তাঁর এখতিয়ার বাড়ানো, বিচারকদের পালনীয় আচরণবিধি, বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় দেখা গেছে, এ সব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান স্ট্রিমকে বলেন, এরকম হওয়ার পেছনে আপাত দৃষ্টিতে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, বিচার বিভাগের সংস্কারের বিষয়ে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবার চাওয়া। দ্বিতীয়ত, এই প্রস্তাবগুলো আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ফলে তারা সব প্রস্তাবের বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে, কীভাবে এটাকে মানে শক্ত আইনগত বা সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়া যাবে, ওটা এখনো ফাইনাল হয়নি। তবে, এখন আমরা আজকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সনদের খসড়া পাঠিয়েছি, রাজনৈতিক দলের নিশ্চয়ই কিছু মতামত থাকবে, তার ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে। আর আমরা আশা করছি, এর মধ্যেই আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত পাব। এরপর আমরা কীভাবে অগ্রসর হব, সেটা নির্ধারণ হবে এবং সম্ভবত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসব।
বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রস্তাব তোলা হয়। খসড়ায় বলা হয়, বাংলাদেশে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকবে, যার নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০০ সদস্য নিয়ে নিয়ে গঠন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ৩২টি রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছালেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে সিপিবি।
এই প্রস্তাবেই বলা হয়, নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বিএনপি ও এনডিএম।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর বা দুই মেয়াদ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করার প্রস্তাব তোলা হয়। বিষয়টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
বিচার বিভাগের সংস্কারের বিষয়ে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবার চাওয়া। দ্বিতীয়ত, এই প্রস্তাবগুলো আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ফলে তারা সব প্রস্তাবের বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
জুলাই জাতীয় সংসদের খসড়া অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। অভিশংসনের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। অভিশংসন প্রস্তাব আইনসভার নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে পাঠানো হবে। উচ্চকক্ষে শুনানির মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করার ক্ষমতা বহাল থাকবে রাষ্ট্রপতির। তবে নিঃশর্ত ক্ষমার ক্ষেত্রে আবেদন বিবেচনার পূর্বে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি নেওয়া হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে-কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে। আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে।
সনদের খসড়ায় বলা হয়, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে প্রস্তাবনাসহ সুনির্দিষ্ট কতগুলো অনুচ্ছেদ যেমন ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, (যেটি ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮৬ অনুচ্ছেদ হিসেবে সংবিধানে যুক্ত হবে তা) সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
আরও যে সব বিষয়ে ঐকমত্য
ভাষা ও নাগরিকত্ব: জুলাই সনদের খসড়ায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে বহাল রাখার পাশাপাশি সংবিধানে জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাগরিক পরিচয় নির্ধারণে ‘বাংলাদেশি’ পরিচিতি বহাল রাখার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে 'বাংলা' এবং বাংলাদেশে নাগরিকদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত অন্য সব ভাষাকে দেশের প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা ‘বাংলাদেশি’ বলে পরিচিত হবে।
সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান: খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে বহু–জাতি, বহু–ধর্ম, বহু–ভাষা ও বহু–সংস্কৃতির রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সংবিধানে স্পষ্টভাবে সব সম্প্রদায়ের মর্যাদা ও সহাবস্থানের নিশ্চয়তা যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি' উল্লেখ থাকবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি: অধিকাংশ দল রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সম্মিলিত নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাব সমর্থন করলেও কিছু দল সরাসরি জনভোটের দাবি করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ও প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। কারও প্রস্তাব ছিল নির্বাচনকালীন সরকারে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি প্রতিনিধিত্ব থাকবে, আবার কারও মতে এটি হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয়।
ধর্মীয় ধারা: সংবিধান থেকে ধর্মভিত্তিক বিশেষ ধারা অপসারণের বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। কিছু দল এর পক্ষে, কিছু দল এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতির হাতে বিচারক, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ ক্ষমতা থাকবে কিনা, এ প্রশ্নে ভিন্নমত থেকে গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আট দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে। অঙ্গীকারগুলো হলো— জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে সনদের প্রস্তাবগুলো আইনি রূপ দেওয়া; স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও স্বচ্ছ ভোট ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; বিচার বিভাগের নিয়োগ ও কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে পেশাদারত্ব নিশ্চিত করা; দুর্নীতি দমন কমিশন ও অডিট ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা; নারী ও জাতিগত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে কোটাভিত্তিক ব্যবস্থা কার্যকর করা; স্থানীয় সরকারকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া; রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ এবং তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার সরাসরি প্রতিফলনই জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। ‘জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়’ শিরোনামের এক সেমিনারে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ কথা বলেছেন।
১ ঘণ্টা আগেআন্দোলনকারীরা হাসপাতালের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসনের (ডিসি) কার্যালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান।
২ ঘণ্টা আগেআগুন লাগার কারণ কিংবা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর এ বিষয়ে জানানো হবে।
২ ঘণ্টা আগেনিহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিবারকে মোট ৭ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এর মধ্যে সরকারের কাছে ৫ কোটি ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা। অন্যদিকে আহত শিক্ষার্থীদের পরিবার প্রত্যেকে মোট ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
৩ ঘণ্টা আগে