leadT1ad

রোড ডাইভারশন: কেমন ফল পাচ্ছে ঢাকাবাসী

আবদুল্লাহ কাফিঢাকা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ২৮
যানজট কমাতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দেওয়া হয়েছে রোড ডাইভারশন। স্ট্রিম ছবি

রাস্তা মেরামত, নির্মাণকাজ, দুর্ঘটনা, বিশেষ অনুষ্ঠান অথবা যানজট নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয় রোড ডাইভারশন। গত এক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। যানজট কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণী, ধানমন্ডি-২৭, বসিলা তিন রাস্তা ও যাত্রাবাড়ি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। এসব ডাইভারশন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত জানিয়েছে প্রশাসন, চালক ও যাত্রীরা।

চালকদের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

রাজধানীতে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক, চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা বলে ডাইভারশনের বিষয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া জানা গেছে। কেউ বলছেন যানজট কমেছে। কেউ জানিয়েছেন বেড়েছে। আবার অনেকের মতে পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।

৮ নম্বর বাস নামে পরিচিত গাবতলী লিঙ্ক রোড যাত্রাবাড়ী থেকে শাহবাগ, আসাদগেট হয়ে গাবতলী পর্যন্ত যাতায়াত করে। এই বাসের একজন চালক মোহাম্মদ মামুন। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘যানজট আগের তুলনায় একটু কমেছে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ির বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। আগে ওই এলাকায় গেলেই ঘণ্টা পার হয়া যাইত। বসে থাকতে হইত। এখন আগের চে কম সময় লাগে।’

সদরঘাট থেকে নিউমার্কেট, সাভার হয়ে চন্দ্রা রোডে যাতায়াত করে সাভার পরিবহন। এই পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন রাসেল। চার বছরের অভিজ্ঞাতার কথা জানিয়ে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাগো রোডেও ডাইভারশন দিছে। আগে যেইখানে সোজা যাইতাম, ওইখানে ঘুইরা যাইতে হয়। ইউটার্ন নিতে গিয়া জ্যামেই পড়তে হয়। যানজট আসলে কমে নাই। অনেক জায়গায় বাড়ছে। উল্টা তেল বাড়তি লাগে। যাত্রীও কম পাই।’

সিএনসি অটোরিকশাচালক রুবেল স্ট্রিমকে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় যানজট কমছে। কিছু জায়গায় জায়গায় আগের মতোই আছে। তবে মুহাম্মদপুরের বসিলায় আগে গেলেই আধা ঘণ্টা নাই হয়া যাইতো। এখন একটু কম সময় লাগে।’

রাজধানীতে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক, চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা বলে ডাইভারশনের বিষয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া জানা গেছে। কেউ বলছেন যানজট কমেছে। কেউ জানিয়েছেন বেড়েছে। আবার অনেকের মতে পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।

ভিন্নমত যাত্রীদের

চালকদের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন রোডের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাইভারশনের ফালে যানজট কমেছে।

বছিলা থেকে কারওয়ান বাজারে অফিস করেন রিতু। তিনি বাসেই যাতায়াত করেন। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আগে বসিলা মোড়ে চারপাশ থেকে গাড়িগুলো এসে আটকে যেত। কোনো গাড়িই বের হতে পারত না। এখন সে সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে।

নিয়মিত বিজয় সরণি রোড ব্যবহার করেন ব্যবসায়ী আসিফ। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি বাইকার। অন্য গাড়ির তুলনায় বাইকে থাকলে জ্যামে একটু কম পড়তে হয়। কিন্তু বিজয় সরণি ভিন্ন বিষয়। কোনোদিন সিগন্যাল ছাড়া এই মোড় পার হতে পারি নাই। এখানে ডাইভারশন দেওয়ার ফলে একেবারে সিগন্যাল পড়ছে না, তা না। তবে আগের তুলনায় সময়টা কমে এসেছে।’

যানজট কমেছে বলে দাবি পুলিশের

মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসলাম সাগর স্ট্রিমকে বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর মূলত এই ডাইভারশনগুলো দেওয়া হয়েছে। আমি মোহাম্মদপুর জোনে যোগ দেওয়ার পর প্রথম ডাইভারশন দিই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আসাদ গেটে দুইটা সিগন্যাল পড়ত। এখন মানিক মিয়াতে আর সিগন্যাল পড়ে না। একটু ঘুরে ইউটার্ন নিতে হয়। ফলে আর কাউকে বসে থাকতে হয় না।’

আসলাম সাগর আরও বলেন, ‘বসিলা তিন রাস্তার প্রজেক্টটা ছিল আমাদের ড্রিম প্রজেক্ট। গত মে মাসে সেটাও আমরা করতে পেরেছি। এতে আমরা খুব ভালো ফলাফল পাচ্ছি। এখন আগের মতো যানজট আছে, তা না। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটা ভেঙ্গে গেছে। পানিনিষ্কাশনের পাইপটাও ভেঙে গেছে। ফলে পানিনিষ্কাশনটা হচ্ছে না। আমরা সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তাঁরা কাজটা দ্রুত করে দেবেন।’

রোড ডাইভারশনের ফলাফল ভালো হলেও এতে ঢাকার যানজট পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।

বাসচালকদের যানজট না কমার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসলাম সাগর বলেন, ‘বাসচালকদের কাছ থেকে আপনি স্যাটিসফেক্টরি অ্যানসার পাবেন না। কারণ, সিগন্যাল পড়লে তাঁরা খুশি হয়। তাঁরা চিন্তা করে, মানিক মিয়ায় সিগন্যাল পড়লে সে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারত। আরও কিছু যাত্রী পেত। অ্যানসার পাবেন যাঁর কাছে সময়ের মূল্য আছে। যাঁর কাছে টাইম ইজ মানি।’

ডাইভারশনগুলো কীভাবে তৈরি করেন প্রশ্ন করলে আসলাম সাগর বলেন, ‘আমরা এখন সিমেন্টের কোন, রোড ডিভাইডার, বাঁশ, দড়ি দিয়ে কাজগুলো করছি। আমার হাতিয়ার এগুলোই। তবে কিছু করার নেই। কারণ, সিটি করপোরেশন একভাবে প্ল্যান করে। তাঁদের প্ল্যান ভালো কিন্তু আমাদের প্রয়োজনে অনেক সময় অলটারনেট করতে হয়। কারণ, সিটি যখন প্ল্যান করেছে, তখন ঢাকায় এত গাড়ি ছিল না।’

যানজট কমাতে প্রয়োজন আরও উদ্যোগ

রোড ডাইভারশনের ফলাফল ভালো হলেও এতে ঢাকার যানজট পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার এক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্ট্রিমকে বলেন, ‘ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে। দিন দিন গাড়ি বাড়ছে। সে তুলনায় রাস্তা তো বাড়ছে না। ফলে নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। গণপরিবহন বাড়াতে হবে। তা না হলে ঢাকার যানজট কোনোভাবেই কমানো সম্ভব হবে না।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘যে কম জানে, সেই এক্সপেরিমেন্ট করে। আমাদের দেশের দায়িত্বশীলদের কিছু একটা মনে হয় বা কোথাও কিছু দেখে আসে তারপরই সেটা নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড করে ফেলে। তাই সবার আগে আমাদের সায়েন্সটা বুঝতে হবে। ঢাকা শহরের মতো মেগা সিটি চালাতে অন্তত তিন থেকে চার হাজার ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের একজনও নেই।’

শামসুল হক বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের কাঠামোগত সংস্কার করে যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দিতে হবে। যার কাজ যেটা, তাকে দিয়েই সেটা করাতে হবে। আমাদের এখানে সবচে বড় সমস্যা হলো, ট্যাকনিক্যাল সব কাজ করানো হয় ননট্যাকনিক্যাল লোকদের দিয়ে। এভাবে চলতে থাকতে ঢাকা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কখনো বের হতে পারেবে না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত