leadT1ad

ডিম মাছ মাংসের দাম চড়া, চাপে সাধারণ ক্রেতারা

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ২৬
নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। স্ট্রিম কোলাজ

রাজধানীর বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে এখন ১৫০। ডিমের পাশাপাশি চাল, সবজি, পেঁয়াজ, আদা, এলাচ ও ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। এসব পণ্যের বাড়তি দামে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একজন দোকানি জাকারিয়া আহমেদ জানান, দুই সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ টাকা, যা এখন ৩০ টাকা বেড়েছে। তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়, বলেন তিনি।

সবজির বাজারেও চড়া দাম। বিক্রেতারা জানান, টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় সবজি নষ্ট হয়ে গেছে, সরবরাহ কম থাকায় দামে প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বরবটি ও কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি ১০০–১২০ টাকা, যা আগের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা বেশি। ৬০ টাকার নিচে আছে কেবল আলু ও পেঁপে। হাতে গোনা কয়েকটি সবজি—যেমন ঢ্যাঁড়স, পটোল, মিষ্টিকুমড়া ৬০–৮০ টাকার মধ্যে মিলছে।

অবশ্য কারওয়ান বাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়।

মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। সংগৃহীত ছবি
মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। সংগৃহীত ছবি

পেঁয়াজের দামও দুই সপ্তাহে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। আগে ৫০–৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৮০–৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, “উৎপাদন এলাকায় প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকা বেড়েছে। মৌসুম শেষের দিকে, সঙ্গে বৃষ্টিতে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এ পরিস্থিতি।”

আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন, সারা বছর পেঁয়াজের দাম কম গেছে। এখন মৌসুমও না। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দামটা একটু বেড়েছে। সামনে আরও কমে আসবে। সরবরাহ কম হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

এলাচ ও আদার দামও হঠাৎ বেড়েছে। আগে ১০০ গ্রাম এলাচ ৪০০ টাকা ছিল, এখন তা ৫৫০–৬০০ টাকা। আদা ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০–২৫০ টাকা কেজি।

চালের বাজারেও নিম্নমুখী প্রবণতা নেই। মোটা চাল ৬০ টাকার বেশি, মাঝারি মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬৫–৭০ টাকা, অন্যগুলো ৭৫–৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভালো ব্র্যান্ডের চাল ৯০–১০০ টাকা।

এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে আবার বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৮০–১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, খামার পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ মানুষ সপ্তাহের বাজার ছুটির দিনে করায় বিক্রেতারা কৌশলে এই সময়টাতে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন।

মধ্যবাড্ডার ক্রেতা সোনিয়া আক্তার বলেন, “দুই সপ্তাহ আগেও মুরগি ১৬০ টাকায় কিনেছি, আজ ১৮৫ টাকা চাইছে। গরু–খাসি তো আগেই নাগালের বাইরে, এখন মুরগিও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।”

বিক্রেতারা অবশ্য দাম বৃদ্ধির জন্য পাইকারি বাজার ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। রামপুরা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা হাসান শেখ বলেন, “পাইকারিতে আগে ১৫৫–১৬০ টাকায় মুরগি মিলত, এখন ১৬৫–১৭০ টাকা। খরচ যোগ করতেই খুচরায় ১৮০–১৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে।”

মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। দেশি রুই ও কাতল ৩০০–৩৪০ টাকা, পাবদা ৩৫০–৪০০, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া–পাঙাস ১৮০–২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংসের কেজি ৭৫০–৮০০ ও খাসি ১,২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম স্থিতিশীল হলেও উচ্চমূল্যের কারণে অনেকের নাগালের বাইরে। মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান, “বিক্রি কমে গেছে। অধিকাংশ মানুষ মাছ-মুরগির দিকে ঝুঁকছেন।”

মাছ-মাংসের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলে খাদ্যতালিকা থেকে এগুলো দিতে বাধ্য হবেন বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতা। তারা সরকারের কাছে বাজার মনিটরিং জোরদার ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত