leadT1ad

যে ৬ অভ্যাসে হতে পারেন দীর্ঘজীবী

দীর্ঘ ও সুস্থজীবন লাভের জন্য কিছু ছোট ছোট অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা, সময়ের অভাব আর কোথা থেকে শুরু করবে—এসব ভেবে অনেকেই হতাশ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘায়ুর জন্য কোনো জটিল নিয়মের দরকার নেই। ছোট ছোট অভ্যাসই সময়ের সঙ্গে বড় ফল দেয়। কী সেই অভ্যাস?

স্ট্রিম ডেস্ক
মানুষের জীবন দীর্ঘ করার জন্য দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রিম গ্রাফিকস

মানুষের জীবন দীর্ঘ করার জন্য দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই অভ্যাসগুলো মানা বা জীবনধারা বদলানো অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। সবাই ব্যস্ত, সময়ের অভাব, আবার কোথা থেকে শুরু করবেন বা কীভাবে করবেন—এসব প্রশ্ন মাথায় আসে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘায়ুর জন্য জটিল কোনো পরিকল্পনা দরকার নেই। ছোট পরিবর্তনও সময়ের সঙ্গে বড় ফল দিতে পারে। বোউন হার্ট ইনস্টিটিউটের ডাক্তার জেফরি বোউন মনে করেন, ছোট ছোট পরিবর্তন ধীরে ধীরে অনেক উপকার দেয়।

স্ট্যানফোর্ড লংজেভিটি সেন্টারের ডাক্তার ডেবরাহ কেডো বলেন, জীবনধারার কোনো একটি দিক নিয়ে বেশি চাপ দেওয়া যেমন অতিরিক্ত কঠোর ডায়েট বা ব্যায়াম, দীর্ঘায়ুর নিশ্চয়তার মানদণ্ড নয়। বরং দৈনন্দিন জীবনে ছোট, সহজ এবং নিয়মিত অভ্যাস বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেলফ’ ম্যাগাজিন ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এমনই ছয়টি অভ্যাসের কথা বলেছে, যেগুলো মেনে চললে জীবন দীর্ঘ হতে পারে।

প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি ও নড়াচড়া করা

প্রতিদিন একটু হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করা খুব উপকারী। ব্যায়াম শুধু হৃদযন্ত্রকেই নয়, মস্তিষ্ককেও সচল করে। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম করলেও গড়ে তিন বছর বেশি আয়ুর সম্ভাবনা তৈরি হয়।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে কাটানো জরুরি নয়, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস রাখা যথেষ্ট। হাঁটার গতি যদি একটু দ্রুত হয়, তাহলে উপকার আরও বেশি। যেমন ১৪ মিনিট ধীরে হাঁটার চেয়ে ৭ মিনিট দ্রুত হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মাঝেমধ্যে সিঁড়ি ব্যবহার করা, অফিস বা বাইরে যাওয়ার পথে একটু দীর্ঘ রাস্তা বেছে নেওয়া—সবই শরীরের জন্য ভালো।

এমনকি দিনে কয়েকবার ১–২ মিনিট জোরে নড়াচড়া করলেও উপকার পাওয়া যায়। গবেষণা বলছে, যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাঁদের মধ্যে দিনে কয়েকবার এমন নড়াচড়া ক্যানসারের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ এবং যেকোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ কমায়।

গড়ে তুলতে হবে কিছু অভ্যাস। ছবি: সংগৃহীত
গড়ে তুলতে হবে কিছু অভ্যাস। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালের নাশতা করা

প্রতিদিন সকালের নাশতা খাওয়া দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নাশতা এড়ালে হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত নাশতা খাওয়া সাধারণ ও হার্ট-সংক্রান্ত মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।

চিকিৎসকরা বলেন, সকালে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবচেয়ে বেশি শক্তি চায়। নাশতা মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডকে দিনের কাজের জন্য জ্বালানি দেয়। এটি মেটাবলিজম সচল রাখে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। নাশতা এড়ালে স্ট্রেস রেসপন্স সক্রিয় হয়, রক্তচাপ বাড়ে এবং পরে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব শরীরের ঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদমকে বিঘ্নিত করতে পারে।

প্রতিদিন সকালের নাশতা খাওয়া দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংগৃহীত ছবি
প্রতিদিন সকালের নাশতা খাওয়া দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংগৃহীত ছবি

রঙিন শাকসবজি ও ফল খাওয়া

খাদ্য তালিকায় আরও বেশি রঙিন সবজি ও ফলমূল দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাদ্য হৃৎপিণ্ডের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দৈনিক ৮০–১০০ গ্রাম সবজি খেলে অল্প বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

সবজি ও ফলমূলের মূল উপকার আসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থেকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমায় এবং ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে। গাঢ় সবুজ শাকে আছে প্রাকৃতিক নাইট্রেট, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এটি রক্তনালিকে শিথিল করে, রক্তসঞ্চালন ভালো করে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ শাক খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে।

প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খাওয়া

নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাসও সুস্থ ও দীর্ঘায়ুর অন্যতম চাবিকাঠি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন বাদাম খান, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বাদাম না খাওয়া মানুষের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। এমনকি দিনে মাত্র এক মুঠো বা প্রায় ২৮ গ্রাম বাদাম খেলেও মৃত্যুর ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে বলে গবেষণায় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদামের এই উপকার মূলত হৃদরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য।

বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় এবং ধমনীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের প্রদাহ কমায়, রক্তনালির কার্যকারিতা ভালো করে এবং হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী রাখে। বাদামে আরো আছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

সব ধরনের বাদামেই উপকার পাওয়া যায়, তবে আখরোট সবচেয়ে কার্যকর বলে ধরা হয়। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ উপকারী।

পর্যাপ্ত ঘুম

ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুম দীর্ঘায়ুর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গভীর ঘুম একজন মানুষের আয়ু দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শোবার ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক হলে ঘুম গভীর হয়। আর তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো শোবার ঘরকে ঘুমানোর উপযোগী রাখা।

রাতের ঘুমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেটা যেন ‘গভীর ঘুম’ বা স্লো-ওয়েভ স্লিপ হয় । যদি ঘরের তাপমাত্রা যদি ঋতু অনুযায়ী কম-বেশি হয়, তবে এই গভীর ঘুম ব্যহত হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, শোবার ঘরের তাপমাত্রা সহনশীল রাখার। যদি কারও পক্ষে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তবে হালকা ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড়ের বিছানা ব্যবহার করা যেতে পারে। চাইলে হালকা পোশাক পরে ঘুমাতে পারেন।

সামাজিক সম্পর্ক জরুরি। ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক সম্পর্ক জরুরি। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান

দীর্ঘায়ুর জন্য যতই নিয়মকানুন মানা হোক, সব কিছুর পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্কও সমানভাবে জরুরি। গবেষণা বলছে, নিয়মিত প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে বা সময় কাটালে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, একাকীত্ব কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, শারীরিক দিক দিয়েও ক্ষতিকর। একাকীত্বে ভোগা মানুষের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি।

বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মনের চাপ কমায়, আনন্দ দেয় এবং মানসিক তীক্ষ্ণতাও বাড়ায়। আড্ডায় আলাপ, পরামর্শ বিনিময়, গল্প-ঠাট্টা বা ছোটখাটো বিতর্ক—সবই মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এমনকি অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সামান্য আলাপচারিতাও শরীর-মনকে সুস্থ রাখে। তাই সামাজিকতাকে অবহেলা না করে, জীবনের অংশ করে নেওয়া দীর্ঘায়ুর জন্য ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয়, যতটা স্বাস্থ্যকর খাবার বা ব্যায়াম।

Ad 300x250

সম্পর্কিত