হুমায়ূন শফিক
কিছুদিন আগেই দুজনে প্রেম করে বিয়ে করেছে। মেয়েটির জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি ছেলেটি। সুখেই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু এরপর দুজনেই নিখোঁজ।
গত ২৮ জুলাই করাচির সানডে বাজারে চায়না বন্দরের পাশে দুটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ পরে নিশ্চিত করে এই দুজনের নাম সানাহ আসিফ ও সাজিদ মসিহ। দুজনকেই খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের ভাষ্যে ঘটনাটি ‘অনার কিলিং’। দ্য হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তানের তথ্যমতে, এমন অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে ২২৬টি ও গত বছর ৪০৫টি অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
‘পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে’ হত্যাকাণ্ডই ‘অনার কিলিং’। কেউ যদি তার পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে বিয়ে করে, নিম্নবর্ণ বা নিম্ন মর্যাদার কাউকে বিয়ে করা, বিবাহ-পূর্ব সম্পর্ক, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ পোষণ করা, সামাজিক বা গোত্রীয় বিধি-নিষেধ অবজ্ঞা করা, এমনকি কোনো নারী (বিবাহিত অথবা অবিবাহিত) কিডন্যাপ বা ধর্ষণের শিকার হলেও তাদেরকে পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে পারেনি।
যারা পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে পারে না, তাদের বেঁচে থাকারও অধিকার নেই—কথাটি বলেন পাকিস্তানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অনার কিলিংকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে—‘পরিবারের জন্য অসম্মানজনক সন্দেহে পুরুষসদস্য কর্তৃক অপরাধী নারীসদস্যকে হত্যা বা তার প্রতি সহিংস আচরণের নাম অনার কিলিং। বিভিন্ন কারণে নারীসদস্যটি এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারে, যার মধ্যে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জানানো থেকে শুরু করে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনও কারণ হতে পারে। মোটা দাগে বলা হয়, নারী যখন নিজের জীবনের লাগাম নিজের হাতে তুলে নিতে চায় তখনই গোটা সম্প্রদায় তার বিরুদ্ধে চলে যায়। আর সেই নারীকে চরম শিক্ষা দিয়ে বাকি মেয়েদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পরিবার তুলে নেয় তার প্রাণনিধনের দায়িত্ব।’
মার্কিন শিক্ষাবিদ ম্যাথিউ এ. গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘দ্য বায়োলজিক্যাল রুটস অব হিট অব প্যাশন ক্রাইমস অ্যান্ড অনার কিলিংস’ গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, প্রাচীন রোমে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করা হতো, যেখানে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা যারা তাদের পরিবারের নারী ব্যভিচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি, তাদের ‘নির্যাতন করা হতো’।
ইতিহাসজুড়ে অনেক অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার উৎপত্তি এবং নারীদের নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ পাওয়া যায়। রোমান আইন ‘পিটার ফ্যামিলিয়াস’ পরিবারের পুরুষদের তাদের সন্তান ও স্ত্রী উভয়ের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়েছিল। এই আইনের অধীনে, সন্তান ও স্ত্রীদের জীবন তাদের পরিবারের পুরুষদের বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল ছিল ।
প্রাচীন রোমান আইনও সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকে ন্যায্যতা দিত এই বলে যে, ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের তাদের স্বামীরা হত্যা করতে পারতেন। চীনে কিং রাজবংশের সময়ে পিতা ও স্বামীদের অধিকার ছিল এমন কন্যাদের হত্যা করার, যারা পরিবারের অসম্মান করেছে বলে মনে করা হতো।
আদিবাসী অ্যাজটেক ও ইনকাদের মধ্যে ব্যভিচারের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। জেনেভার জন ক্যালভিনের শাসনামলে ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের রোন নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হতো।
ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। অনার রিলেটেড ভায়োলেন্স—ইউরোপীয় রিসোর্স বুক অ্যান্ড গুড প্র্যাকটিস অনুসারে—‘ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সম্মান হলো আচরণবিধি, জীবনযাত্রার একটি পদ্ধতি এবং সামাজিক শৃঙ্খলার একটি আদর্শ। এটি অনেক মানুষের জীবন, রীতিনীতি এবং মূল্যবোধকে সংজ্ঞায়িত করে।’
পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন—
১. পাকিস্তান: প্রতিবছর আনুমানিক ৫০০ থেকে ১০০০ অনার কিলিং ঘটে পাকিস্তানে। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
২. ভারত: বিশেষ করে উত্তর ভারত (হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ)-এ অনার কিলিংয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আন্তঃজাতি বা আন্তঃধর্ম বিয়ে— এর মূল কারণ।
৩. বাংলাদেশ: তুলনামূলক কম হলেও অনার কিলিং গোপনে বাংলাদেশেও ঘটে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা ২০২০ সালে ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারে লিখেছিলেন, ‘সাতক্ষীরার গৃহস্থ পরিবারের একটি মেয়ে একজন দলিত ছেলেকে বিয়ে করায় মেয়েটির পরিবার মনে করে এতে তাদের সম্মান নষ্ট হয়েছে। তারা ছেলেটিকে মারধর করে জোর করে তালাক আদায় করে এবং ছেলেটিকে হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারশুদ্ধ গ্রামছাড়া করে। ভারতে তো এরকম একটি অসম বিয়ের জের ধরে ছেলেটিকে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে।’
৪. ইরান: নারীর ‘নৈতিকতা’ ও ‘পরিবারের সম্মান’ রক্ষার নামে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। অনেক সময় বাবা বা ভাই খুন করেও আইনি ছাড় পেয়ে যান। কারণ তারা ‘রক্তের অভিভাবক’।
৫. জর্ডান: এই দেশের সরকার অনার কিলিং বন্ধের চেষ্টা করলেও আদালত অনেক ক্ষেত্রে খুনিদের হালকা শাস্তি দেয়। নারীর পোশাক, সম্পর্ক বা বিয়ের স্বাধীনতা এখানে ‘সম্মান ক্ষুণ্ন’ করার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
৬. তুরস্ক: আধুনিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে কিছু রক্ষণশীল এলাকায় অনার কিলিং এখনো ঘটে। অনেক সময় নারীদের আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়-যা ‘অনার সুইসাইড’ নামে পরিচিত।
৭. আফগানিস্তান: তালেবান ও কট্টর ইসলামপন্থীদের শাসনে নারীদের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়। দেশটিতে পরিবারের বাইরে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলেও অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন আফগান নারীরা।
৮. ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশসমূহ: ব্রিটেন, জার্মানি, সুইডেন, কানাডা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে অনার কিলিং ঘটে।
কীভাবে বন্ধ হতে পারে ‘অনার কিলিং’
দ্য ডাইনামিকস অব অনার কিলিংস ইন তুর্কি বইয়ে কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। যেগুলো মেনে চললে ‘অনার কিলিং’ বন্ধ হতে পারে।
১. আইনের কঠোর প্রয়োগ: খুনিদের যাতে কঠোর শাস্তি হয়। তাদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকে বের হতে হবে।
২. নারীর ক্ষমতায়ন: শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
৩. পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন: নারীকে শুধু রান্নাঘরেই মানায়—এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৪. স্থানীয় নেতৃত্ব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ত করা: তাঁরা যেন অনার কিলিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
৫. গোপন সমর্থন ভেঙে ফেলা: পরিবার ও সমাজের নীরব সমর্থনকে ভাঙতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনতে হবে।
শুধু আইন নয়, সমাজ, সংস্কৃতি ও মানসিকতায় রূপান্তর আনলেই অনার কিলিং বন্ধ হতে পারে।
তথ্যসূত্র: হিস্টোরিক্যাল ওভারভিউ আর্কাইভ, বিবিসি ও আল জাজিরা
কিছুদিন আগেই দুজনে প্রেম করে বিয়ে করেছে। মেয়েটির জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি ছেলেটি। সুখেই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু এরপর দুজনেই নিখোঁজ।
গত ২৮ জুলাই করাচির সানডে বাজারে চায়না বন্দরের পাশে দুটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ পরে নিশ্চিত করে এই দুজনের নাম সানাহ আসিফ ও সাজিদ মসিহ। দুজনকেই খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের ভাষ্যে ঘটনাটি ‘অনার কিলিং’। দ্য হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তানের তথ্যমতে, এমন অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে ২২৬টি ও গত বছর ৪০৫টি অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
‘পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে’ হত্যাকাণ্ডই ‘অনার কিলিং’। কেউ যদি তার পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে বিয়ে করে, নিম্নবর্ণ বা নিম্ন মর্যাদার কাউকে বিয়ে করা, বিবাহ-পূর্ব সম্পর্ক, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ পোষণ করা, সামাজিক বা গোত্রীয় বিধি-নিষেধ অবজ্ঞা করা, এমনকি কোনো নারী (বিবাহিত অথবা অবিবাহিত) কিডন্যাপ বা ধর্ষণের শিকার হলেও তাদেরকে পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে পারেনি।
যারা পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে পারে না, তাদের বেঁচে থাকারও অধিকার নেই—কথাটি বলেন পাকিস্তানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অনার কিলিংকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে—‘পরিবারের জন্য অসম্মানজনক সন্দেহে পুরুষসদস্য কর্তৃক অপরাধী নারীসদস্যকে হত্যা বা তার প্রতি সহিংস আচরণের নাম অনার কিলিং। বিভিন্ন কারণে নারীসদস্যটি এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারে, যার মধ্যে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জানানো থেকে শুরু করে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনও কারণ হতে পারে। মোটা দাগে বলা হয়, নারী যখন নিজের জীবনের লাগাম নিজের হাতে তুলে নিতে চায় তখনই গোটা সম্প্রদায় তার বিরুদ্ধে চলে যায়। আর সেই নারীকে চরম শিক্ষা দিয়ে বাকি মেয়েদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পরিবার তুলে নেয় তার প্রাণনিধনের দায়িত্ব।’
মার্কিন শিক্ষাবিদ ম্যাথিউ এ. গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘দ্য বায়োলজিক্যাল রুটস অব হিট অব প্যাশন ক্রাইমস অ্যান্ড অনার কিলিংস’ গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, প্রাচীন রোমে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করা হতো, যেখানে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা যারা তাদের পরিবারের নারী ব্যভিচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি, তাদের ‘নির্যাতন করা হতো’।
ইতিহাসজুড়ে অনেক অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার উৎপত্তি এবং নারীদের নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ পাওয়া যায়। রোমান আইন ‘পিটার ফ্যামিলিয়াস’ পরিবারের পুরুষদের তাদের সন্তান ও স্ত্রী উভয়ের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়েছিল। এই আইনের অধীনে, সন্তান ও স্ত্রীদের জীবন তাদের পরিবারের পুরুষদের বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল ছিল ।
প্রাচীন রোমান আইনও সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকে ন্যায্যতা দিত এই বলে যে, ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের তাদের স্বামীরা হত্যা করতে পারতেন। চীনে কিং রাজবংশের সময়ে পিতা ও স্বামীদের অধিকার ছিল এমন কন্যাদের হত্যা করার, যারা পরিবারের অসম্মান করেছে বলে মনে করা হতো।
আদিবাসী অ্যাজটেক ও ইনকাদের মধ্যে ব্যভিচারের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। জেনেভার জন ক্যালভিনের শাসনামলে ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের রোন নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হতো।
ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। অনার রিলেটেড ভায়োলেন্স—ইউরোপীয় রিসোর্স বুক অ্যান্ড গুড প্র্যাকটিস অনুসারে—‘ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সম্মান হলো আচরণবিধি, জীবনযাত্রার একটি পদ্ধতি এবং সামাজিক শৃঙ্খলার একটি আদর্শ। এটি অনেক মানুষের জীবন, রীতিনীতি এবং মূল্যবোধকে সংজ্ঞায়িত করে।’
পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন—
১. পাকিস্তান: প্রতিবছর আনুমানিক ৫০০ থেকে ১০০০ অনার কিলিং ঘটে পাকিস্তানে। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
২. ভারত: বিশেষ করে উত্তর ভারত (হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ)-এ অনার কিলিংয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আন্তঃজাতি বা আন্তঃধর্ম বিয়ে— এর মূল কারণ।
৩. বাংলাদেশ: তুলনামূলক কম হলেও অনার কিলিং গোপনে বাংলাদেশেও ঘটে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা ২০২০ সালে ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারে লিখেছিলেন, ‘সাতক্ষীরার গৃহস্থ পরিবারের একটি মেয়ে একজন দলিত ছেলেকে বিয়ে করায় মেয়েটির পরিবার মনে করে এতে তাদের সম্মান নষ্ট হয়েছে। তারা ছেলেটিকে মারধর করে জোর করে তালাক আদায় করে এবং ছেলেটিকে হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারশুদ্ধ গ্রামছাড়া করে। ভারতে তো এরকম একটি অসম বিয়ের জের ধরে ছেলেটিকে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে।’
৪. ইরান: নারীর ‘নৈতিকতা’ ও ‘পরিবারের সম্মান’ রক্ষার নামে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। অনেক সময় বাবা বা ভাই খুন করেও আইনি ছাড় পেয়ে যান। কারণ তারা ‘রক্তের অভিভাবক’।
৫. জর্ডান: এই দেশের সরকার অনার কিলিং বন্ধের চেষ্টা করলেও আদালত অনেক ক্ষেত্রে খুনিদের হালকা শাস্তি দেয়। নারীর পোশাক, সম্পর্ক বা বিয়ের স্বাধীনতা এখানে ‘সম্মান ক্ষুণ্ন’ করার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
৬. তুরস্ক: আধুনিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে কিছু রক্ষণশীল এলাকায় অনার কিলিং এখনো ঘটে। অনেক সময় নারীদের আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়-যা ‘অনার সুইসাইড’ নামে পরিচিত।
৭. আফগানিস্তান: তালেবান ও কট্টর ইসলামপন্থীদের শাসনে নারীদের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়। দেশটিতে পরিবারের বাইরে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলেও অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন আফগান নারীরা।
৮. ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশসমূহ: ব্রিটেন, জার্মানি, সুইডেন, কানাডা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে অনার কিলিং ঘটে।
কীভাবে বন্ধ হতে পারে ‘অনার কিলিং’
দ্য ডাইনামিকস অব অনার কিলিংস ইন তুর্কি বইয়ে কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। যেগুলো মেনে চললে ‘অনার কিলিং’ বন্ধ হতে পারে।
১. আইনের কঠোর প্রয়োগ: খুনিদের যাতে কঠোর শাস্তি হয়। তাদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকে বের হতে হবে।
২. নারীর ক্ষমতায়ন: শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
৩. পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন: নারীকে শুধু রান্নাঘরেই মানায়—এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৪. স্থানীয় নেতৃত্ব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ত করা: তাঁরা যেন অনার কিলিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
৫. গোপন সমর্থন ভেঙে ফেলা: পরিবার ও সমাজের নীরব সমর্থনকে ভাঙতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনতে হবে।
শুধু আইন নয়, সমাজ, সংস্কৃতি ও মানসিকতায় রূপান্তর আনলেই অনার কিলিং বন্ধ হতে পারে।
তথ্যসূত্র: হিস্টোরিক্যাল ওভারভিউ আর্কাইভ, বিবিসি ও আল জাজিরা
ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে বসবে পরাশক্তি দুই দেশ। কিন্তু স্থান হিসেবে ট্রাম্প কেন আলাস্কাকেই বেছে নিলেন?
৬ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়ায় যান। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সফরের মূল লক্ষ্য অভিবাসন সহজ করা এবং বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
১ দিন আগেগত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিল।
১ দিন আগেভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন প্রভাবশালী এক চরিত্র। বাবা জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ‘প্রিয়দর্শিনী’ ইন্দিরা। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য থেকে রাজনীতির জীবন শুরু করে টানা ১১ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২ দিন আগে