leadT1ad

চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে, রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ

মো. ইসতিয়াকঢাকা
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অংশও বেড়েছে। সংগৃহীত ছবি

বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের পড়তে ‍শুরু করেছে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে। বিপরীতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১১৯ কোটি ডলার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানিও বেড়েছে ৮৫ কোটি ডলার।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বব্যাপী মোট ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ইফিলিয়ন গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার আরশাদ আলী জানান, চীনের হারানো ক্রয়াদেশের বড় অংশ বাংলাদেশে সরে এসেছে। এটি গত ৬–৮ মাস ধরে ধীরে ধীরে প্রতিফলিত হচ্ছে। রপ্তানিকারীরা মনে করেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে আগামী মৌসুমে আরও বেশি ক্রয়াদেশ আসার সম্ভাবনা আছে। কারণ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী নতুন হার ৭ অগাস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে কার্যকর হয়েছে। ঘোষিত হারে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে; তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার কারণে গতকাল ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাতে ভারতের মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের জন্য হার নির্ধারিত হয়েছে ১৯ শতাংশ। চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক হার নির্ধারণে এখনো আলোচনা চলমান। বর্তমানে চীনের জন্য ঘোষিত হার ৩০ শতাংশ।

চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে, রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। স্ট্রিম গ্রাফিক
চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে, রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। স্ট্রিম গ্রাফিক

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এটি গত বছরের একই সময়ে ৩৪০ কোটি ডলারের তুলনায় ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অংশও বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল এবং মার্কিন বাজারে অংশীদারি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি বছরের জুনের শেষ নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্ট্রিমকে জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই চীনের ক্রয়াদেশ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এরপর গত বছর নির্বাচনি প্রচারণার সময় চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বহু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দিতে শুরু করে, যার ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এ প্রসঙ্গে আরশাদ আলী স্ট্রিমকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করবে। তখন বোঝা যাবে কতটা বাড়তি অর্ডার এসেছে। তবে আমরা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছি। মার্কিন ক্রেতাদের পাশাপাশি ইউরোপীয় ক্রেতাদের অর্ডারও বৃদ্ধি পাবে, কারণ ইউরোপের অনেক ক্রেতার ১০–১৫ শতাংশ ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের সঙ্গে যুক্ত।’

যদি যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাল্টা শুল্ক কিছুটা কমানো সম্ভব। ফলে বর্তমান শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে আমাদের ব্যবসার জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ হবে—যোগ করেন তিনি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের জায়গা দখল করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনাম ৭৭৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। বর্তমানে মার্কিন বাজারে দেশটির তৈরি পোশাকের অংশীদারি ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অংশও বেড়েছে। সংগৃহীত ছবি
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অংশও বেড়েছে। সংগৃহীত ছবি

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনামের তুলনায় চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০৪ কোটি ডলার কম হয়েছে। একই সময় চীন ৫৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। মার্কিন বাজারে চীনের অংশীদারি কমে ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৮৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া এই সময়ে ২২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে এবং তাদের রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে চীনের ক্রয়াদেশ অন্যদিকে সরছে। দেশ থেকে মূলত উচ্চমূল্যের পোশাকের অর্ডার ভিয়েতনামে যাবে, আর কম মূল্যের পোশাকের বড় অংশ বাংলাদেশ ও ভারতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পাল্টা শুল্কের কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই চীনের ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। আমরা আমাদের সদস্যদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্ক ভাগাভাগি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত