leadT1ad

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জাতীয় নির্বাচন /প্রত্যাশার ঘোষণা ‘অপ্রত্যাশিতও’ বটে

মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফর দুটি কারণে গুরুত্ব পেয়েছে। যার একটি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক, আরেকটি হলো— মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাড়া না দেওয়া।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ২১: ০০
লন্ডনে বৈঠকের পর এগোচ্ছে জাতীয় নির্বাচন।স্ট্রিম গ্রাফিক্স

ঈদুল আজহার ঠিক আগের দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নাখোশ হয়েছিল। তারা শুরু থেকেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর এমন প্রতিক্রিয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, ঐকমত্য ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান ও প্রস্তুতি কীভাবে এগোবে?

এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে যান। সেখানে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাত হবে বলেও নিশ্চিত হয়। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে অনুষ্ঠিত তাদের বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উত্তেজনা বেশ কমেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফর দুটি কারণে গুরুত্ব পেয়েছে। যার একটি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক, আরেকটি হলো— মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাড়া না দেওয়া। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও দেশীয় সংবাদমাধ্যম তো বটেই, বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত যুক্তরাজ্যে কিয়ার স্টারমারের দল লেবার পার্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার হুমকি তৈরি করেছে। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জেরে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়েন টিউলিপ সিদ্দিক। স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত টিউলিপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সম্পদ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ভাগনি।

অন্যদিকে, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির দুই মেরুতে অবস্থানকে তুলে ধরে খবর করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। এরমধ্যে প্রফেসর ইউনূসের লন্ডন সফর নিয়ে দ্য হিন্দু গত বুধবার লিখেছিল, ‘তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি বাংলাদেশের সকল অংশীজন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ, ইউনূস প্রশাসন ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির (এনসিপি) পক্ষে বলে মনে হচ্ছে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিতর্ক দেখা গেছে।

শুক্রবার বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে হওয়া বৈঠকে তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থে কথা বলা হয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তারা করেছে; তাদের সন্দেহ ছিল এটি ছাড়া নির্বাচন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারপ্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস ঠিক করবেন কবে নির্বাচন হবে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা বলেছিলেন। তবে তাতেও তিনি অনঢ় থাকতে পারলেন না। তারেক রহমান ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি করেছেন। এখন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হিসেবে দিনক্ষণ স্বীকৃত হলো।’

তিনি এ-ও বলেন, ‘বৈঠক শেষে কিন্তু নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বিচারকাজ ও সংস্কারে অগ্রগতি হলে রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, আজকে ঢিলেঢালা ঐকমত্য হয়েছে, এটি চূড়ান্ত না। সব সমাধান হয়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে এটা গুড স্টার্ট। অস্থিরতা কমেছে। নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটা ইতিবাচক হয়েছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচনের দাবি ও সরকারের বক্তব্যের মধ্যে একটি ছোট অংশ বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরুর অপচেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া। আজকে বড় দুটি পক্ষ— অন্তর্বর্তী সরকার ও বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ফলে, বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া সফল হবে না বলে মনে করছি। যারা বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তারা আপামরকে প্রতিনিধিত্ব করে না। আজকের বৈঠকে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েঠে বলে মনে করি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত