leadT1ad

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ

স্ট্রিম ডেস্ক
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা দেশ অচল করে দিয়েছেন। আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার (১৭ আগস্ট) অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ ছিল গত ২২ মাসের যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও তীব্র প্রতিবাদ। জিম্মিদের পরিবারের নেতৃত্বে আয়োজিত এ বিক্ষোভে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেয় বলে দাবি করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা আজ সোমবার এক প্রতিবেদন এসব তথ্য জানিয়েছে।

গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নতুন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ঘিরে ইসরায়েলে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এতে এখনো জীবিত থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন আরও বিপন্ন হতে পারে। বর্তমানে ৫০ জন জিম্মির মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইয়েহুদা কোহেন নামের এক ব্যক্তির ছেলে নিমরোদ গাজায় বন্দি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—‘আমরা এমন এক অবস্থার মধ্যে আছি, যেখানে একদিকে আমাদের সন্তানদের আটকে রেখেছে সন্ত্রাসী সংগঠন, আর অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে তাদের মুক্তি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাচ্ছে না সরকার।’

এমনকি কয়েকজন সাবেক ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা প্রধানও এখন যুদ্ধ শেষ করতে সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছেন।

দেশজুড়ে অবরোধ ও গ্রেপ্তার

প্রতিবাদকারীরা রাজনীতিবিদদের বাড়ির সামনে, সামরিক সদরদপ্তরে এবং মহাসড়কগুলোতে অবস্থান নেন। তারা সড়ক অবরোধ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেন। সংহতি জানিয়ে বন্ধ রাখা হয় কিছু রেস্তোরাঁ ও থিয়েটার। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একজন বিক্ষোভকারী গাজার খাবারের অভাবে এক ক্ষীণকায় শিশুর ছবি বহন করছিলেন। একসময় ইসরায়েলে এমন ছবি দেখা যেত না। কিন্তু এখন তা ক্রমেই বাড়ছে। কারণ গাজায় অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৫০ ছাড়ানোর পর পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলি সমাজেও ক্ষোভ বাড়ছে।

নেতানিয়াহুর অনড় অবস্থান

যুদ্ধের ইতি ঘটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিকে তার জোটে বিদ্রোহ ঠেকাতে চাইছেন। অন্যদিকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন। তিনি বলেছেন—‘আজ যারা হামাসকে না হারিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে চাইছেন, তারা শুধু হামাসের অবস্থানকে শক্ত করছেন। জিম্মিদের মুক্তি বিলম্বিত করছেন। শুধু তাই নয়, সেইসঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ভয়াবহতা আবারও ফিরে আসবে তা নিশ্চিত করছেন।’

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ রোববারের বিক্ষোভকে আখ্যা দিয়েছেন—‘একটি ক্ষতিকর প্রচারণা। এরা হামাসের হাতের পুতুল। এরা চায় ইসরায়েল আত্মসমর্পন করুক। দেশটির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ুক।’

এদিকে নেতানিয়াহু সরকার নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে। আর সেটা হলে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকা হতে পারে। নতুন আরও বিস্তৃত যুদ্ধে সন্তানদের অংশগ্রহণ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইসরায়েলের মানুষ।

গাজায় নতুন হত্যাযজ্ঞ

গাজার হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্তত ১৭ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা ফিলিস্তিনি গতকাল নিহত হয়েছেন। এরা জাতিসংঘের ত্রাণ ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

হামজা আসফুর নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি করিডরের উত্তর দিকে একটি কনভয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন ইসরায়েলি স্নাইপারেরা প্রথমে জনতা ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। তিনি অন্তত দু’জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন। ‘আমার তো মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। নয়তো আমার পরিবারকে অনাহারে মরতে হবে’, বলেন তিনি।

ইসরায়েলি সমর্থন ও মার্কিন সহায়তায় বিতরণকেন্দ্র পরিচালনাকারী গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন দাবি করেছে—তাদের কোনো কেন্দ্রে বা আশপাশে গুলি চালানো হয়নি। সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এই বিতরণকেন্দ্রগুলো মে মাস থেকে চালু আছে। বর্তমানে সেখান থেকেই অধিকাংশ ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

একই দিনে গাজা মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ শিবিরে একদল মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলায় আরও তিনজন নিহত হন বলে আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান বিমান ও স্থলযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৯০০ জন নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, এর অর্ধেকই নারী ও শিশু। ইসরায়েল এসব সংখ্যা মানতে অস্বীকৃতি জানালেও নিজেদের কোনো হিসাব তারা প্রকাশ করেনি।

এছাড়া রোববার অপুষ্টিজনিত কারণে আরও দুই শিশু ও পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মারা গেছেন। জাতিসংঘ ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞেরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির মাত্রা এখন সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। তখন থেকে খাদ্যসহ প্রায় সব রকম ত্রাণ বন্ধ আছে। পরে আংশিকভাবে ত্রাণ বিতরণ চালু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প।

আসন্ন নতুন অভিযান

ইসরায়েলি সেনারা কবে নতুন করে গাজা সিটি, মুওয়াসিতে অভিযান শুরু করবে এখনো নিশ্চিত নয়। মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, তারা মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দক্ষিণ গাজায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে তাতে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্টেরা। কারণ ঘোষিত ‘নিরাপদ অঞ্চলগুলোও’ যুদ্ধ চলাকালে একাধিকবার বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে।

নিরন্তর উদ্বাস্তু জীবনে ক্লান্ত ফিলিস্তিনিরা জানাচ্ছেন, তারা আর কোথাও যাবেন না। পশ্চিম গাজার এক স্কুলে আশ্রয় নেওয়া রাঘদা আবু দাহের বলেন—‘কোনো মানবিক অঞ্চল নেই। আমি যুদ্ধ চলাকালে ১০ বার স্থানান্তরিত হয়েছি। নিরাপত্তা কোথাও নেই।’

মোহাম্মদ আহমেদও একই কথা বলেছেন—‘এখানে যেমন বোমা পড়ছে, ওখানেও তেমনি পড়ছে। কোনো পার্থক্য নেই।’

ইয়েমেনে হামলা

রোববার ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানীতে বিমান হামলা চালায়। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে মিসাইল নিক্ষেপ ও লোহিত সাগরে জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে আসছে।

হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল সানহানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এ হামলা চালানো হয়েছে ইয়েমেন থেকে ছোড়া মিসাইল ও ড্রোনের প্রতিক্রিয়ায়।

কিছু মিসাইল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম হলেও অধিকাংশই আটকানো হয়েছে। রোববারও ইসরায়েলি সেনারা আরেকটি মিসাইল প্রতিহত করেছে বলে জানায়। অন্যদিকে হুথিরা দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল তেল আভিভের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর।

এপি নিউজ থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

Ad 300x250

সম্পর্কিত