আজ এস এম সুলতানের জন্মদিন
আজ বাংলাদেশের চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ শেখ মোহাম্মদ সুলতানের (১০ আগস্ট ১৯২৩-১০ অক্টোবর ১৯৯৪) জন্মদিন। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ‘আতরাফ শ্রেণি’ থেকে উঠে এসে নিজের শিল্পকর্ম দিয়ে বিশ্ব জয় করা এই শিল্পী এস এম সুলতান নামে সমধিক পরিচিত।
স্ট্রিম ডেস্ক
চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের আঁকায় মানুষের থেকে বড় কিছু ছিল না। বাংলার সংস্কৃতি বিকাশের যে বিশাল পট, সে পটেই সুলতানের ছবি কথা বলে।
আহমদ ছফা ‘বাংলার চিত্রঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা’ প্রবন্ধে সুলতানের চিত্রকলা নিয়ে লিখেছিলেন, ‘তারপর কোনোরকম ভনিতা না করেই বাংলাদেশের চিত্র-দর্শকদের উদ্দেশ্যে অমোঘ নির্দেশবাণী উচ্চারণ করেছে: আমাদের দেখো।’ এই দেখার ভেতরে যত অদেখাকে তুলে ধরেছেন তিনি, তাতে তাঁকে জাতিস্মর বললেও কিছু কম হবে না। তিনি তাঁর ছবিতে তুলে এনেছেন বাংলার লৌকিকতা, কৃষিজীবনের নিখাদ বাস্তব।
এস এম সুলতানের তুলির আঁচড়ে কেবল ছবি নয়, ফুটে ওঠে দ্রোহের জীবন দর্শন। তাঁর ক্যানভাসজুড়ে যে বিশালকায়, পেশিবহুল কিষান-কিষানীরা ছড়িয়ে থাকেন, তাঁরা কেবল গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ নন। তাঁরা হলেন আবহমান বাংলার প্রতিচ্ছবি। কালে কালে রাজনৈতিক দখলের শিকার অথচ হার না মানা মাটি ও মানুষের আখ্যান। সুলতানের চোখে, এই মাটি ও মানুষেরাই ইতিহাসের প্রকৃত নির্মাতা।
ব্রিটিশ বেনিয়াদের হাতে শোষিত বা পাকিস্তানি শাসকদের বুলেটে বিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছবির মানুষেরা কখনো পরাজিত নন। তাঁদের পেশিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের সঞ্চিত শক্তি, আর চোখে রয়েছে প্রতিবাদের আগুন। সুলতান বিশ্বাস করতেন, যন্ত্র সভ্যতা মানুষকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাই তিনি সচেতনভাবেই শহুরে কোলাহল এড়িয়ে ফিরে গেছেন গ্রামের কাছে। যেখানে লাঙলের ফলায় ফলে ওঠে সোনার ফসল আর কিষানের ঘামে ভেজা শরীরে লেখা হয় সভ্যতার আসল ইতিহাস।
সুলতানের চিত্রকলা বাঙালির আত্মপরিচয়ের আয়না। তিনি তাঁর ছবির মাধ্যমে এক স্বতন্ত্র বাঙালি সত্তার সন্ধান করেছেন। যা প্রাণশক্তিতে ভরপুর। তাঁর ছবির বলিষ্ঠ কৃষকেরা বাংলার উর্বর মাটির মতোই শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়। তাঁর ছবির পেশিবহুল শরীর বাঙালি কৃষকের ক্ষুধার্ত শীর্ণ দেহের বিপরীত। কেননা তিনি আঁকায় দেখান সমষ্টির শক্তি, জীবনের শক্তি। সুলতানের চোখে, এই কৃষকেরাই হলেন সভ্যতার ধারক ও বাহক।
তাঁর বাংলাদেশ আমলের চিত্রকর্মগুলো মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত দলিল। যেমন ‘গণহত্যা ৭১’ চিত্র। এই চিত্রগুলো কেবল যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র নয়। বরং বাঙালির পুনরায় জেগে ওঠার এক মহাকাব্য। সুলতানের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার আত্মপরিচয় খুঁজে পেয়েছিল। তাঁর ছবিতে তাই ধ্বংসের পাশেই সৃষ্টির আবাহন শোনা যায়।
সুলতানের জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার (৯ আগস্ট) শিল্পী মোস্তফা জামান বলেছিলেন, ‘বাংলা ও বাঙালি নিয়ে তার ছবি দেশ কালের গন্ডি পেয়ে সব মানুষের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে। এটাই লৌকিকতা। সুলতান সেই শিল্পী যিনি ল্যান্ডস্কেপে মালিকানার প্রসঙহ এনেছেন এবং দেখাচ্ছেন এই জমি কৃষকের নাই। গ্রাম সংক্রান্ত আহ্লাদ থেকে তিনি দূরে। তাঁর ভিশন ছিল সমাজের চরিত্রগঠনের দিকে। ল্যান্ডস্কেপকে তিনি কৃষকদের মালিকানার অধীনে নিতে চেয়েছেন।’
মূলত সুলতানের ছবিতে গ্রামই হয়ে ওঠে পৃথিবীর কেন্দ্র। ধানখেতের সোনালি ঢেউ, নদীর শান্ত স্রোত, আর কিষাণ-কিষাণীর কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবন, বাংলার কৃষকের স্বপ্ন – সবকিছু মিলিয়েই তিনি আলাদা ভুবন তৈরি করেছেন। এই ভুবন একই সঙ্গে বাস্তব ও পরাবাস্তব, যেখানে মাটির গন্ধ আর মানুষের সংগ্রামী চেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
এস এম সুলতান কেবল একজন চিত্রকর নন, তিনি একজন দ্রষ্টা। তিনি তাঁর তুলির কালিতে এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন এঁকেছেন, যেখানে মানুষ তার শিকড়ের কাছে ফিরে যাবে। আর শ্রম ও শক্তির মহিমায় এক নতুন সমাজ গড়ে উঠবে। তাঁর চিত্রকলা তাই বাঙালি পরিচয়ের এক জীবন্ত ইশতেহার।
চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের আঁকায় মানুষের থেকে বড় কিছু ছিল না। বাংলার সংস্কৃতি বিকাশের যে বিশাল পট, সে পটেই সুলতানের ছবি কথা বলে।
আহমদ ছফা ‘বাংলার চিত্রঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা’ প্রবন্ধে সুলতানের চিত্রকলা নিয়ে লিখেছিলেন, ‘তারপর কোনোরকম ভনিতা না করেই বাংলাদেশের চিত্র-দর্শকদের উদ্দেশ্যে অমোঘ নির্দেশবাণী উচ্চারণ করেছে: আমাদের দেখো।’ এই দেখার ভেতরে যত অদেখাকে তুলে ধরেছেন তিনি, তাতে তাঁকে জাতিস্মর বললেও কিছু কম হবে না। তিনি তাঁর ছবিতে তুলে এনেছেন বাংলার লৌকিকতা, কৃষিজীবনের নিখাদ বাস্তব।
এস এম সুলতানের তুলির আঁচড়ে কেবল ছবি নয়, ফুটে ওঠে দ্রোহের জীবন দর্শন। তাঁর ক্যানভাসজুড়ে যে বিশালকায়, পেশিবহুল কিষান-কিষানীরা ছড়িয়ে থাকেন, তাঁরা কেবল গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ নন। তাঁরা হলেন আবহমান বাংলার প্রতিচ্ছবি। কালে কালে রাজনৈতিক দখলের শিকার অথচ হার না মানা মাটি ও মানুষের আখ্যান। সুলতানের চোখে, এই মাটি ও মানুষেরাই ইতিহাসের প্রকৃত নির্মাতা।
ব্রিটিশ বেনিয়াদের হাতে শোষিত বা পাকিস্তানি শাসকদের বুলেটে বিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছবির মানুষেরা কখনো পরাজিত নন। তাঁদের পেশিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের সঞ্চিত শক্তি, আর চোখে রয়েছে প্রতিবাদের আগুন। সুলতান বিশ্বাস করতেন, যন্ত্র সভ্যতা মানুষকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাই তিনি সচেতনভাবেই শহুরে কোলাহল এড়িয়ে ফিরে গেছেন গ্রামের কাছে। যেখানে লাঙলের ফলায় ফলে ওঠে সোনার ফসল আর কিষানের ঘামে ভেজা শরীরে লেখা হয় সভ্যতার আসল ইতিহাস।
সুলতানের চিত্রকলা বাঙালির আত্মপরিচয়ের আয়না। তিনি তাঁর ছবির মাধ্যমে এক স্বতন্ত্র বাঙালি সত্তার সন্ধান করেছেন। যা প্রাণশক্তিতে ভরপুর। তাঁর ছবির বলিষ্ঠ কৃষকেরা বাংলার উর্বর মাটির মতোই শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়। তাঁর ছবির পেশিবহুল শরীর বাঙালি কৃষকের ক্ষুধার্ত শীর্ণ দেহের বিপরীত। কেননা তিনি আঁকায় দেখান সমষ্টির শক্তি, জীবনের শক্তি। সুলতানের চোখে, এই কৃষকেরাই হলেন সভ্যতার ধারক ও বাহক।
তাঁর বাংলাদেশ আমলের চিত্রকর্মগুলো মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত দলিল। যেমন ‘গণহত্যা ৭১’ চিত্র। এই চিত্রগুলো কেবল যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র নয়। বরং বাঙালির পুনরায় জেগে ওঠার এক মহাকাব্য। সুলতানের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার আত্মপরিচয় খুঁজে পেয়েছিল। তাঁর ছবিতে তাই ধ্বংসের পাশেই সৃষ্টির আবাহন শোনা যায়।
সুলতানের জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার (৯ আগস্ট) শিল্পী মোস্তফা জামান বলেছিলেন, ‘বাংলা ও বাঙালি নিয়ে তার ছবি দেশ কালের গন্ডি পেয়ে সব মানুষের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে। এটাই লৌকিকতা। সুলতান সেই শিল্পী যিনি ল্যান্ডস্কেপে মালিকানার প্রসঙহ এনেছেন এবং দেখাচ্ছেন এই জমি কৃষকের নাই। গ্রাম সংক্রান্ত আহ্লাদ থেকে তিনি দূরে। তাঁর ভিশন ছিল সমাজের চরিত্রগঠনের দিকে। ল্যান্ডস্কেপকে তিনি কৃষকদের মালিকানার অধীনে নিতে চেয়েছেন।’
মূলত সুলতানের ছবিতে গ্রামই হয়ে ওঠে পৃথিবীর কেন্দ্র। ধানখেতের সোনালি ঢেউ, নদীর শান্ত স্রোত, আর কিষাণ-কিষাণীর কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবন, বাংলার কৃষকের স্বপ্ন – সবকিছু মিলিয়েই তিনি আলাদা ভুবন তৈরি করেছেন। এই ভুবন একই সঙ্গে বাস্তব ও পরাবাস্তব, যেখানে মাটির গন্ধ আর মানুষের সংগ্রামী চেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
এস এম সুলতান কেবল একজন চিত্রকর নন, তিনি একজন দ্রষ্টা। তিনি তাঁর তুলির কালিতে এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন এঁকেছেন, যেখানে মানুষ তার শিকড়ের কাছে ফিরে যাবে। আর শ্রম ও শক্তির মহিমায় এক নতুন সমাজ গড়ে উঠবে। তাঁর চিত্রকলা তাই বাঙালি পরিচয়ের এক জীবন্ত ইশতেহার।
খাইরুল বাসারের গান ইউটিউবে শুনতে গিয়ে কমেন্টবক্সে চোখ পড়ল। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘খাইরুল বাসারের গানে আলাদা একটা পিনিক আছে।’ এই ‘পিনিক’ আসলে 'ক্যাচি' আর লিরিকে-টিউনে রেপিটেটিভ ফর্মের কারণে হুকলাইন মুখস্ত হয়ে যাওয়া। আর সঙ্গে বাংলা ঢোলের মাথাদোলানো সাউন্ডস্কেপ।
৩ ঘণ্টা আগে‘ঘরে না থাকলে লাইট-ফ্যান বন্ধ রাখুন’—মোটামুটি সকলেই এ বাক্যটির সঙ্গে পরিচিত। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে টিভি, রেডিও, পত্রিকা- কোথায় ছিল না এই বিজ্ঞাপন?
৩ ঘণ্টা আগেবাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় ও আধুনিকতার এক উজ্জ্বল ভাষ্যকার রশীদ করীম। উপন্যাসের আখ্যানে ধারণ করেছেন বাংলা অঞ্চলের মানুষের নৈমিত্তিক ছবি-ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বাসনার রূপকল্প।
৬ ঘণ্টা আগেদুটি হাতের মধ্যে আমরা ডানহাতকেই বেশি এগিয়ে রাখি তাই না! ডান হাতই যেন সঠিক। বাম হাত দিয়ে কাউকে কোনো কিছু দিলেই তো মা দিতো বকা! তবে কেউ কেউ আমাদের আশপাশে ছিল যাঁরা বাম হাতে লিখতেন বা কাজ করতেন।
১ দিন আগে