‘গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের জীবননাশের হুমকি ছিল বলেই সেনাবাহিনী তাঁদের নিরাপত্তা দিয়েছে। আমরা প্রাণ রক্ষার উদ্দেশ্যে ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।'
গোপালগঞ্জে মৃত্যু
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত পাঁচ ব্যক্তির ওপর থেকে মানুষের মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে গেছে।
গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ড. মো. আবু তারিককে সভাপতি করে এই তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতা
সংঘর্ষে নিহত দীপ্ত সাহাসহ চারজনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ও শেষকৃত্য করা হয়। তবে সোমবার তিনজনের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পাঁচ দিনে কয়েক দফায় ১৪৪ ধারা ও কারফিউ কাটিয়ে রবিবার (২০ জুলাই) রাত থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে গোপালগঞ্জের পরিবেশ। তবে শহর ও গ্রামের মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করছেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করেছে। এ দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার করছে না। বরং যারা অপরাধী, তাঁদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নগারিক কমিটির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রমজান মুন্সী (৩২) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের প্রতিবেদন ও সেনাবাহিনীর বিবৃতি
গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতায় ঘটনায় পৃথক বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। পুলিশ প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের হামলা ও সহিংসতা কি শুধু প্রতিপক্ষকে দমন আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফল, না কি এর পেছনে কাজ করেছে অন্য কিছু? এসব নিয়েই কথা বলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের হামলা ও সহিংসতা কি শুধু প্রতিপক্ষকে দমন আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফল, না কি এর পেছনে কাজ করেছে অন্য কিছু? এসব নিয়েই কথা বলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম।
এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে গোপালগঞ্জ তৈরি হয়েছিল রণক্ষেত্রে। শহরের প্রতিটি রাস্তায় রয়ে গেছে তার চিহ্ন। ভেঙে ফেলা তোরণ গেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ইট পাটকেলসহ ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করেছে গোপালগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায়, প্রত্যেক গ্রামে কর্মসূচি করব।’
স্ট্রিম এক্সপ্লেইন
শেখ হাসিনার সমর্থকেরা নিজেদের এ স্থানকে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনাই শুধু করেনি, প্রতিপক্ষ দলের কার্যক্রমকে তাদের প্রভাবের ওপর হুমকি হিসেবেও দেখেছেন। এমন মনোভাব আদতে শেখ পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত’ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদ।
গোপালগঞ্জে দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় কয়জন হতাহত হয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে এখনো তা জানানো হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম নানা সূত্রে হতাহতের তথ্য প্রচার করছে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।