যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ বা তারও কম করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেন ‘বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদির ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার? বাংলাদেশের বাণিজ্যে কেমন হতে পারে এর প্রভাব?
ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে এখন ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
প্রতিবেশী দেশ চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব বেশি মধুর নয়। ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে চীন ও ভারতের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। তবে গত মাসে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠকের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল কিনে পুতিনকে অর্থায়ন করবে, তাদের ওপরও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্যের আমদানির ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশে। যা চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি এবং পাকিস্তানের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার ভাষায়, দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিশ্বাসের মাত্রার ওপর অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে।
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসেই পুরোনো কৌশলে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ককে হাতিয়ার বানিয়ে শুরু করেছেন নতুন এক বাণিজ্যযুদ্ধ। তাঁর চোখে এটি শুধু অর্থনৈতিক নীতি নয়, বরং বহুমুখী লক্ষ্য অর্জনের কৌশল।
নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি দিয়ে সংশোধিত শুল্কহারের এ ঘোষণা দেয়। ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার ৬৯টি দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কহারের তালিকা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক
গত বছর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর গড়ে শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য থেকে এই শুল্কহারে শুল্ক আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্টের সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়েছে বলে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে তা নাকচ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
উচ্চ শুল্কহারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক নির্বাহী আদেশে প্রায় ৭০টি দেশের পণ্যে নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
মর্কিন শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে আরোপ করা হবে বলে আশা করেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তবে শুল্ক ২০ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং লাখ লাখ মানুষের জন্য সুখবর। আমরা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাও ধরে রেখেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগও তৈরি করেছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক বাস্তবায়ন করার পর তাঁর নিজ দেশেই তৈরি হয়েছে নানামুখী চাপ। বিশেষ করে, শুল্ক আরোপের সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে মার্কিনিদের ওপরেই। দেশটির কোম্পানিগুলো কীভাবে এই চাপ সামলাবে, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা আলোচনা
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তৃতীয় দফার বাণিজ্যিক আলোচনার প্রথম দিনেই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে সোমবার (২৯ জুলাই) শুরু হওয়া এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কমানোর বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ।