দীর্ঘ ২৭ মাসের পর মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে বাংলাদেশে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি ও বাজার সংস্কারের ফলে মাত্র ১১ মাসে এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে। তবে আগের সরকারের দীর্ঘসময়ের ব্যর্থতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ এখনো মেটেনি–এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করবে সেই কারণ ও ফলাফল।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
দীর্ঘ ২৭ মাস পর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে—যা ২০২৩ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন।
এই মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একপ্রকার স্বস্তির বার্তা। কারণ, গত প্রায় ৪৭ মাস (২০২২ জুন থেকে ২০২৫ জুন) ধরে মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে ছুঁতে পারছে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই স্বস্তি কীভাবে এল? নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১১ মাসের মাথায় মূল্যস্ফীতি কমে গেল, অথচ পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় দুই বছর চেষ্টা করেও এ সাফল্য আনতে পারেনি কেন?
২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির বেড়াজালে। টানা ২৭ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থেকেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এটি পৌঁছে ১১.৬৬ শতাংশে দাঁড়ায়। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ভয়াবহ, বাড়ছিল দ্বিগুণ হারে।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একাধিকবার দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিশ্লেষকরা জানান, সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি শুধু ভয়াবহ ছিল না, ছিল দীর্ঘস্থায়ীও। আর সরকার ছিল কার্যত অচল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছিল নিয়ন্ত্রিত, বাজার তদারকি দুর্বল, আর রাজস্ব নীতি ছিল প্রতিক্রিয়াশীল।’
২০২৪ সালের আগস্টে এক গণ-আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী একটি সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং নীতি-নির্ধারণে স্বাধীনতার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ শুরু করে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানামুখী পদক্ষেপ নেয় সরকার। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৩৯ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে ছয় মাস আগেও তা ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামেও কিছুটা স্থিতি দেখা গেছে।
তবে সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তন আসে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ-নীতি বাতিলের মাধ্যমে।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নিয়োগের পর সরকার ৯ শতাংশ সুদের হার সীমা তুলে নেয়, যা ছিল বিগত সরকারের একটি বিতর্কিত নীতি।
এই সীমা ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ঋণ নীতিমালা চালু করতে বাধা দিচ্ছিল। মুদ্রানীতির প্রয়োগ ছিল প্রায় অকার্যকর। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এই সুদসীমা ছিল রাজনৈতিক স্বার্থে বানানো একটি নীতির ছদ্মবেশ। এটি ব্যবসায়ী শ্রেণিকে খুশি করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাত-পা বেঁধে রেখেছিল।’
সীমা তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ধাপে ধাপে নীতিগত সুদের হার বাড়ায়, যার মাধ্যমে বাজারে চাহিদা কমে আসে এবং মূল্যস্ফীতি কমে।
নতুন সরকার বাজার তদারকিতে আগ্রাসী ভূমিকা নেয়। আগে পেঁয়াজ, চাল, কাঁচামরিচ ইত্যাদির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়াকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সিন্ডিকেটের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রিয়েলটাইম ডিজিটাল নজরদারি চালু করে। গুদামজাতকরণে নিয়ন্ত্রণ, পাইকারি বাজারে স্বচ্ছতা এবং মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দ্রুত হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার মতো উৎপাদনশীল এলাকায় আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম নির্মাণ এবং ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো পাইকারি বাজারে ডিজিটাল মূল্য তদারকি চালু করা হয়।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে কোনো বড় মূল্য-ঝাঁকুনি হয়নি। এটি কাকতাল নয়, বরং পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের ফল।’
আওয়ামী লীগের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বারবার ডলারের বিপরীতে টাকা ধরে রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এতে রিজার্ভ কমে যায় এবং বাজারে অস্থিরতা বাড়ে।
নতুন সরকার ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করে। এতে টাকার মান সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঠিক হয় এবং আমদানির খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আগের মতো বেপরোয়া ভর্তুকি বা রাজনীতিনির্ভর মূল্য-নিয়ন্ত্রণের বদলে নতুন সরকার স্মার্ট রেশনিং ও নগদ সহায়তা চালু করে। মোবাইল মানি ও তথ্যভিত্তিক বাছাইয়ের মাধ্যমে গরিব পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে সহায়তা দেওয়া হয়। বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, আবার ভোক্তার আস্থাও ফিরে আসে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে। আগে অনেক সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক চাপে মিইয়ে যেত। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ বাড়ানো, তারল্য নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কাজ স্বাধীনভাবে করছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি যেমন পরিসংখ্যানের খেলা, তেমনি এটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়ও। যদি মানুষ বিশ্বাস করে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে, তাহলে মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশাও কমে যায়।’
এই উন্নতির মাঝেও বাস্তবতা বলছে, পথ এখনো সহজ নয়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.০৩ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশের অনেক ওপরে। জুন মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৮ শতাংশ—৪১ মাস ধরে মজুরি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। অর্থাৎ প্রকৃত আয় এখনো কমছে।
ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমেছে মানেই কষ্ট কমেছে, এমন নয়। মানুষ আগের তুলনায় কম কিনছে, ব্যয় বেশি করছে। আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বাড়ছে।’
অন্যদিকে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক নয়। ২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াতে যথেষ্ট নয়।
অনেকে বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমা ও অনুকূল আবহাওয়াও এই পতনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এমন পরিবেশ ২০২৩ সালের শেষ ভাগেও ছিল, তবু তখন মূল্যস্ফীতি কমেনি।
আসল পার্থক্য হলো—এই সরকার কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনতা দিয়েছে, বাজার সংস্কার করেছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি কার্যকর ব্যবস্থাপনার সাফল্য।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখন শুধু এক পরিসংখ্যান নয়—এটি একটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার ফল। এই ঘটনাপ্রবাহ দেখায়, সুশাসন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব থাকলে অর্থনীতিতে পরিবর্তন সম্ভব।
দীর্ঘ ২৭ মাস পর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে—যা ২০২৩ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন।
এই মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একপ্রকার স্বস্তির বার্তা। কারণ, গত প্রায় ৪৭ মাস (২০২২ জুন থেকে ২০২৫ জুন) ধরে মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে ছুঁতে পারছে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই স্বস্তি কীভাবে এল? নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১১ মাসের মাথায় মূল্যস্ফীতি কমে গেল, অথচ পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় দুই বছর চেষ্টা করেও এ সাফল্য আনতে পারেনি কেন?
২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির বেড়াজালে। টানা ২৭ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থেকেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এটি পৌঁছে ১১.৬৬ শতাংশে দাঁড়ায়। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ভয়াবহ, বাড়ছিল দ্বিগুণ হারে।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একাধিকবার দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিশ্লেষকরা জানান, সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি শুধু ভয়াবহ ছিল না, ছিল দীর্ঘস্থায়ীও। আর সরকার ছিল কার্যত অচল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছিল নিয়ন্ত্রিত, বাজার তদারকি দুর্বল, আর রাজস্ব নীতি ছিল প্রতিক্রিয়াশীল।’
২০২৪ সালের আগস্টে এক গণ-আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী একটি সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং নীতি-নির্ধারণে স্বাধীনতার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ শুরু করে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানামুখী পদক্ষেপ নেয় সরকার। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৩৯ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে ছয় মাস আগেও তা ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামেও কিছুটা স্থিতি দেখা গেছে।
তবে সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তন আসে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ-নীতি বাতিলের মাধ্যমে।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নিয়োগের পর সরকার ৯ শতাংশ সুদের হার সীমা তুলে নেয়, যা ছিল বিগত সরকারের একটি বিতর্কিত নীতি।
এই সীমা ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ঋণ নীতিমালা চালু করতে বাধা দিচ্ছিল। মুদ্রানীতির প্রয়োগ ছিল প্রায় অকার্যকর। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এই সুদসীমা ছিল রাজনৈতিক স্বার্থে বানানো একটি নীতির ছদ্মবেশ। এটি ব্যবসায়ী শ্রেণিকে খুশি করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাত-পা বেঁধে রেখেছিল।’
সীমা তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ধাপে ধাপে নীতিগত সুদের হার বাড়ায়, যার মাধ্যমে বাজারে চাহিদা কমে আসে এবং মূল্যস্ফীতি কমে।
নতুন সরকার বাজার তদারকিতে আগ্রাসী ভূমিকা নেয়। আগে পেঁয়াজ, চাল, কাঁচামরিচ ইত্যাদির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়াকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সিন্ডিকেটের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রিয়েলটাইম ডিজিটাল নজরদারি চালু করে। গুদামজাতকরণে নিয়ন্ত্রণ, পাইকারি বাজারে স্বচ্ছতা এবং মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দ্রুত হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার মতো উৎপাদনশীল এলাকায় আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম নির্মাণ এবং ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো পাইকারি বাজারে ডিজিটাল মূল্য তদারকি চালু করা হয়।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে কোনো বড় মূল্য-ঝাঁকুনি হয়নি। এটি কাকতাল নয়, বরং পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের ফল।’
আওয়ামী লীগের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বারবার ডলারের বিপরীতে টাকা ধরে রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এতে রিজার্ভ কমে যায় এবং বাজারে অস্থিরতা বাড়ে।
নতুন সরকার ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করে। এতে টাকার মান সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঠিক হয় এবং আমদানির খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আগের মতো বেপরোয়া ভর্তুকি বা রাজনীতিনির্ভর মূল্য-নিয়ন্ত্রণের বদলে নতুন সরকার স্মার্ট রেশনিং ও নগদ সহায়তা চালু করে। মোবাইল মানি ও তথ্যভিত্তিক বাছাইয়ের মাধ্যমে গরিব পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে সহায়তা দেওয়া হয়। বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, আবার ভোক্তার আস্থাও ফিরে আসে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে। আগে অনেক সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক চাপে মিইয়ে যেত। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ বাড়ানো, তারল্য নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কাজ স্বাধীনভাবে করছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি যেমন পরিসংখ্যানের খেলা, তেমনি এটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়ও। যদি মানুষ বিশ্বাস করে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে, তাহলে মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশাও কমে যায়।’
এই উন্নতির মাঝেও বাস্তবতা বলছে, পথ এখনো সহজ নয়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.০৩ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশের অনেক ওপরে। জুন মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৮ শতাংশ—৪১ মাস ধরে মজুরি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। অর্থাৎ প্রকৃত আয় এখনো কমছে।
ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমেছে মানেই কষ্ট কমেছে, এমন নয়। মানুষ আগের তুলনায় কম কিনছে, ব্যয় বেশি করছে। আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বাড়ছে।’
অন্যদিকে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক নয়। ২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াতে যথেষ্ট নয়।
অনেকে বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমা ও অনুকূল আবহাওয়াও এই পতনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এমন পরিবেশ ২০২৩ সালের শেষ ভাগেও ছিল, তবু তখন মূল্যস্ফীতি কমেনি।
আসল পার্থক্য হলো—এই সরকার কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনতা দিয়েছে, বাজার সংস্কার করেছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি কার্যকর ব্যবস্থাপনার সাফল্য।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখন শুধু এক পরিসংখ্যান নয়—এটি একটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার ফল। এই ঘটনাপ্রবাহ দেখায়, সুশাসন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব থাকলে অর্থনীতিতে পরিবর্তন সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের পড়তে শুরু করেছে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে।
৭ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ২৬ দিনের ব্যবধানে চার দফায় বাজার থেকে ৫৩৯ মিলিয়ন ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে ডলারের চাহিদা কমেছে।
৬ দিন আগেতবে চতুর্থ প্রান্তিকে আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
৭ দিন আগে