leadT1ad

হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল

৩৫টি চিকিৎসক পদ শূন্য, রোগীর অবস্থা জটিল হলেই স্থানান্তর

চিকিৎসক ও কর্মকর্তার ৫৭টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২২ জন। শূন্য পড়ে আছে ৩৫টি পদই। এর মধ্যে ১০ জন সিনিয়র কন্সালটেন্টের মধ্যে ১ জন, ১২ জন জুনিয়র কন্সালটেন্টের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩ জন।

স্ট্রিম সংবাদদাতাহবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে ৩৫টি পদ শূন্য। সংগৃহীত ছবি

হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপতালের জরুরি বিভাগে ভিড়। রোগীর স্বজনদের ভেতর চাপা ক্ষোভ। দুপুরে পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসকের দেখা নেই। কথা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন মালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ইমার্জেন্সিতে দেখানোর পর প্রাথমিকভাবে পায়ে প্লাস্টার করিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক আসেননি।’

কেবল মালেক মিয়া নন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে অনেককেই তাঁর মতো দুর্ভোগে পড়তে হয়। সাইন বোর্ডে ২৫০ শয্যার লেখা থাকলেও হাসপাতালটি চলছে ৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে। তাতে বিভাগগুলোতে চিকিৎসার লোকজন থাকার থেকে না থাকার সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন এভাবে চলায় চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকে পড়তে হচ্ছে ‍দুর্ভোগে। বেসরকারি ‍প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দিতে হয় কয়েক গুণ বেশি টাকা। রোগীর একটু গুরুতর অবস্থা ও জটিল রোগাক্রান্ত হলে স্থানান্তর করা হয় বিভাগীয় শহর বা রাজধানীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার সাড়ে ২৩ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা ২৫০ শয্যা জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল এলাকার রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতিদিন এখানে প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নেন বলে জানা গেছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগী ভর্তি হতে এলেও পাচ্ছেন না সঠিক চিকিৎসা।

শয্যা বাড়লেও জনবল বাড়েনি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয় ৫০ শয্যা নিয়ে। বিএনপি সরকারের আমলে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ শাসনামলে শয্যাসংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। এতে হাসপাতালটি উন্নীত হয় ২৫০ শয্যায়। কয়েক দফায় শয্যাসংখ্যা বাড়ালেও তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় জনবল বাড়েনি। ফলে সাইনবোর্ডে নামের সঙ্গে ২৫০ শয্যা উল্লেখ থাকলেও হাসপাতালটি চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতালের লোকবল দিয়েই।

এদিকে হাসপাতালের জন্য আটতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এর তিনটি তলায় চলছে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম।

হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপতালের জরুরি বিভাগে ভিড়। ছবি: সংগৃহীত
হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপতালের জরুরি বিভাগে ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চিকিৎসক ও কর্মকর্তার পদ রয়েছে ৫৭টি। কিন্তু সেখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২২ জন। এতে ৩৫টি পদই শূন্য পড়ে আছে। এর মধ্যে ১০ জন সিনিয়র কন্সালটেন্টের মধ্যে ১ জন, ১২ জন জুনিয়র কন্সালটেন্টের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩ জন।

সিনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে গাইনি, ইএনটি, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি, নেফরোলজি, সার্জারি, অর্থো-সার্জারি, শিশু, চর্ম ও যৌনরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে একটি করে পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া জুনিয়র সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে চক্ষু, রেডিওলজিস্ট, অর্থো সার্জারি, শিশু, প্যাথলজি, মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, মানসিক, গ্যাস্ট্রোলজি পদগুলো খালি রয়েছে।

হাসপাতালে কনসালটেন্ট না থাকায় মেডিকেল কর্মকর্তাদের দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু মেডিকেল কর্মকর্তার ১৪টির মধ্যে ৭টি পদই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বিভাগে ২টির মধ্যে ১টি, অ্যানেসথেটিস্ট পদে ৪টির মধ্যে ২টি, প্যাথলজিস্ট পদে ২টি পদ শূন্য। এ ছাড়া শূন্য আছে আরএস/আরপি ৩টি পদের মধ্যে ২টি ও রেজিস্ট্রার পদে ১টি।

জটিল রোগ হলেই সিলেটে স্থানান্তর

হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসক সংকটে অনেক রোগীই ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। অনেকে চিকিৎসক সেবা না পেয়ে ক্লিনিকেও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা থেকে যান, তাদের অনেকেই চিকিৎসা ছাড়াই চিকিৎসকের অপেক্ষা করতে হয়।

প্রায় ২ বছর ধরে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদটি শূন্য। জরুরি প্রয়োজনে গর্ভবতী নারীরা হাসপাতালে এলে তাদের চিকিৎসা না দিয়েই সিলেটসহ অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসক না থাকায় অনেককে জরুরি বিভাগ থেকেই ফেরত যেতে হচ্ছে।

বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় আহত, সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত পঞ্চাশ-ষাটোর্ধ্ব বয়সী রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তবে চিকিৎসকের অভাবে দুই দিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা।

বৃদ্ধ সফিনা বেগম দুদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। সফিনা বেগম বলেন, ‘সকালে ওয়ার্ডে এক ডাক্তার আসেন। আমি দুপুরে ভর্তি হয়েছি, তাই ডাক্তার দেখাতে পারিনি। আজ (বুধবার) সকালে একজন ডাক্তার এসে কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছে, এগুলো সেবন করছি।’

রোগীর স্বজন এক আব্দুল আহাদ বলেন, সামান্য কাটাছেঁড়া নিয়ে হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা পাওয়া যায় না। রোগীদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেয়।

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন, ‘জেলা সদর হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। তবে আন্তরিকভাবে যতটুকু সম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরিই শূন্য পদে নিয়োগ হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত