leadT1ad

সাদা পাথরবাহী ১৩০ ট্রাক জব্দ, আগের অবস্থায় ফেরানো শুরু

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সাদা পাথরবাহী ১৩০টিরও বেশি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২৭
বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। স্ট্রিম ছবি

সিলেটের বিখ্যাত পর্যটন এলাকা ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথরবাহী ১৩০টিরও বেশি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার রাতেই সাড়ে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থানে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সাদাপাথরবাহী আরও ১৩০টিরও বেশি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই পাথরগুলোও আগের জায়গায় বিছিয়ে রাখা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব মুরাদ বলেন, “আমরা আশা করছি যেই পাথরগুলো চুরি হয়েছে, সেগুলো আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারবো। এটা একটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা সেজন্য প্রস্তুতি নিয়েছি এবং সেটা সম্পন্ন করবো।”

তিনি বলেন, একইসাথে এখানে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, এমন ক্ষতি যাতে আর কেউ করতে না পারে, সেজন্য যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার সহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে।

“এ কাজের সঙ্গে যেসব জলযান ও পরিবহন জড়িত ছিল, তাদেরকে আমরা অনুরোধ করেছি তারা যাতে আর এর সঙ্গে না জড়ায়। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিবো, তারপরও যদি তারা এ কাজ অব্যাহত রাখেন, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।”

পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “এখানে অনেক পর্যটক আসছেন এবং তারা নির্বিঘ্নে এখানে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করছেন। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, আপনারা এখানে আসুন, এখানে যে অবস্থা রয়েছে, সেটা পর্যটনবান্ধবই রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দায়িত্বশীলভাবেই আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় কেউ অবৈধভাবে কাজ করে যাচ্ছে, সেটা অনেকক্ষেত্রে রোধ করতে পারি, অনেকক্ষেত্রে পারা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ৫ আগস্টের পর যে লুটপাট হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধে কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। এতদিন বিষয়টি সীমিত মাত্রায় ছিল, কিন্তু এবার তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।”

বৃহস্পতিবার ভোরে বালু-পাথর চুরির একটি মামলায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার থেকে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পৃথক দুটি তল্লাশিচৌকি স্থাপন করে পাথর তোলা বন্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু হয়েছে।

‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের জায়গায় রাখা সহ লুটপাট ঠেকাতে বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন ৫ সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর রাকত ১০টা থেকে শুরু হয় পাথর উদ্ধার অভিযান।

সিদ্ধান্তগুলো হলো— জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘন্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে; গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে যৌথ বাহিনীসহ পুলিশের চেকপোস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে; অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ পাথর ভাঙা বন্ধ করার জন্য অভিযান চলমান থাকবে; পাথর চুরির সাথে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে; চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে হবে।

এরপর গতকাল রাতেই সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সিলেট ক্লাবের সামনে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। অভিযানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা আছেন। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রাক আটক করা হয়। এসব ট্রাক পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। আজ সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাথরবোঝাই ১৩০টি ট্রাকের পাথর জব্দ করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর সিলেট জেলার ৮টি পাথরকোয়ারি ও কোয়ারিবহির্ভূত ১০টি এলাকা থেকে পাথর লুটপাট শুরু হয়। বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা, ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি ও সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা এবং গোয়াইনঘাটের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং ও পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দি থেকে গণহারে পাথর লুট হয়।

সম্প্রতি দেশ-বিদেশে সুপরিচিত পর্যটন গন্তব্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরের অন্তত ৮০ শতাংশ পাথর লুট হয়ে যাওয়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এরপরই প্রশাসনের টনক নড়ে এবং লুট হওয়া পাথর জব্দে ও লুটপাট ঠেকাতে তৎপর হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত