leadT1ad

জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘ইতিহাসের অবহেলা’র অভিযোগ, সংশোধনের দাবি

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৬
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতারা। স্ট্রিম ছবি

গত ৫ আগস্ট ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা উঠেছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে। সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’, ‘হেফাজতে ইসলাম’, ২০১৮ সালের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ও ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’-এর নেতারা। এ ছাড়া সম্মেলনে অংশ নিয়ে আরেক সংগঠন বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, ঘোষণাপত্রে দেশের সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত না করায় এটি অসম্পূর্ণ এবং জনমতের সঙ্গে খাপ খায় না।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, যদিও জুলাই ঘোষণাপত্র দেশনির্মাণ ও গণ-সংগ্রামের একটি দলিল, তবুও এতে জাতির স্মৃতি ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থীভাবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও মানবিক বিপর্যয়, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড (যা তারা পরিকল্পিত গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন), ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে রাষ্ট্রীয় নৃশংস অভিযান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায়বিচার দাবি ও নিপীড়ন এবং একই বছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তরুণ ও কিশোর আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি দমন-পীড়নকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ঘোষণাপত্র অতীত সংগ্রাম ও শহীদদের স্মৃতিচারণ করলেও এই গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ঐতিহাসিক অধ্যায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এতে ভবিষ্যতের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ, নির্বাচনের সময়সূচি, প্রশাসনিক সংস্কার, আইন-সাংবিধানিক প্রস্তাব কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও জবাবদিহিতার উল্লেখ নেই।

বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা ইতিহাস বিকৃত হতে দেব না। আমাদের লক্ষ্য সাম্য, ন্যায় ও মুক্তি—যা আমাদের সবার কাছে প্রতিফলিত হবে।’ তিনি ও অন্যান্য নেতারা জোর দিয়ে বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রকে পূর্ণাঙ্গ ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে হলে এই পাঁচটি অধ্যায়কে গণ-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যথায়, এটি শাসকের দলিল হয়ে থাকবে।’

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর চালানো তাণ্ডবের ঘটনা, যা ভারতীয় পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছিল, ঘোষণা থেকে বাদ দেওয়া দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতি ঘোর অবজ্ঞা। এই ঘটনায় লাখো কোটি মুসলমানের হৃদয়ে কষ্টের চোট লেগেছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের বীজ বপন না হলে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান হতো কিনা তা সন্দেহজনক। আমাদের সহযোদ্ধারা রিমান্ড, হামলা-মামলা, জুলুমের শিকার হয়েছে, অথচ সেই আন্দোলনের গুরুত্ব এই ঘোষণাপত্রে অস্বীকার করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ফয়জুল আলম বলেন, ‘২০০৯ সালের পিলখানায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী হয়রানি ও অবিচার এখনও চলছে। বিনাদোষ কারাবন্দী অনেক ভাই রয়েছেন। তাদের মুক্তি এবং বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহালের দাবি এই ঘোষণাপত্রে থাকা উচিত।’ তিনি সতর্ক করেন, এই দাবি অন্তর্ভুক্ত না হলে সংগঠন ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করবে এবং রাস্তায় নামবে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছার প্রতিবিম্ব হয়ে অসাম্প্রদায়িক ও অসাম্পূর্ণ দলিল হয়েছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কিশোর বিদ্রোহের মাধ্যমে আমাদের প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে ওঠে, যা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও তরুণদের ওপর সরকার ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের দমন-পীড়ন এখনও চলছে, অথচ সেই সংগ্রামকে এই ঘোষণাপত্রে মুছে ফেলা হয়েছে।’

বক্তারা আরও বলেন, এই পাঁচটি অধ্যায়কে অন্তর্ভুক্তি না করলে ঘোষণাপত্র জনগণের দাবি পূরণ করবে না এবং ক্ষমতায় থাকা সরকার জনগণের আস্থা হারাবে। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, দ্রুত এই বিষয়গুলো সংযুক্ত করে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত