leadT1ad

‘এস্থেটিক’ পাড়ায় পাত্তা পাচ্ছেন না? দেখে নিন এই ৭টি সিনেমা

এই লেখাটি সেইসব নিরীহ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য, যারা আড্ডায় 'প্যারাসাইট'কে কোরিয়ান থ্রিলার বলে নির্বাসিত হয়েছেন। আপনি যদি এই আধা-ধর্মীয় সিনেফাইল সমাজে টিকে থাকতে চান, তবে আপনাকে জানতে হবে কিছু 'পীর' পরিচালকের নাম, ও দেখে ফেলতে হবে তাঁদের ‘পড়া পানি’ অর্থাৎ এই সাতটি সিনেমা।

তুফায়েল আহমদঢাকা
‘এস্থেটিক’ পাড়ায় পাত্তা পাচ্ছেন না? দেখে নিন এই ৭টি সিনেমা। স্ট্রিম গ্রাফিক

এখনকার সময়ে সিনেমা মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে মার্ভেল, ডিসি, জন উইক ঘরানার ব্লাড-পাম্পিং, অ্যাকশনপুষ্ট ধুমধাড়াক্কা সিনেমা; আরেক দিকে, ত্রুফো, তারকোভস্কি, বার্গম্যান, বেলা-তারের জলছবির মতো স্লো মোশন দুঃখের সিনেমা। যেখানে চরিত্ররা তিন মিনিট ধরে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর ক্যামেরা তার চোখে কেবল জুম-ইন করে।

লুমিয়ের ব্রাদার্স যেদিন স্ক্রিনে ট্রেন ঢুকিয়ে লোকজনকে আসন ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছিলেন, সেই দিনই সিনেমা ম্যাজিক হয়ে ওঠেছিল। ১৮৯৫ থেকে ২০২৫, এই ১৩০ বছরে সিনেমার ভাষা পাল্টেছে, ফ্রেমের রং বদলেছে, আর অনেকেই বোঝার ভান করে চুপচাপ ঘাড় কাত করে বসে থেকেছেন। তারপর যখন ক্লান্ত হয়ে বলবেন, ‘গদার্ডের ক্যামেরা মুভমেন্ট তো পুরো রেভল্যুশন’। তখনই পাশের সিনেফাইল চশমার ফাঁক দিয়ে আপনাকে স্ক্যান করে নিয়ে বলবে, ‘ভাই, ওইটা গদার... ডি-সাইলেন্ট!’

আড্ডায় ভুল করেও যদি বলে বসেন সুপারম্যান আপনার প্রিয় সিনেমা, ‘প্রকৃত সিনেমাপ্রেমী’ সাবটাইটেলে পড়ে ফেলবেন: আপনি আসলে সিনেমার কিছুই বুঝেন না, শুধু পপকর্ন ভালোবাসেন।

আর যদি শাহরুখ-সালমানের সিনেমার কথা তোলেন? তওবা তওবা! আপনি তো প্রায় ধর্মনাশ লেভেলে চলে গেছেন। প্রকৃত সিনেপ্রেমী আপনার সঙ্গে কথা বলা তো অনেক দূরের কথা, আপনার ছায়াই আর মাড়াবেন না।

বাংলাদেশের সিনেফাইলদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডিতে প্রোফাইলে বাধ্যতামূলকভাবে তারকোভস্কি কিংবা গদারদের সিনেমার চরিত্রের ছবি পাবেন, কাভারে সিনেমার দৃশ্য কিংবা উক্তি পাবেন এবং বায়োতে ‘আমি সিনেমা খাই, সিনেমায় ঘুমাই’ কিংবা ‘সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং দর্শন’ টাইপ মহান বাক্যও পাবেন।

তাঁরা সিনেমা শুধু দেখেন না, সিনেমা পড়েন। আর আপনাকে অবশ্যই তাঁদের ফতোয়া মোতাবেকই সিনেমা দেখতে হবে। কারণ কথিত আছে ‘সিনেঅজ্ঞদের’ সঙ্গে আড্ডা দিলে সিনেমার স্পিরিচুয়াল এনার্জি কমে যায়। তাদের সিনেমা ভালোবাসা যেন একটা আধ্যাত্মিক সাধনা। শুধু দেখা নয়, তারা সিনেমায় বসবাস করেন। একেকজন যেন নিজস্ব বুনুয়েল কিংবা ফাসবিন্ডার বয়ে বেড়াচ্ছেন মনে মনে। সিনেমার শট কম্পোজিশন, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, হালকা ছায়া, মেটাফোর না বুঝে আপনি যদি হাসেন, তাহলে উনারা নিশ্চিত, আপনি সিনেমা নয়, নেটফ্লিক্সের রিকমেন্ডেশন খেয়ে বেঁচে আছেন।

আর তাই, এই লেখাটি সেইসব নিরীহ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য, যারা আড্ডায় 'প্যারাসাইট'কে কোরিয়ান থ্রিলার বলে নির্বাসিত হয়েছেন। আপনি যদি এই আধা-ধর্মীয় সিনেফাইল সমাজে টিকে থাকতে চান, তবে আপনাকে মুখস্থ করতে হবে কিছু 'পীর' পরিচালকের নাম, ও দেখে ফেলতে তাঁদের ‘পড়া পানি’ অর্থাৎ এই সাতটি সিনেমা।

ব্রেথলেস | জ্যঁ লুক গদার | ১৯৬০

গদারের ব্রেথলেস দেখতে বসা মানে একরকম পা হড়কে পড়া, কিন্তু মাটিতে নয়, বরং ভিজ্যুয়াল ভাষার অচেনা গর্তে। সিনেমার শুরুতে আপনি ভাববেন, ‘আরে, এইভাবে কেটে কেটে শট দেওয়া কেন?’ পাঁচ মিনিট পরেই আপনি হঠাৎ টের পাবেন, আপনার মাথাতেও কাটাকুটি শুরু হয়ে গেছে। কথার মধ্যে কথা, ভাবনার মধ্যে ভাবনা, আর সিনের মধ্যে আরেক সিন দরজা বাদ দিয়ে সোজা জানালা ভেঙে ঢুকে পড়ছে।

ধরুন, আপনি টিকাটুলির গলিতে বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে চানাচুর খাচ্ছেন। গল্প চলছে ‘জায়েদ খানই কি আমাদের টম ক্রুজ’ জাতীয় বিষয়ে। হঠাৎই জাম্প কাট! আপনি এখন আজিমপুরের ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে উদাস হয়ে আকাশ দেখছেন। মাঝখানে কী হলো, কে জানে! জীবন নিজেই এডিট হয়ে গেছে।

ব্রেথলেস, জ্যঁ লুক গদার, ১৯৬০। ছবি: আইএমডিবি
ব্রেথলেস, জ্যঁ লুক গদার, ১৯৬০। ছবি: আইএমডিবি

সিনেমাবদ্ধারা বলেন, গদারের সিনেমা দেখা মানে গল্প বোঝা না, বরং গল্প বুঝতে না-পারাটাকেই স্বাভাবিক ভাবা। ব্রেথলেস আপনাকে বলবে শুরু-মধ্য-শেষ এসব স্কুলবইয়ের বিন্যাস মাথা থেকে ধুয়ে ফেলতে। আপনাকে বুঝাবে গল্প আসলে লাইন নয়, একটা গোলকধাঁধা। ব্রেথলেস দেখা শেষে মাথা চুলকাতে চুলকাতে আপনি যখন উঠে দাঁড়াবেন, সিনেফাইল বন্ধু হয়তো তখন বলবেন, ‘এই তোর সিনেমাযাত্রা শুরু হল’। আপনি তখন তাঁকে চমকে দিয়ে বলতে পারবেন, গদার বলেছেন শুরু-শেষ সবই মায়া।

স্টকার | আন্দ্রেই তারকভস্কি | ১৯৭৯

তারকভস্কি হচ্ছেন আপনার স্কুললাইফের স্বপ্নের শিক্ষকের মতো, যিনি ক্লাসে ঢুকে প্রথমেই বলেন, ‘আজ আমরা কিছুই শিখব না। শুধু সময়ের ভেতর বসে থাকব।’ তারকভস্কির ‘স্টকার’ সিনেমাটা দেখা শুরুর কয়েকক্ষণের মধ্যেই আপনার সন্দেহ হবে প্লেব্যাক স্পিড ১ থেকে কমিয়ে দশমিক পাঁচ করে রাখিনি তো! নাকি আজকে নেটের লাইনে সমস্যা, সবকিছু এমন স্লো হয়ে গেছে কেন? পরে বুঝবেন এই স্লোনেসটাই স্টকারের মূলমন্ত্র। একেকটা শট এত লম্বা যে মনে হবে এক শটে আপনি ঘুমিয়ে পড়ে, স্বপ্ন দেখে ফিরে এসে দেখবেন সেই শটটাই চলছে।

ভাবুন না, অন্ধকার রাতে গ্রামের খোলা মাঠে আপনি কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেছেন। হাঁটছেন আর হাঁটছেন, জানেন না শেষ কোথায়। স্টকার সিনেমায় ‘জোন’ বলে একটা জায়গা আছে, যেখানে ‘মিনিং’ খুঁজতে গিয়ে অনেকের মতো আপনিও হারিয়ে যাবেন।

স্টকার, আন্দ্রেই তারকভস্কি, ১৯৭৯। ছবি: আইএমডিবি
স্টকার, আন্দ্রেই তারকভস্কি, ১৯৭৯। ছবি: আইএমডিবি

স্টকার সিনেমাটা শেষ করলে আপনার মনে হবে, পৃথিবী একটু চুপ হয়ে যাক। ফোন সাইলেন্ট, ল্যাপটপ বন্ধ, শুধু চায়ের কাপ আর জানালায় বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। কারণ এখন আপনি ‘ইনার জার্নিতে’ আছেন। মানে, শরীরের সব হুলস্থুল বাইরে রেখে আপনি ভেতরের দিকে হাঁটছেন।

সিনেফাইলরা বলেন, তারকভস্কির সিনেমা দেখতে হয় না, তাঁর সিনেমার ভেতরে হাঁটতে হয়।

২০০১: আ স্পেস অডিসি | স্ট্যানলি কুব্রিক | ১৯৬৮

সিনেমাটার প্রথম বিশ মিনিটে কোনো ডায়লগ নেই, শুধু বানর, হাড়, আর রিচার্ড স্ট্রাউস-এর সুর। কুব্রিক তাঁর অনায়াস মুন্সিয়ানায় আপনাকে বুঝিয়ে দেবেন, মানবসভ্যতার যাত্রা শুরু করার জন্য বানর, হাড় আর রিচার্ড স্ট্রাউসই যথেষ্ট।

শেষ বিশ মিনিটে এলএসডি ছাড়া ট্রিপিং-এর চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা। পর্দায় একটা বানর হাড় দিয়ে কিছু পেটাচ্ছে আর আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন। কীভাবে যেন সেটা থেকে স্পেস স্টেশন তৈরি হয়ে গেল, আপনি বুঝতেই পারলেন না। কারণ ২০০১: আ স্পেস অডিসি’র ভরকেন্দ্র লজিক হলেও সিনেমাটা মূলত মহাজাগতিক হ্যালুসিনেশন দিয়ে চলে।

২০০১: আ স্পেস অডিসি, স্ট্যানলি কুব্রিক, ১৯৬৮। ছবি: আইএমডিবি
২০০১: আ স্পেস অডিসি, স্ট্যানলি কুব্রিক, ১৯৬৮। ছবি: আইএমডিবি

সিনেমার মাঝামাঝি আপনি হয়তো বিরক্ত হয়ে বলে ফেললেন, ‘দূর ভাই, এসব কী হচ্ছে, সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।’ আর প্রকৃত সিনেফাইল তখন ফুঁপিয়ে উঠছেন। চোখে জল, কণ্ঠে বাষ্প – ‘আমরা মহাজগতের এক ধুলিকণা মাত্র…’

শেষ বিশ মিনিটে রং বদলাচ্ছে, আলো ফেটে যাচ্ছে, সময় গলে যাচ্ছে দেখে আপনি ভাববেন, পপকর্ন ভেবে ভুল করে এলএসডি খেয়ে ফেললাম নাকি? ভয় পাবেন না, আপনি খাননি, কিন্তু কুব্রিক খাইয়েছেন।
২০০১: আ স্পেস অডিসি সিনেমায় শুধু কাহিনি নেই, আছে মহাবিশ্বের চুপচাপ বিস্ফোরণ।

৮½ | ফেদেরিকো ফেল্লিনি | ১৯৬৩

ফেল্লিনি হলেন বিশৃঙ্খলার কবি। তাঁর সিনেমায় জীবন মহাসড়কে চলে না, জীবন অলিগলি দিয়ে একবার সামনে, একবার পেছনে, কখনো আড়াআড়ি হেঁটে পথ হারিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে।

এইট অ্যান্ড হাফ মূলত মেটা সিনেমা। মেটা সিনেমা হল, সিনেমা নিয়ে সিনেমা। এইট অ্যান্ড হাফ এমন এক ডিরেক্টরের গল্প, যে নিজের সিনেমা বানাতে গিয়ে জীবনের সব হিসাব হারিয়ে ফেলেছে। ক্যামেরা, প্রোডিউসার, পুরনো প্রেমিকা, বর্তমান স্ত্রী, ফ্ল্যাশব্যাক, ফ্যান্টাসি—সব মিলিয়ে তার মাথার ভেতর এক বিশাল সার্কাস বসে গেছে, যেখানে তিনিই ক্লাউন, তিনিই রিংমাস্টার।

৮½, ফেদেরিকো ফেল্লিনি, ১৯৬৩। ছবি: আইএমডিবি
৮½, ফেদেরিকো ফেল্লিনি, ১৯৬৩। ছবি: আইএমডিবি

এইট অ্যান্ড হাফ সিনেমা বলে, জীবনে অনেক সময় নিজের সার্কাস নিজের কাঁধে টেনে নিয়ে যেতে হয়। আপনি নিজের চিন্তার বৃত্তেই এতবার ঘোরেন, যেন মাথার মধ্যে নিজস্ব ক্যার্নিভাল চালু হয়ে গেছে। ফেল্লিনি এখানে শুধু একটা সিনেমা বানাননি, বানিয়েছেন এক ধরনের হ্যালুসিনেটরি জার্নাল (বিভ্রমের দিনলিপি)। সিনেমায় গতকাল, আজ, কাল, স্বপ্ন আর বাস্তব একসাথে পিকনিক করছে।

শেষমেশ, এইট অ্যান্ড হাফ আপনাকে এমন একটা জায়গায় দাঁড় করাবে, যেখানে আপনি হয়তো বলতে বাধ্য হবেন: ‘আমার জীবনেও একটা স্ক্রিপ্ট দরকার ছিল।’

দ্য সেভেন্থ সিল | ইঙ্গমার বার্গম্যান | ১৯৫৭

বার্গম্যান আপনাকে দেখাবেন মৃত্যু আর সময়ের সাথে লুকোচুরি খেলা আসলে কেমন হয়। দ্য সেভেন্থ সীল-এ নায়ক সরাসরি মৃত্যুর সাথে দাবা খেলছে। না, মেটাফোর নয়; চোখে চোখ রেখে, সাদা-কালো স্ক্রিনে বাস্তব দাবার বোর্ডে। সিনেমাটা বলে, জীবন আসলে এক দীর্ঘ প্রস্তুতি… মৃত্যুর পরবর্তী চালে পরাস্ত হওয়ার।

সিনেমাটা দেখতে দেখতে হঠাৎ টের পাবেন, ডায়লগগুলো আর পর্দায় আটকে নেই, ওগুলো আপনার মাথায়, ঘাড়ে, বুকের ভেতর খেলছে।

দ্য সেভেন্থ সিল, ইঙ্গমার বার্গম্যান, ১৯৫৭। ছবি: আইএমডিবি
দ্য সেভেন্থ সিল, ইঙ্গমার বার্গম্যান, ১৯৫৭। ছবি: আইএমডিবি

ফেসবুকে একসময় আপনি পোস্ট “ফিলিং লোনলি উইথ ফোরটি সেভেন আদারস’ দিতেন, এই সিনেমা দেখতে দেখতে পোস্ট দেবেন “এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস ইজ রিয়েল”।

তারপর হয়তো গুগলে গিয়ে সার্চ করবেন “এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস সিম্পটম্পস”।

দ্য সেভেন্থ সীল আপনাকে এমন এক অভিজ্ঞতা দেবে যে সিনেমা শেষে রাস্তায় বের হলে আপনি রিকশাওয়ালার চোখে এক ধরনের অস্তিত্ববাদ খুঁজে পাবেন।

ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন | অ্যানিয়েস ভার্দা | ১৯৬২

অ্যানিয়েস ভার্দার সিনেমা আপনাকে বলবে, সিনেমা কেবল গল্প নয়, টানা একটা অনুভূতিও হতে পারে। ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন সিনেমায় সময় কাটার শব্দ শুনতে পাবেন। আর প্রতিটা মিনিট যেন একটা ভিজ্যুয়াল স্পন্দন—জীবনের, নারীত্বের, আতঙ্কের, আর হঠাৎ হঠাৎ কবিতার মতো হালকা বেঁকে যাওয়া মুহূর্তের।

এই সিনেমা আপনাকে বুকের ভেতরে একটা ছোট্ট পাথর বসিয়ে দেবে। না, যন্ত্রণার নয় শুধু একটা চাপা টেনশনের।

ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন দেখতে দেখতে আপনি ভাববেন, ‘আমার জীবনটাও যদি এমনভাবে শুট হত, কত লুকোনো ফ্রেম ধরা পড়ত! আমি যখন চুপ করে বসে থাকি, আসলে তো তখন কত কিছু চলছে।’

ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন, অ্যানিয়েস ভার্দা, ১৯৬২। ছবি: আইএমডিবি
ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন, অ্যানিয়েস ভার্দা, ১৯৬২। ছবি: আইএমডিবি

ভার্দার ক্যামেরা জুম ইন ধীরে ধীরে আপনাকে সিনেমার বাইরে নিজের মনের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি সত্যিই ভালো করে নিজের জীবনটা ‘দেখছেন’? নাকি কেবল পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন?

এই সিনেমা আপনাকে ফিল্ম স্কুলের কেতাবি শিক্ষার বাইরেই শিখিয়ে দেবে, সময়ই আসলে সবচেয়ে বড় চরিত্র। বলবে, ‘সময় চলে না, সময় দেখায়’।

ক্রিস্টোফার নোলানের সকল সিনেমা| ১৯৯৮-২০২৩

বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী মহলের আন-অফিশিয়াল প্রেসিডেন্ট হলেন নোলান। মেমেন্টো সিনেমায় নোলান সময়ের সঙ্গে সাপলুডু খেলেন। সিনেমাটা দেখতে গিয়ে আপনার মনে হবে, আপনার নিজের স্মৃতিই রিভার্সে চলছে।

দুই ম্যাজিশিয়ানের একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার গল্পের সিনেমা দ্য প্রেস্টিজ দেখে আপনি ভাববেন, জীবন বোধহয় সব ‘অ্যাক্ট টু টুইস্ট’- এ প্ল্যান করে রেখেছে।

ইন্টারস্টেলারে সময় পরিভ্রমণ, মহাকাশ, স্পেসশিপ—কঠিন কঠিন শব্দের পাশাপাশি এক বাবা-মেয়ের সম্পর্কের গল্প। আপনার চোখে পানি না আসলেও, মাথায় গিট্টু পাকাবে।

ক্রিস্টোফার নোলানের ফিল্মোগ্রাফি। ছবি: সংগৃহীত
ক্রিস্টোফার নোলানের ফিল্মোগ্রাফি। ছবি: সংগৃহীত

নোলানের সিনেমা দেখে মানুষ নিজের বুদ্ধিমত্তার জন্ম সনদ আবার তুলতে যায়। হঠাৎ করেই ৪-ডাইমেনশন, ওয়ার্মহোল, নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভের বিশেষজ্ঞ হয়ে যায়। নোলানের ফিল্মোগ্রাফি শেষ করা মানে একটা সাংস্কৃতিক রাইট অব প্যাসেজ পার হয়ে যাওয়া। আপনি জটিল ন্যারেটিভ-এর জন্মগত নাগরিক।

এই সিনেমাগুলো দেখা হয়ে গেলে আপনি অফিসিয়ালি ফেসবুকের বায়োতে ‘সিনেফাইল’ লিখে ফেলতে পারেন। এখন আপনি বড় গলায় বলতেই পারেন—’আজ থেইকা আমারে স্যার ডাকবা।’

আপনি এখন থেকে সময় সব সিনেমায় ‘মেটাফোর’ খুঁজতে থাকবেন। কোন দৃশ্যে হয়ত অভিনেতা পান চিবুচ্ছে, আপনি বলবেন, ‘ওটা আসলে পোস্ট-কলোনিয়াল দোটানার রূপক।’

‘ভালো লাগছে’র বদলে আপনি বলা শুরু করবেন ‘ভিজ্যুয়াল পোয়েট্রি।’ কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবেন, ‘এটা জাস্ট ফিল্ম নয়, একটা এক্সপেরিয়েন্স।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত