leadT1ad

সুস্থ প্রজন্ম গড়তে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর প্রধান উপদেষ্টার

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি

যে কোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, যতই চ্যালেঞ্জ থাকুক—বাংলাদেশকে একটি সুস্থ ও সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ সই অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ প্রয়োজন। এ ধরনের মানবসম্পদ গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় উন্নয়ন—কোনোটিই যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়।’

অসংক্রামক রোগ: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অসংক্রামক রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, ঘনবসতি ও ভৌগোলিক বাস্তবতায় এ পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়—আমাদের অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জড়িত।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটে এবং এর মধ্যে ৫১ শতাংশ মানুষ মারা যান ৭০ বছরের আগেই। ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) এখন ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যার বড় অংশই এই রোগগুলোর চিকিৎসায় খরচ হয়।

উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় ও আর্থিক সংকট

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্যান্সারের মতো জটিল অসংক্রামক রোগ হলে পরিবারগুলো প্রায়ই সর্বোচ্চ আর্থিক সামর্থ্য ব্যয় করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেক সময় রোগীদের বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে হয়, ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বেরিয়ে যায়।

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন তিনি। তার মতে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়; এজন্য খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকারসহ সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তরুণ সমাজকে তামাক থেকে বিরত রাখা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনিশ্চয়তায় পড়বে। পাশাপাশি চিনির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবান্ধব জাতীয় নীতি প্রণয়ন এখন জরুরি।’

যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে তিন দিক নির্দেশনা

যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রথমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনযাপন পরিবর্তনকে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যবান্ধব জীবনযাপনকে সমাজে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত হয়।

দ্বিতীয়ত, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল ও বৈশ্বিক কারিগরি সহায়তা কাজে লাগানো হলে যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।

তৃতীয়ত, তিনি বলেন, যেকোনো কর্মপরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন নিবিড় মনিটরিং ও মূল্যায়ন। এজন্য পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ, দক্ষ জনবল এবং কঠোর নজরদারি অপরিহার্য। তার মতে, এসব নিশ্চিত করা গেলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুস্থ ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে সরকারি-বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং যুবশক্তিসহ সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেবল পারস্পরিক অংশীদারত্বের মাধ্যমেই আমরা সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত