leadT1ad

কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদী

পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি, পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ

দৌলতপুরের দুই ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ওই এলাকায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি।

স্ট্রিম সংবাদদাতাকুষ্টিয়া
সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। স্ট্রিম ছবি

কুষ্টিয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি। এতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নতুন নতুন এলাকা। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ওই এলাকায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) পদ্মা নদীর পানি আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। আগের দিন বুধবার পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। একই দিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার।

বিপৎসীমার এক মিটার নিচে পানি

ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে, বুধবার পর্যন্ত পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার নতুন করে বেড়েছে আরো ৪ সেন্টিমিটার পানি। ফলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে আগের দিনের চেয়ে দশমিক ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বুধবার পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এ ছাড়া গড়াই নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবারের চেয়ে দশমিক ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে নদীর পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটারে। নতুন করে পানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। স্ট্রিম ছবি
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। স্ট্রিম ছবি

চরাঞ্চলে পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ

পানি বাড়ায় জেলার দৌলতপুর ‍উপজেলার ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর চরাঞ্চলে তলিয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ ফসলিজমি। প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের খেতে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বহু রাস্তাঘাট। এ ছাড়া চরের বাথান ভেঙে পড়ায় গরু-মহিষ নিয়ে সবাই ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।

পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না তারা। যদিও অনেকের বসতবাড়িতে পানি ওঠেনি, তবে বন্যার শঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিলমারী ইউনিয়নের নিচু এলাকা মানিকের চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ঘরবাড়ি প্লাবিত না হলেও সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গোখাদ্যেরও চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, নদীর ওপারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের অধিকাংশই পানিবন্দী। ঘরবাড়িতে এখনও পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল ডুবে গেছে।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

উপজেলা থমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়ে। বাকিগুলো সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা করছি। তাদের প্রয়োজন হলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। পানি আরও বাড়তে পারে। এ জন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত