leadT1ad

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ১ বছর

৩০ জুলাই: ‘ফুলগুলো সব লাল হলো ক্যান?’

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩৬
রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সাংস্কৃতিককর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আশরাফুল আলম

পটভূমি না জানলে সেদিন যে কেউ ফেসবুকে ঢুকে ভিমড়ি খেত। পুরো ফেসবুকটাই সেদিন যেন লাল চাদরে ঢাকা। সবাই ফেসবুকের প্রোফাইল ছবির জায়গায় লাল রং দিয়ে রেখেছে। কেউ কেউ নিজেদের চোখেমুখে লাল কাপড় বাধা ছবি দিয়েছেন। কেউ আবার অর্ণবের সেই বিখ্যাত গানের লাইন উল্টে দিয়ে লিখেছেন, ‘ফুলগুলো সব লাল হলো ক্যান?’

বলা হচ্ছে গত বছরের ৩০ জুলাইয়ের কথা।

সেদিন অবশ্য সবাই ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন বললে খানিকটা ভুল বলা হয়। কেউ কেউ কালোও করেছিলেন। কেন না সরকার বলেছিল, জুলাই আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করতে হবে। ওই দিন আবার ছিল রাষ্ট্রীয় শোক। কিন্তু সাধারণ ছাত্র-জনতা সরকারের সেই ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাল রঙকে ধারণ করেন। সেদিন অনলাইনের লাল সমুদ্রে গুটিকয়েক কালো প্রোফাইল তাই তেমন পাত্তা পায়নি।

শুধু অনলাইনে নয়, অফলাইনেও এদিন অনেকে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে নামেন। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে এদিন মৌন মিছিল হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।

‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই মৌন মিছিল হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংগৃহীত ছবি
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই মৌন মিছিল হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংগৃহীত ছবি

মার্চ ফর জাস্টিসের ঘোষণা

৩০ তারিখ রাত সোয়া ১১টার দিকে পরের দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামল, মামলা, গুম-খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে আগামীকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় “মার্চ ফর জাস্টিস” কর্মসূচি পালন করা হবে।’

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘আমরা সারা দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সব নাগরিককে আমাদের কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং আমাদের দাবি আদায়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বিদেশি সহায়তা চাইলেন হাসিনা

৩০ তারিখে জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টারের সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জানান, কোটা আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি বিদেশি কারিগরি সহায়তা নেবে যাতে তদন্ত সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন তদন্ত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে যথাযথ ও মানসম্মত করতে বৈদেশিক কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করব।’

তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এতে দোষী, তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক। কারণ, আমি জানি এতে আমার কোনো ঘাটতি ছিল না।’

সেদিন বিকেলে আন্দোলনে আহতদের পরিদর্শনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। শেখ হাসিনা আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

২০২৪ সালের ৩০ জুলাই আহতদের পরিদর্শনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। সংগৃহীত ছবি
২০২৪ সালের ৩০ জুলাই আহতদের পরিদর্শনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। সংগৃহীত ছবি

শেখ হাসিনা যেদিন হাসপাতালে গিয়ে আবেগপ্রবণ হচ্ছেন, তার ঠিক আগের দিন জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দেশে জাতিসংঘের লোগোযুক্ত কোনো যানবাহন মোতায়েন করা হবে না। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময়েই শুধু এই ধরনের যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। জাতিসংঘের বাইরে এসব লোগোযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ নেই।

রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পুলিশের সামনে প্রতিবাদ করেন এক সাংস্কৃতিককর্মী। ছবি: আশরাফুল আলম
রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পুলিশের সামনে প্রতিবাদ করেন এক সাংস্কৃতিককর্মী। ছবি: আশরাফুল আলম

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জাতিসংঘের লোগো সংবলিত যানবাহন ব্যবহার করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

দেশে গণ-গ্রেপ্তার তখনো চলমান। এই গ্রেপ্তারকৃতদের একটি বড় অংশের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন-বিক্ষোভ করতে গেলে তখনো বাধা দিচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকার যতটা দেখানোর চেষ্টা করছিল, পরিস্থিতি তখন আদৌ ততটা স্বাভাবিক ছিল না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত