leadT1ad

রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’

স্ট্রিম সংবাদদাতারাজশাহী
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৪১
রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার, স্বজনদের আহাজারি। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় গ্রামে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে মতিহার থানা-পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন মিনারুল ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম(১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৩)। বামনশিকড় এলাকা প্রশাসনিকভাবে পবা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মতিহার থানার আওতায়।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যার পর মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন। একটি ঘরের বিছানায় পাওয়া যায় মনিরা ও কন্যা মিথিলার মরদেহ।

ঘর থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্ট্রিম ছবি
ঘর থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্ট্রিম ছবি

পাশের ঘরে বিছানায় ছিল মাহিমের মৃত দেহ, আর একই ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিলেন মিনারুল। ঘর থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ, যা মিনারুলের লেখা বলে স্বজনেরা পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন।একটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি মিনারুল নিচের যেসব কথা লিখব, সব আমার নিজের। লিখে যাচ্ছি এই কারণে যে আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারও কোনো দোষ নেই। কারণ লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে। আমি প্রথমে আমার বউকে মেরেছি, তারপর আমার মাহিমকে, এরপর আমার মিথিলাকে। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।’

আরেকটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। কারণ আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ-ছেলে-মেয়ে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট মেনে নিতে পারছিলাম না, তাই মরে গেলাম—সেই ভালো।”

পুলিশের উদ্ধার করা আরেকটি চিরকুট। স্ট্রিম ছবি
পুলিশের উদ্ধার করা আরেকটি চিরকুট। স্ট্রিম ছবি

নিহতের চাচি জানেহার বেগম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মিনারুলের স্ত্রী ও মেয়ে এক ঘরে, ছেলে মাহিম পাশের ঘরে ঘুমিয়েছিল। রাত ১০টার দিকে মিনারুল বাড়ি ফেরেন। তখন বাড়ির অন্য সদস্যরা আলাদা ঘরে বা উঠোনে ঘুমাচ্ছিলেন। ভোর পর্যন্ত কেউ কিছু টের পাননি। সকাল আটটার দিকে মা আনজুরা বেগম ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেলে বাবা রুস্তম আলী ঘরের টিনের ওপর উঠে ভেতরে তাকিয়ে মিনারুলকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে দরজা কেটে ভেতরে ঢুকে চারজনের মরদেহ পাওয়া যায়।

চাচি আরও জানান, মিনারুলের একাধিক ঋণের কিস্তি ছিল। কিস্তির লোকেরা প্রায়ই বাড়িতে আসতেন। মিনারুল কৃষিকাজ, ট্রাকের হেল্পার বা মাছ ধরার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে তার রাগ বেশি ছিল, কেউ কিছু বললেই কাজে যাওয়া বন্ধ করতেন—এতে অভাব লেগেই থাকত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, দুদিন আগে মিনারুল তার কাছে গিয়ে জানান, ঘরে চাল নেই। তিনি দুই হাজার টাকা দিয়ে দেন চাল কেনার জন্য। বছর তিনেক আগে ঋণ শোধ করতে তার বাবাকে দিয়ে পাঁচ কাঠা জমি বিক্রি করানো হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার কিস্তি তোলেন মিনারুল।

সকালে নিহত মিনারুলের মা আনজুরা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘ও জান! এই কইরি গেলি ক্যানরে বাপ… আমি মাটি বেইচি আবার দিতুক রে জান… আমার তো কিছুই থাইকল না।’ সকালে বাড়িটিতে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত