leadT1ad

জামায়াতের আয় বিএনপির দ্বিগুণ, ব্যয় পাঁচগুণ

মো. ইসতিয়াকঢাকা
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩৮
জামায়াতের আয় বিএনপির দ্বিগুণ, ব্যয় পাঁচগুণ। স্ট্রিম গ্রাফিক

আয়ের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ২০২৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। সেই হিসাব পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জামায়াতের এই আয় বিএনপির তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। ব্যয়ের দিক থেকে বেশি পাঁচগুণ।

জামায়াতের ২০২৪ সালে মোট আয় ছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা এবং মোট ব্যয় ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা। সেই বছরের প্রারম্ভিক স্থিতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০১ টাকা। আয়-ব্যয়ের বিবরণীতে দলটি বলেছে, তাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আগে ২০১৩ সালে সর্বশেষ আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছিল জামায়াত। এরপর চলতি বছর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এক যুগ পর গত ২৯ জুলাই আবার হিসাব দিয়েছে দলটি।

জামায়াতের আয়-ব্যয়ের উৎস

জামায়াতে আয়-ব্যয়ের বিবরণীতে দেখা যায়, আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে কর্মী ও সদস্যদের মাসিক চাঁদা থেকে। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ১৬২ টাকা। সেই অনুযায়ী, দলটির অর্থনৈতিক শক্তির একটি বড় অংশ সরাসরি সদস্যদের চাঁদা থেকে আসে।

এছাড়া, কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের চাঁদা থেকে আয় হয়েছে ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৪৯ টাকা। দলের আয় উৎসের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে অনুদান। এর পরিমাণ ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ টাকা। এছাড়া দলের পত্রিকা, সাময়িকী ও বইপুস্তক বিক্রির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ২৯০ টাকা এবং অন্যান্য চাঁদা থেকে এসেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ টাকা।

জামায়াতের আয়-ব্যয়ের উৎস। স্ট্রিম গ্রাফিক
জামায়াতের আয়-ব্যয়ের উৎস। স্ট্রিম গ্রাফিক

ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর্মীদের বেতন, ভাতা ও বোনাসে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৩ টাকা ব্যয় করেছে দলটি। এরপর বেশি ব্যয় হয়েছে দেশজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায়—১১ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ টাকা।

প্রচারণা ও পরিবহনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ টাকা। আবাসন ও প্রশাসনিক খাতে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা।

এর বাইরে দলের ব্যয়ের আরও কিছু খাত—যেমন বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাস বিল, ডাক, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস এবং পত্রিকায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় হয়েছে। এছাড়া আপ্যায়ন, ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠান, দলীয় সভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায়ও কিছু অর্থ ব্যয় হয়েছে।

বিএনপির আয়-ব্যয়

এর আগে ২৭ জুলাই আয়–ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট আয় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। একই সময়ে দলটির ব্যয় ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২৩ টাকা। উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা। এই অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে।

আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আয় এবং ব্যয়—দুটোই বেড়েছে।

২০২৪ সালে আয়ের উৎস হিসেবে দলটি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মাসিক চাঁদা, বইপুস্তক বিক্রয়, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের অনুদান, ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদ ইত্যাদি দেখিয়েছে।

একই বছর বিভিন্ন ব্যক্তিকে আর্থিক অনুদান, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, পোস্টার-লিফলেট ছাপানো, বিভিন্ন সভার হল ভাড়া, দাপ্তরিক ক্রোড়পত্র ছাপানো, রমজানে ইফতার মাহফিল ও অফিশিয়াল বিভিন্ন খরচকে ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছে দলটি।

অন্য দলগুলোর আয়-ব্যয়

জাতীয় পার্টি (জাপা) গত ৩১ জুলাই ২০২৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা রয়েছে দিয়েছে। দলটি আয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। ব্যয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা।

মনোনয়ন ফরম বিক্রি, সদস্যের ফি, প্রকাশনা বিক্রি ইত্যাদি থেকে দলটি আয় করে বলে জানিয়েছে দলটি। অন্যদিকে প্রচার কার্যক্রম, অফিস কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদিতে ব্যয়ের তথ্য দিয়েছে।

অন্য দলগুলোর আয়-ব্যয়। স্ট্রিম গ্রাফিক
অন্য দলগুলোর আয়-ব্যয়। স্ট্রিম গ্রাফিক

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৪ টাকা। ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ২৩১ টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১১৩ টাকা।

গণঅধিকার পরিষদ আয় দেখিয়েছে ৪৬ লাখ ৪ হাজার ৩০০ টাকা, ব্যয় ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮ টাকা।

সময় চেয়েছে কয়েকটি দল

নির্বাচন কমিশন জানায়, বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি। তবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ইসি ৫০টি দলকে হিসাব জমা দেওয়ার নোটিশ পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে ২৮টি দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হিসাব জমা দিয়েছে।

১০টি দল ইসিতে হিসাব জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে। দলগুলো হলো— বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।

ইসির আহ্বানে সাড়া দেয়নি কয়েটি দল

১১টি দল নিবন্ধিত দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো সাড়া দেয়নি। দলগুলো হলো—কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূলক বিএনপি, বাংলাদেশ জাসদ ও গণসংহতি আন্দোলন।

এছাড়া, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পেয়েছে। তাই তাদের জন্য ওই বছরের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিধান প্রযোজ্য নেই বলে কমিশন ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখেছে।

আইনি বাধ্যবাধকতা ও প্রেক্ষাপট

২০০৮ সালের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, কোনো দল পরপর তিনবার আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। জামায়াত নিবন্ধন হারানোর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছিল। এ বছর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পরই আবার হিসাব দিল। অপরদিকে, নিবন্ধন স্থগিত থাকায় প্রথমবারের মতো আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়নি আওয়ামী লীগকে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত