leadT1ad

সাড়ে ৯ হাজার শব্দের জুলাই সনদে ‘নারী’ পেল আড়াই শ

পুরো খসড়ায় ‘নারী’ শব্দটি এসেছে ১৪ বার। তার মধ্যে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও হতাহতের বর্ণনায় দুবার এবং ‘জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে ৯ বার। এ ছাড়া আরও অন্তত তিনবার নারীদের প্রসঙ্গ এসেছে।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
জুলাই আন্দোলনে নারীরা সব ধরনের বিপ্লবী কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্ট্রিম গ্রাফিক

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর চূড়ান্ত খসড়ায় মোট অনুচ্ছেদ রয়েছে ৮৪টি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিয়ে মুহূর্তেই গণনা করে পাওয়া গেল, এতে শব্দ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। আর এরমধ্যে জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ রাখা হয়েছে। ২৪তম সেই অনুচ্ছেদটির শিরোনাম ‘জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান’। এই অনুচ্ছেদে সবমিলিয়ে শব্দ সংখ্যা প্রায় আড়াই শ।

পুরো খসড়ায় নারী শব্দটি এসেছে ১৪ বার। তার মধ্যে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও হতাহতের বর্ণনায় দুবার এবং ‘জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে ৯ বার। এ ছাড়া আরও অন্তত তিনবার নারীদের প্রসঙ্গ এসেছে। এরমধ্যে ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনসভা গঠনের প্রস্তাবনার (ঘ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করিবে। তালিকায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী থাকিতে হইবে।’

আর ‘দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ’ প্রসঙ্গে ৫৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারসহ পাঁচ জনের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী হবেন।

‘দুদকের কমিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা’ শীর্ষক ৭৬ নম্বর অনুচ্ছেদে আরেকবার ‘নারী’ শব্দটি এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের ৫(১) ধারা সংশোধন করে ন্যূনতম একজন নারীসহ দুর্নীতি দমন কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করা হবে।

‘জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান’

২৪তম এই অনুচ্ছেদটির মূল প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে করার লক্ষ্যে বিধান করা হবে। এ বিষয়ে ২৯টি দল ও জোট একমত হয়েছে বলেও জানিয়েছে কমিশন।

খসড়া সনদে কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলো মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত— সংরক্ষিত নারী আসন এবং সরাসরি নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো।

সংরক্ষিত নারী আসন

সনদের খসড়ার ২৪তম অনুচ্ছেদের ‘ক’ ও ‘ঙ’ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত নারী আসন প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— বিদ্যমান সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

আর (ঙ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— সংবিধানে বর্ণিত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন অব্যাহত রেখে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনী (যা ৮ জুলাই ২০১৮ সালে সংসদে পাস হয়) এর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়, হিসাব অনুযায়ী তা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে; তবে সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোয়নের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থিতার লক্ষ্য ২০৪৩ সালের আগেই যদি অর্জিত হয়ে যায়, তাহলে সংবিধানের সপ্তদশ (১৭তম) সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধান নির্ধারিত সময়ের আগেই বাতিল হয়ে যাবে।

সরাসরি নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ

সনদের একটি প্রধান প্রস্তাব হলো, সংসদে সরাসরি নির্বাচিত নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, সনদ সইয়ের পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ৩০০টি আসনের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে এই হার প্রতি নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না সরাসরি নির্বাচিত নারী প্রার্থীর হার ৩৩ শতাংশে পৌঁছায়।

যদি ২০৪৩ সালের আগেই সরাসরি নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়, তবে সংরক্ষিত নারী আসনের বিধানটি নির্ধারিত সময়ের আগেই বাতিল হয়ে যাবে।

এই প্রস্তাবগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে। কমিশন বলছে, এর মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে লিঙ্গ সমতা আনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ আরও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা।

আপত্তি ও ঐক্যমত

এ বিষয়ে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে তিনটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’-ও দিয়েছে। দলগুলো হলো- আম জনতার দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ।

‘আপত্তি’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্ট্রিমকে বলেন, ‘জুলাই সনদে যা আছে— তাতে আমরা একমত নই। নারী আসনের সংখ্যা ১০০ করতে হবে ও সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনোটা আমরা গ্রহণ করব না।’

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা চাই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত হোক এবং তাদের সরাসরি নির্বাচন হোক। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক দায়বোধ বাড়বে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল— তিনটা সাধারণ আসন মিলে একটা সংরক্ষিত আসন হবে। আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল— সংসদের ৩০০ আসনকে ৪০০-তে উন্নীত করা এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০ রাখা; যেখানে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। তবে আমরা মনে করি, এটা এ বছরের নির্বাচনের জন্য ঝামেলাপূর্ণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী। তারা কেন পিছিয়ে থাকবেন? আমরা চাই সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ুক। রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব ২০০৮ সাল থেকে কোনো দলই বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত