leadT1ad

জুনে সড়কে প্রাণ গেল ৬৯৬ জনের

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম গ্রাফিক

গত জুন মাসে সারা দেশে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৯৬ জন, যা গত মে মাসের তুলনায় ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিন গড়ে সড়কে প্রাণ গেছে ২৩ জনেরও বেশি মানুষের। এই এক মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ বুধবার (২ জুলাই) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফাউন্ডেশনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে—মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৮ জন, বাসের যাত্রী ৬৩ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-রোড রোলার আরোহী ৫৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২২ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৫১ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম) ৪৪ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৯৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৩টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি গ্রামীণ সড়কে, ৮৭টি শহরের সড়কে এবং ৪টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ১৬৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩০৬টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৪টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৭৬টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পুলিশ সদস্য ৬ জন, সেনা সদস্য ১ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, ইন্টার্ন চিকিৎসক ১ জন, পল্লী চিকিৎসক ৪ জন, প্রকৌশলী ৩ জন, আইনজীবী ২ জন, সাংবাদিক ৩ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৬ জন, পাউবি’র কর্মকর্তা ১ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৭ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২১ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮ জন, গরু ব্যবসায়ী ১৪ জন, ইউপি সদস্য ১ জন, পোশাক শ্রমিক ৮ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৪ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৫ জন, রাজমিস্ত্রি ২ জন, রঙ মিস্ত্রি ১ জন, থাই মিস্ত্রি ১ জন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ১ জন, বেদে সম্প্রদায়ের নারী ২ জন, প্রতিবন্ধী ৩ জন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, সরকারি বাংলা কলেজের ১ জন-সহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের ৯৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য নিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সে জন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে। আইআরএপির (ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম) পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে সম্পদের ক্ষতির আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত