মো. ইসতিয়াক
গত এক মাসের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ বছরের কম বয়সী অন্তত সাতজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে সব ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে জানা গেছে যে অভিযুক্তদের অধিকাংশই শিশুদের পরিচিতজন। কেউ প্রতিবেশী, কেউবা নিকটাত্মীয়।
গত সোমবার রাতে (১৪ জুলাই) ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ বছর বয়সী এক পথশিশু রাজধানীর মহাখালীতে ক্যানসার হাসপাতালের পাশের গলিতে। শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে পরদিন মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আট বছরে দেশে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হয়েছে ৩ হাজার ৪ শ ৩৮টি মামলা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্তত ৫৩৯ জনের বয়স ছিল ৬ বছরের নিচে। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ছিল ৯৩৩ শিশু। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, শিশুদের ওপর সংঘটিত যৌন নির্যাতনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী হন তাদের পরিচিত কেউ।
নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর মোনাকেব বাহার। তিনি এই প্রসঙ্গে স্ট্রিমকে বলেন, আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের প্রতি যে স্বাভাবিক আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে, সেটিকেই অনেক সময় নিপীড়নকারীরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রচলিত আইনের কার্যকর প্রয়োগ না হলে শিশুদের প্রতি এমন সহিংসতা আরও বাড়তে পারে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, দেশে সংঘটিত শিশু যৌন নির্যাতনের প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী শিশুর আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা বিশ্বাসভাজন কেউ। ২০২০ সালে প্রকাশিত 'চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এক গবেষণাতেও বলা হয়, পরিচিতরাই বেশিরভাগ শিশুর ওপর যৌন-নিপীড়ন করে।
অধিকারকর্মী শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘শিশুরা যাদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে, যেমন মামা, কাকা বা অন্য আত্মীয়–তারাই অনেক সময় এই বিশ্বাসের সুযোগ নেয়। পরিবারও সাধারণত এই আত্মীয়দের নিয়ে সন্দেহ করে না। ফলে পেডোফাইলরা (শিশুকামী) অনায়াসে শিশুদের মানসিক বা শারীরিকভাবে নিপীড়নের সুযোগ পেয়ে যায়।’
শিশু যৌন সহিংসতার আলোচনায় মেয়েশিশুদের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায় বেশি। ছেলেশিশুরা সেই তুলনায় উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেশিশুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও যৌন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ২৪ থেকে ৩১ কোটি ছেলেশিশু, অর্থাৎ প্রতি ১১ জনে একজন, ১৮ বছর হওয়ার আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তথ্যটি জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন। এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ধর্ষণ, শারীরিক হয়রানি, যৌন হেনস্তা এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন।
আসকের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই দেশে ৩৬টি ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ২৪টির মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি ধর্ষণচেষ্টা ও একাধিক মৌখিক হয়রানির ঘটনাও নথিবদ্ধ হয়েছে। তবে প্রকৃত ঘটনার কম অংশই নথিবদ্ধ হওয়ার কারণে প্রকৃত চিত্রের ধারণা পাওয়া কঠিন।
আইন বিশ্লেষক আনিসুর রহমান বলেছেন, ছেলেশিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা গোপন থাকে মূলত আইনের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক লজ্জা বা ধর্মীয় ট্যাবুর কারণে। বাংলাদেশের বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী ধর্ষণের সংজ্ঞা কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে ছেলেশিশুরা আইনগতভাবে ধর্ষণের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে বিবেচিত হয় না। এটি একধরনের আইনি ফাঁক। এর সুযোগ নেয় দুর্বৃত্তরা।
অধিকাংশ ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে মাদ্রাসা, এতিমখানা বা আবাসিক প্রতিষ্ঠানে। সেখানে শিক্ষক বা বড় ছাত্ররাই হয় অপরাধী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩-২০২৪ সালে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহসহ অন্তত আটটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেশিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
ছেলেশিশুর ধর্ষণের ঘটনা এই সমাজ লুকিয়ে রাখতে চায়। অধিকারকর্মী শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের সমাজে ছেলেশিশুরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে, এটা এখনো একটি নিষিদ্ধ আলোচনা। অথচ পেডোফাইলরা জানে, এই নীরবতাই তাদের সবচেয়ে বড় ঢাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে স্কুল, মাদ্রাসা ও হোস্টেলে বাধ্যতামূলক যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তা বাস্তবায়ন করেনি।’
এই বিষয়ে দেশের আইনও দ্বিধান্বিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ছেলেশিশু ধর্ষণের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ভাষা নেই। ফলে আইনগত সংজ্ঞাতেই ছেলেশিশুরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে–এই বাস্তবতাটুকু স্বীকৃতি পায় না।’
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমে বাড়ছে। কিন্তু এর পেছনের নানা কারণ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখানে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। শাশ্বতী বিপ্লবের মতে, ‘দেশে প্রচুর পেডোফাইল রয়েছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় তারা নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা যখন দুর্বল, তখন শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়।’
২০২৩ সালের নভেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় প্রকাশিত গবেষণা বলছে, নির্যাতনকারীরা শিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে যৌনতৃপ্তি লাভ করেন এবং নিজেদের পৌরুষত্বের প্রমাণ দিতে চাইতে পারেন। এ ছাড়া শিশুর বাহ্যিক সৌন্দর্যও অনেক সময় নির্যাতনের জন্য একটি কারণ হিসেবে কাজ করে।
তবে স্ট্রিমকে এই বিষয়ে মোনাকেব বাহার বলেন, শিশু ধর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচারহীনতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দায়ের করা অভিযোগগুলো স্থানীয় প্রভাবের চাপে তুলে নেওয়া হয়। ফলে অভিযুক্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খালাস পেয়ে যায়। তাঁর মতে, শিশুর বসবাসের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সুবিধাবঞ্চিত, গরিব বা বিপজ্জনক এলাকায় থাকা শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য ও নিরাপত্তার অভাব শিশুদের সুরক্ষায় বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং বৈরী মনোভাবও শিশু ধর্ষণের অন্য কারণ। এমন পরিস্থিতিতে শিশুর নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায়। এর সুযোগ নেয় দুর্বৃত্তরা।
অধিকারকর্মীরা মনে করেন, শিশুদের যৌন সহিংসতা রোধে শুধু আইন থাকলেই যথেষ্ট নয়। দরকার এর বাস্তব প্রয়োগ। সেই সঙ্গে সচেতনতা এবং পারিপার্শ্বিক সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনও জরুরি। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবক, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
গত এক মাসের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ বছরের কম বয়সী অন্তত সাতজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে সব ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে জানা গেছে যে অভিযুক্তদের অধিকাংশই শিশুদের পরিচিতজন। কেউ প্রতিবেশী, কেউবা নিকটাত্মীয়।
গত সোমবার রাতে (১৪ জুলাই) ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ বছর বয়সী এক পথশিশু রাজধানীর মহাখালীতে ক্যানসার হাসপাতালের পাশের গলিতে। শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে পরদিন মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আট বছরে দেশে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হয়েছে ৩ হাজার ৪ শ ৩৮টি মামলা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্তত ৫৩৯ জনের বয়স ছিল ৬ বছরের নিচে। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ছিল ৯৩৩ শিশু। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, শিশুদের ওপর সংঘটিত যৌন নির্যাতনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী হন তাদের পরিচিত কেউ।
নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর মোনাকেব বাহার। তিনি এই প্রসঙ্গে স্ট্রিমকে বলেন, আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের প্রতি যে স্বাভাবিক আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে, সেটিকেই অনেক সময় নিপীড়নকারীরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রচলিত আইনের কার্যকর প্রয়োগ না হলে শিশুদের প্রতি এমন সহিংসতা আরও বাড়তে পারে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, দেশে সংঘটিত শিশু যৌন নির্যাতনের প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী শিশুর আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা বিশ্বাসভাজন কেউ। ২০২০ সালে প্রকাশিত 'চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এক গবেষণাতেও বলা হয়, পরিচিতরাই বেশিরভাগ শিশুর ওপর যৌন-নিপীড়ন করে।
অধিকারকর্মী শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘শিশুরা যাদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে, যেমন মামা, কাকা বা অন্য আত্মীয়–তারাই অনেক সময় এই বিশ্বাসের সুযোগ নেয়। পরিবারও সাধারণত এই আত্মীয়দের নিয়ে সন্দেহ করে না। ফলে পেডোফাইলরা (শিশুকামী) অনায়াসে শিশুদের মানসিক বা শারীরিকভাবে নিপীড়নের সুযোগ পেয়ে যায়।’
শিশু যৌন সহিংসতার আলোচনায় মেয়েশিশুদের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায় বেশি। ছেলেশিশুরা সেই তুলনায় উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেশিশুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও যৌন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ২৪ থেকে ৩১ কোটি ছেলেশিশু, অর্থাৎ প্রতি ১১ জনে একজন, ১৮ বছর হওয়ার আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তথ্যটি জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন। এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ধর্ষণ, শারীরিক হয়রানি, যৌন হেনস্তা এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন।
আসকের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই দেশে ৩৬টি ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ২৪টির মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি ধর্ষণচেষ্টা ও একাধিক মৌখিক হয়রানির ঘটনাও নথিবদ্ধ হয়েছে। তবে প্রকৃত ঘটনার কম অংশই নথিবদ্ধ হওয়ার কারণে প্রকৃত চিত্রের ধারণা পাওয়া কঠিন।
আইন বিশ্লেষক আনিসুর রহমান বলেছেন, ছেলেশিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা গোপন থাকে মূলত আইনের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক লজ্জা বা ধর্মীয় ট্যাবুর কারণে। বাংলাদেশের বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী ধর্ষণের সংজ্ঞা কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে ছেলেশিশুরা আইনগতভাবে ধর্ষণের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে বিবেচিত হয় না। এটি একধরনের আইনি ফাঁক। এর সুযোগ নেয় দুর্বৃত্তরা।
অধিকাংশ ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে মাদ্রাসা, এতিমখানা বা আবাসিক প্রতিষ্ঠানে। সেখানে শিক্ষক বা বড় ছাত্ররাই হয় অপরাধী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩-২০২৪ সালে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহসহ অন্তত আটটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেশিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
ছেলেশিশুর ধর্ষণের ঘটনা এই সমাজ লুকিয়ে রাখতে চায়। অধিকারকর্মী শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের সমাজে ছেলেশিশুরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে, এটা এখনো একটি নিষিদ্ধ আলোচনা। অথচ পেডোফাইলরা জানে, এই নীরবতাই তাদের সবচেয়ে বড় ঢাল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে স্কুল, মাদ্রাসা ও হোস্টেলে বাধ্যতামূলক যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তা বাস্তবায়ন করেনি।’
এই বিষয়ে দেশের আইনও দ্বিধান্বিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ছেলেশিশু ধর্ষণের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ভাষা নেই। ফলে আইনগত সংজ্ঞাতেই ছেলেশিশুরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে–এই বাস্তবতাটুকু স্বীকৃতি পায় না।’
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমে বাড়ছে। কিন্তু এর পেছনের নানা কারণ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখানে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। শাশ্বতী বিপ্লবের মতে, ‘দেশে প্রচুর পেডোফাইল রয়েছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় তারা নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা যখন দুর্বল, তখন শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়।’
২০২৩ সালের নভেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় প্রকাশিত গবেষণা বলছে, নির্যাতনকারীরা শিশুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে যৌনতৃপ্তি লাভ করেন এবং নিজেদের পৌরুষত্বের প্রমাণ দিতে চাইতে পারেন। এ ছাড়া শিশুর বাহ্যিক সৌন্দর্যও অনেক সময় নির্যাতনের জন্য একটি কারণ হিসেবে কাজ করে।
তবে স্ট্রিমকে এই বিষয়ে মোনাকেব বাহার বলেন, শিশু ধর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচারহীনতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দায়ের করা অভিযোগগুলো স্থানীয় প্রভাবের চাপে তুলে নেওয়া হয়। ফলে অভিযুক্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খালাস পেয়ে যায়। তাঁর মতে, শিশুর বসবাসের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সুবিধাবঞ্চিত, গরিব বা বিপজ্জনক এলাকায় থাকা শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য ও নিরাপত্তার অভাব শিশুদের সুরক্ষায় বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং বৈরী মনোভাবও শিশু ধর্ষণের অন্য কারণ। এমন পরিস্থিতিতে শিশুর নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায়। এর সুযোগ নেয় দুর্বৃত্তরা।
অধিকারকর্মীরা মনে করেন, শিশুদের যৌন সহিংসতা রোধে শুধু আইন থাকলেই যথেষ্ট নয়। দরকার এর বাস্তব প্রয়োগ। সেই সঙ্গে সচেতনতা এবং পারিপার্শ্বিক সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনও জরুরি। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবক, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিলের ঘোষণা এলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেছাত্রলীগের মতো ছাত্রশিবিরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক সংগঠনগুলো দখল করে নিচ্ছে। নানা সমালোচনার পরও থাকবে ছাত্রদলের হল কমিটি। উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাংবাদিকদের এসব জানিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেশুক্রবারের মধ্যে আন্দোলন বন্ধ না হলে শনিবার থেকে তাঁরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শেবাচিম কর্মচারীদের সংগঠন।
৪ ঘণ্টা আগেবুধবার রাতেই সাড়ে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থানে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সাদাপাথরবাহী আরও ১৩০টিরও বেশি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই পাথরগুলোও আগের জায়গায় বিছিয়ে রাখা হবে।
৫ ঘণ্টা আগে