সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে দুই দেশের সরকার প্রধান জনশক্তি রপ্তানি, জ্বালানি সহযোগিতা, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। অতীতে মালয়েশিয়ার অবস্থা প্রায় বাংলাদেশের মতোই ছিল। আজ সেই দেশ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। মালয়েশিয়া যেভাবে সাফল্যের উদাহরণ হয়ে উঠল, তা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
স্ট্রিম ডেস্ক
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ইতিহাস, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। মানবসম্পদ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অংশীদার।
সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। আলোচনা হয়েছে জনশক্তি রপ্তানি, জ্বালানি সহযোগিতা, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে।
অতীতে মালয়েশিয়ার অবস্থা প্রায় বাংলাদেশের মতোই ছিল। আজ সেই দেশ অর্থনীতিতে এখন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি গত শতাব্দীতে মোটাদাগে চারটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। সুলতান নাজরিন শাহের ‘চার্টিং দ্য ইকোনোমি: আর্লি টোয়েনটিন্থ সেঞ্চুরি মালায়া অ্যান্ড কনটেম্পরারি মালয়েশিয়ান কন্ট্রাস্টস’ বইতে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বিশদে লেখা হয়েছে। বইটি বিশ্লেষণ করে মালয়েশিয়ার এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
২০ শতকের শুরুতে মালয়েশিয়া ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে একটি ‘মডেল কলোনি’। উর্বর মাটি, অনুকূল আবহাওয়া এবং ইউরোপ–পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যপথের কাছাকাছি অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশরা সেখানে টিন ও রাবারভিত্তিক রপ্তানি অর্থনীতি গড়ে তোলে। প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ এলেও এর মুনাফা মূলত ব্রিটেনে চলে যেত। এ কারণে স্থানীয় মালয় জনগোষ্ঠীর আয় খুব একটা বাড়ত না। শ্রম ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে তখন চীন ও ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক আনা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মালয়েশিয়া স্বাধীনতার পথে এগোতে শুরু করে। ১৯৪৬ সালে মালায়ান ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা, ১৯৫৭ সালে ফেডারেশন অব মালায়ার স্বাধীনতা এবং ১৯৬৪ সালে বর্তমান মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে। এই সময়ে সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ, বন্দর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ হয়। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মূলত এসব পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের শিল্পায়নের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
১৯৬৯ সালের জাতিগত দাঙ্গার পর গৃহীত নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি) মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সমতা আনার চেষ্টা করে। বিশেষ করে মালয় জনগোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। অর্থনীতি টিন ও রাবারনির্ভরতা থেকে সরে এসে তেল-গ্যাস, পাম তেল এবং ‘ইলেকট্রনিক্স অ্যাসেম্বলি’ শিল্পে বৈচিত্র্য পায়। বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষত পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানির উপস্থিতি কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাড়িয়ে দেয়। দারিদ্র্য কমে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত উন্নত হয়। যদিও শিক্ষার মান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার ঘাটতি থাকায় তখন মালয়েশিয়া প্রযুক্তি শিল্পে তেমন সাফল্য পায়নি।
২০০০ সালের পর চীনের উৎপাদনশীল খাতের উত্থান মালয়েশিয়ার মধ্যম প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকে চাপে ফেলে। এ সময় মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসে। সঙ্গে আয়ের বৈষম্য বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে দেশটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য গ্রহণ করে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও পরিবেশ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মধ্য–আয়ের দেশের তালিকা থেকে সরে আসতে সরকার এখন উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে।
মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সাফল্য অনেকটাই প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রমনীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন টিন ও রাবার ঔপনিবেশিক যুগে রপ্তানির মূল খাত হিসেবে কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস দেশকে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি আয় দিয়েছে। রাবারের পরে পাম অয়েল চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে মালয়েশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাম অয়েল উৎপাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পাশাপাশি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু কৃষি ও বাণিজ্যে সুবিধা দিয়েছে।
১৯৭০-এর দশকের পর মালয়েশিয়া কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বের হয়ে শ্রমনির্ভর, রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের দিকে এগিয়েছে। ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টেক্সটাইল ও রাবারজাত পণ্যে রপ্তানি শিল্প গড়ে ওঠে, যেখানে বিদেশি কোম্পানির প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগ ব্যবহার করা হয়। সরকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) তৈরি ও শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিয়েছে, যা দেশকে ১৯৯০-এর দশকে ‘নতুনভাবে শিল্পায়িত দেশ’-এর মর্যাদা এনে দিয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় ও প্রতিযোগিতামূলক করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার বিদেশি কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করে, ফলে বহুজাতিক করপোরেশনগুলো মালয়েশিয়ারকে দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ ও রপ্তানির দিক থেকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
অবকাঠামো ও শিক্ষায় বিনিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হওয়ায় শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। এই বিনিয়োগগুলো দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী ঘাটতি পূরণের জন্য ১৯৭০-এর দশক থেকে তারা বিদেশি শ্রমিক আনতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে এই প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে শ্রমশক্তির প্রায় ২৭ শতাংশ ছিল বিদেশি শ্রমিক। যারা মূলত ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন থেকে গিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। বিদেশি শ্রমিকের উপস্থিতি উৎপাদন খরচ কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক হিস্ট্রি এসোসিয়েশন, মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট, ইকোনমিক হিস্ট্রি মালয়েশিয়া, ‘চার্টিং দ্য ইকোনোমি: আর্লি টোয়েনটিন্থ সেঞ্চুরি মালায়া অ্যান্ড কনটেম্পরারি মালয়েশিয়ান কন্ট্রাস্টস’
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ইতিহাস, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। মানবসম্পদ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অংশীদার।
সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। আলোচনা হয়েছে জনশক্তি রপ্তানি, জ্বালানি সহযোগিতা, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে।
অতীতে মালয়েশিয়ার অবস্থা প্রায় বাংলাদেশের মতোই ছিল। আজ সেই দেশ অর্থনীতিতে এখন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি গত শতাব্দীতে মোটাদাগে চারটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। সুলতান নাজরিন শাহের ‘চার্টিং দ্য ইকোনোমি: আর্লি টোয়েনটিন্থ সেঞ্চুরি মালায়া অ্যান্ড কনটেম্পরারি মালয়েশিয়ান কন্ট্রাস্টস’ বইতে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বিশদে লেখা হয়েছে। বইটি বিশ্লেষণ করে মালয়েশিয়ার এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
২০ শতকের শুরুতে মালয়েশিয়া ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে একটি ‘মডেল কলোনি’। উর্বর মাটি, অনুকূল আবহাওয়া এবং ইউরোপ–পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যপথের কাছাকাছি অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশরা সেখানে টিন ও রাবারভিত্তিক রপ্তানি অর্থনীতি গড়ে তোলে। প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ এলেও এর মুনাফা মূলত ব্রিটেনে চলে যেত। এ কারণে স্থানীয় মালয় জনগোষ্ঠীর আয় খুব একটা বাড়ত না। শ্রম ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে তখন চীন ও ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক আনা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মালয়েশিয়া স্বাধীনতার পথে এগোতে শুরু করে। ১৯৪৬ সালে মালায়ান ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা, ১৯৫৭ সালে ফেডারেশন অব মালায়ার স্বাধীনতা এবং ১৯৬৪ সালে বর্তমান মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে। এই সময়ে সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ, বন্দর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ হয়। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মূলত এসব পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের শিল্পায়নের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
১৯৬৯ সালের জাতিগত দাঙ্গার পর গৃহীত নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি) মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সমতা আনার চেষ্টা করে। বিশেষ করে মালয় জনগোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। অর্থনীতি টিন ও রাবারনির্ভরতা থেকে সরে এসে তেল-গ্যাস, পাম তেল এবং ‘ইলেকট্রনিক্স অ্যাসেম্বলি’ শিল্পে বৈচিত্র্য পায়। বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষত পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানির উপস্থিতি কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাড়িয়ে দেয়। দারিদ্র্য কমে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত উন্নত হয়। যদিও শিক্ষার মান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার ঘাটতি থাকায় তখন মালয়েশিয়া প্রযুক্তি শিল্পে তেমন সাফল্য পায়নি।
২০০০ সালের পর চীনের উৎপাদনশীল খাতের উত্থান মালয়েশিয়ার মধ্যম প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকে চাপে ফেলে। এ সময় মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসে। সঙ্গে আয়ের বৈষম্য বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে দেশটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য গ্রহণ করে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও পরিবেশ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মধ্য–আয়ের দেশের তালিকা থেকে সরে আসতে সরকার এখন উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে।
মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সাফল্য অনেকটাই প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রমনীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন টিন ও রাবার ঔপনিবেশিক যুগে রপ্তানির মূল খাত হিসেবে কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস দেশকে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি আয় দিয়েছে। রাবারের পরে পাম অয়েল চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে মালয়েশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাম অয়েল উৎপাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পাশাপাশি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু কৃষি ও বাণিজ্যে সুবিধা দিয়েছে।
১৯৭০-এর দশকের পর মালয়েশিয়া কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বের হয়ে শ্রমনির্ভর, রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের দিকে এগিয়েছে। ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টেক্সটাইল ও রাবারজাত পণ্যে রপ্তানি শিল্প গড়ে ওঠে, যেখানে বিদেশি কোম্পানির প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগ ব্যবহার করা হয়। সরকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) তৈরি ও শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিয়েছে, যা দেশকে ১৯৯০-এর দশকে ‘নতুনভাবে শিল্পায়িত দেশ’-এর মর্যাদা এনে দিয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় ও প্রতিযোগিতামূলক করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার বিদেশি কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করে, ফলে বহুজাতিক করপোরেশনগুলো মালয়েশিয়ারকে দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ ও রপ্তানির দিক থেকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
অবকাঠামো ও শিক্ষায় বিনিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হওয়ায় শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। এই বিনিয়োগগুলো দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী ঘাটতি পূরণের জন্য ১৯৭০-এর দশক থেকে তারা বিদেশি শ্রমিক আনতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে এই প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে শ্রমশক্তির প্রায় ২৭ শতাংশ ছিল বিদেশি শ্রমিক। যারা মূলত ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন থেকে গিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। বিদেশি শ্রমিকের উপস্থিতি উৎপাদন খরচ কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক হিস্ট্রি এসোসিয়েশন, মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট, ইকোনমিক হিস্ট্রি মালয়েশিয়া, ‘চার্টিং দ্য ইকোনোমি: আর্লি টোয়েনটিন্থ সেঞ্চুরি মালায়া অ্যান্ড কনটেম্পরারি মালয়েশিয়ান কন্ট্রাস্টস’
ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে বসবে পরাশক্তি দুই দেশ। কিন্তু স্থান হিসেবে ট্রাম্প কেন আলাস্কাকেই বেছে নিলেন?
১ দিন আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়ায় যান। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সফরের মূল লক্ষ্য অভিবাসন সহজ করা এবং বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
২ দিন আগেগত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিল।
২ দিন আগেভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন প্রভাবশালী এক চরিত্র। বাবা জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ‘প্রিয়দর্শিনী’ ইন্দিরা। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য থেকে রাজনীতির জীবন শুরু করে টানা ১১ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
৩ দিন আগে