আপনার ফেসবুক নিউজফিড ভ্যাকেশনের ছবি, রাজনৈতিক কাদা-ছোড়াছুড়ি আর আজেবাজে মিম—সবকিছুকে ভাসিয়ে একটি পবিত্র উচ্চারণে মুখরিত হতে শুরু করেছে ‘আলহামদুলিল্লাহ এ প্লাস!’
তাহমীদ চৌধুরী
আজ সেই বিশেষ দিন। দেশের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে যা-ই থাকুক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ নিশ্চিতভাবে একপশলা অভিনন্দনের বৃষ্টি নামবে। আশা করছি ইতিমধ্যেই আপনার ফেসবুক নিউজফিড ভ্যাকেশনের ছবি, রাজনৈতিক কাদা-ছোড়াছুড়ি আর আজেবাজে মিম—সবকিছুকে ভাসিয়ে একটি পবিত্র উচ্চারণে মুখরিত হতে শুরু করেছে ‘আলহামদুলিল্লাহ এ প্লাস!’
এই তিন শব্দের ডিজিটাল বিস্ফোরণ এতটাই সংক্রামক যে এর থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব। সদ্য এসএসসি পাস করা ১৬ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে ৯৬ সালে পাস করা সরকারি চাকুরিজীবী—সবাই যেন এক ঐশ্বরিক সংকেত পেয়ে একযোগে কিবোর্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রতিবছরের মতোই। এ প্লাস যারা পেয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস আর যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বহু যুগ আগে, তাঁদেরও স্ট্যাটাস। এমনকি, যাদের পরীক্ষা দেয়ার বয়স হয়নি, তারাও লিখছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, জিপিএ-৫’। এই যে এক সম্মিলিত জুনুন বা গণ-উন্মাদনা—এর মনস্তত্ত্বটা কী?
এই মহোৎসবে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, সত্যিকারের এসএসসি পরীক্ষার্থী, যারা গত দুই বছর ধরে গাইড বই, কোচিং সেন্টার আর অভিভাবকদের রক্তচক্ষুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এই ‘এ প্লাস’ নামক সোনার হরিণটি শিকার করেছে। তাদের স্ট্যাটাসটি স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস। অনেকটা এভারেস্ট জয়ের পর তার চূড়ায় দেশের পতাকা ওড়ানোর মতো। এই স্ট্যাটাস দিয়ে তারা বিশ্ববাসীকে জানায়, ‘সামাজিক চাপের এভারেস্ট আমি জয় করেছি। এখন আমাকে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য শান্তিতে টিকটক করতে দাও।’
আরেকটি দল ‘স্মৃতি রোমন্থনকারী’। এই দলে আছেন বুমার জেনারেশনের লোকজন। এসব পোস্টের মাধ্যমে তাঁরা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। নিজেদের প্রায় বুড়িয়ে যাওয়া যৌবনকে জানান দেন, ‘দেখো, আমরা এখনো তোমাদের জোকস বুঝি!’
আর এই গোলমালের ভিড়ে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র হলেন সেইসব আমজনতা, যাঁদের জীবনের সঙ্গে এসএসসির কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তাঁরা মজা করে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এবারও এ প্লাসটা মিস হলো না’। এই স্ট্যাটাসগুলো মূলস্রোতকে ব্যঙ্গ করার জন্যই লেখা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ব্যঙ্গ করতে গিয়ে তাঁরাও সেই স্রোতেরই অংশ হয়ে যান। ঠাট্টা করতে গিয়ে নিজেরাই বৃদ্ধি করেন স্রোতের আকার। অনেকটা আগুনে পেট্রল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টার মতো।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এই ঘটনাটি ‘সোশ্যাল কনটেজিয়ন’ বা সামাজিক সংক্রমণের উদাহরণ। যেকোনো আচরণ যখন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে এ নামেই ডাকা হয়। এখন এসএসসির ফলাফলের দিনে ‘এ প্লাস’ নিয়ে পোস্ট দেওয়াই অলিখিত নিয়ম। যাঁরা এর অংশ হন না, তাঁরা যেন ডিজিটাল সমাজে ব্রাত্য।
মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বের অন্য দেশেও একাডেমিক সাফল্য উদযাপিত হয়, কিন্তু এমন গণহারে একই স্ট্যাটাস দিয়ে কৃতজ্ঞতা ও বিদ্রূপের এমন অভিনব মিশ্রণ বিরল। এটি আমাদের উপমহাদেশের এক স্বতন্ত্র উদ্ভাবন।
যা-ই হোক, রাত পেরোলেই স্তিমিত হয়ে আসবে এই স্ট্যাটসের বর্ষণ। নিউজফিড আবার ফিরে যাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, কাপলদের ছবি আর রাজনৈতিক তর্কে। ততক্ষণের জন্য স্ক্রল করতে থাকুন। লাইক-কমেন্ট দিয়ে এই জাতীয় উৎসবে আপনার ডিজিটাল উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।
আজ সেই বিশেষ দিন। দেশের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে যা-ই থাকুক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ নিশ্চিতভাবে একপশলা অভিনন্দনের বৃষ্টি নামবে। আশা করছি ইতিমধ্যেই আপনার ফেসবুক নিউজফিড ভ্যাকেশনের ছবি, রাজনৈতিক কাদা-ছোড়াছুড়ি আর আজেবাজে মিম—সবকিছুকে ভাসিয়ে একটি পবিত্র উচ্চারণে মুখরিত হতে শুরু করেছে ‘আলহামদুলিল্লাহ এ প্লাস!’
এই তিন শব্দের ডিজিটাল বিস্ফোরণ এতটাই সংক্রামক যে এর থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব। সদ্য এসএসসি পাস করা ১৬ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে ৯৬ সালে পাস করা সরকারি চাকুরিজীবী—সবাই যেন এক ঐশ্বরিক সংকেত পেয়ে একযোগে কিবোর্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রতিবছরের মতোই। এ প্লাস যারা পেয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস আর যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বহু যুগ আগে, তাঁদেরও স্ট্যাটাস। এমনকি, যাদের পরীক্ষা দেয়ার বয়স হয়নি, তারাও লিখছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, জিপিএ-৫’। এই যে এক সম্মিলিত জুনুন বা গণ-উন্মাদনা—এর মনস্তত্ত্বটা কী?
এই মহোৎসবে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, সত্যিকারের এসএসসি পরীক্ষার্থী, যারা গত দুই বছর ধরে গাইড বই, কোচিং সেন্টার আর অভিভাবকদের রক্তচক্ষুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এই ‘এ প্লাস’ নামক সোনার হরিণটি শিকার করেছে। তাদের স্ট্যাটাসটি স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস। অনেকটা এভারেস্ট জয়ের পর তার চূড়ায় দেশের পতাকা ওড়ানোর মতো। এই স্ট্যাটাস দিয়ে তারা বিশ্ববাসীকে জানায়, ‘সামাজিক চাপের এভারেস্ট আমি জয় করেছি। এখন আমাকে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য শান্তিতে টিকটক করতে দাও।’
আরেকটি দল ‘স্মৃতি রোমন্থনকারী’। এই দলে আছেন বুমার জেনারেশনের লোকজন। এসব পোস্টের মাধ্যমে তাঁরা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। নিজেদের প্রায় বুড়িয়ে যাওয়া যৌবনকে জানান দেন, ‘দেখো, আমরা এখনো তোমাদের জোকস বুঝি!’
আর এই গোলমালের ভিড়ে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র হলেন সেইসব আমজনতা, যাঁদের জীবনের সঙ্গে এসএসসির কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তাঁরা মজা করে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এবারও এ প্লাসটা মিস হলো না’। এই স্ট্যাটাসগুলো মূলস্রোতকে ব্যঙ্গ করার জন্যই লেখা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ব্যঙ্গ করতে গিয়ে তাঁরাও সেই স্রোতেরই অংশ হয়ে যান। ঠাট্টা করতে গিয়ে নিজেরাই বৃদ্ধি করেন স্রোতের আকার। অনেকটা আগুনে পেট্রল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টার মতো।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এই ঘটনাটি ‘সোশ্যাল কনটেজিয়ন’ বা সামাজিক সংক্রমণের উদাহরণ। যেকোনো আচরণ যখন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে এ নামেই ডাকা হয়। এখন এসএসসির ফলাফলের দিনে ‘এ প্লাস’ নিয়ে পোস্ট দেওয়াই অলিখিত নিয়ম। যাঁরা এর অংশ হন না, তাঁরা যেন ডিজিটাল সমাজে ব্রাত্য।
মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বের অন্য দেশেও একাডেমিক সাফল্য উদযাপিত হয়, কিন্তু এমন গণহারে একই স্ট্যাটাস দিয়ে কৃতজ্ঞতা ও বিদ্রূপের এমন অভিনব মিশ্রণ বিরল। এটি আমাদের উপমহাদেশের এক স্বতন্ত্র উদ্ভাবন।
যা-ই হোক, রাত পেরোলেই স্তিমিত হয়ে আসবে এই স্ট্যাটসের বর্ষণ। নিউজফিড আবার ফিরে যাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, কাপলদের ছবি আর রাজনৈতিক তর্কে। ততক্ষণের জন্য স্ক্রল করতে থাকুন। লাইক-কমেন্ট দিয়ে এই জাতীয় উৎসবে আপনার ডিজিটাল উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। উপমহাদেশের অনেক মানুষের চোখে ঘুম ছিল না সেই রাতে। এমন রাত তাঁদের জীবনে আগে কখনো আসেনি। তাঁরা জানত না রাতের আঁধারে কেমন সকাল তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে। সাতচল্লিশের সেই দেশভাগ বা পার্টিশনের প্রভাব এখনো বহন করে চলেছি আমরা। একে কোনো একরৈখিক বয়ানে বেঁধে ফেলা দুষ্কর।
৯ ঘণ্টা আগেনব্বইয়ের ক্লান্তি কিংবা বার্ধক্য-জরায় যতীন স্যার কখনোই নিঃসঙ্গতায় ছিলেন না। বাংলার প্রাকৃতজনের দার্শনিক জ্ঞান ও শান্তির দ্রোণাচার্য যতীন সরকার জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাতপাই, রামকৃষ্ণ রোডের 'বানপ্রস্থ' নামের বাড়িতে মানুষের সান্নিধ্যেই থাকতেন।
১ দিন আগেতারেক মাসুদ নামটি খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে উচ্চারণ করা আমার জন্যে সহজ কাজ নয়। আমি তাঁর ছাত্র, অনুসারী, সহযোগী বা উত্তরসূরি হলেও অন্য অনেকের মতোই আমিও তাঁকে তারেক ভাই বলে ডাকতাম। কিন্তু এই ভাই ডাকার অভ্যস্ততা দীর্ঘদিনের অভ্যাসে এত গভীরে প্রোত্থিত যে আনুষ্ঠানিক কারণেও শুধু নামটি উচ্চারণে আমার অস্বস্তি হয়।
১ দিন আগেমাত্র ২৮ বছরের তরুণ ছিলেন আল-জাজিরার ফিলিস্তিনি প্রতিবেদক আনাস আল শরীফ। স্পষ্টতার সঙ্গে তুলে ধরতেন ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার অমানবিক রূপ। তাঁর প্রতিবেদনে প্রাণহীন শুষ্ক তথ্য ছাড়িয়ে উঠে আসত অবরুদ্ধ জীবনের নিখাদ ও অনাবৃত প্রতিচ্ছবি।
২ দিন আগে