leadT1ad

চবি ছাত্রী হলে রাত ১০টার আগে না ফিরলে সিট বাতিলের হুমকি

ছাত্রীদের একাংশ বলছেন, সহকারী প্রক্টরের এই আচরণ শুধু ‘হুমকি’ নয়, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের পুরুষতান্ত্রিক আচরণের ‘নগ্ন বহিঃপ্রকাশ’।

স্ট্রিম প্রতিবেদকচট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ১০
সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) রাত ১০টার মধ্যে হলে না ফিরলে ছাত্রীদের সিট বাতিল করবে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকায় মাইকে এই প্রচার চালানো হয়। এ সময় সেখানে বসে থাকা ছাত্রীদের উঠে হলে যেতেও বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসেইন।

এই ঘটনায় ছাত্রীদের একাংশ বলছেন, সহকারী প্রক্টরের এই আচরণ শুধু ‘হুমকি’ নয়, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের পুরুষতান্ত্রিক আচরণের ‘নগ্ন বহিঃপ্রকাশ’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর বসেন, আড্ডা দেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির একটি টহল গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে মাইকে উচ্চ শব্দে ঘোষণা করা হয়, ‘সব মেয়েরা ১০টার মধ্যে হলে ফিরে যাও। ১০টা ১ মিনিটে যদি কেউ বাইরে থাকে, তাহলে তার সিট বাতিল করা হবে।’

সেখানে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, ‘মনে হয়েছিল যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। আমাদের নাম-রোল লিখে নেওয়ার মতো ভঙ্গিতে এগিয়ে আসেন একজন সহকারী প্রক্টর। হাতে ছিল খাতা-কলম। যেন অপরাধ করছি বাইরে বসে!’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এগিয়ে আসা ওই সহকারী প্রক্টরের নাম নাজমুল হোসেইন। তিনি শুধু আড্ডা দিতে বসা ছাত্রীদের নয়, পথচারী ছাত্রীদেরও তাড়িয়ে দেন হলের দিকে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বলেন ‘নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকেই। প্রশ্ন তুলেন, রাত ১০টার পরও ছেলেরা হলে না ফিরলে কিছু হয় না, অথচ মেয়েদের সঙ্গে এমন ভয় ধরানো হয় কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কি কেবল মেয়েদের রাত ১০টার পর রাস্তায় থাকলেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে?

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসেইন বলেন, ‘আমি কড়া করে কিছু বলিনি। শুধু ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এ ধরনের কথা বলেছি। প্রচার চালানো হচ্ছে নিয়ম মানতে।’ তবে ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেননি।

অতীতেও হুঁশিয়ারি, বৈষম্যের শিকার ছাত্রীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের প্রতি কড়াকড়ি, হুঁশিয়ারি এবং ‘বৈষম্যমূলক’ নির্দেশনার এবারই প্রথম নয়। দায়িত্ব ও সময় বদলালেও বদলায়নি প্রশাসনিক মানসিকতা। প্রায়ই একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, যার শিকার হয়েছেন কেবল ছাত্রীরাই।

এর আগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আবাসিক হলগুলোর নোটিশ বোর্ডে টাঙানো এক নির্দেশনা বলা হয়, রাত ৯টার পর হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হল চত্বরের বাইরে থাকা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র আলোচনা শুরু হয়।

২০২০ সালে করোনা-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাস আবার খুলে দেওয়ার পর সহকারী প্রক্টরিয়াল টিম একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে। মৌখিকভাবে ছাত্রীদের জানানো হয়, রাত ৯টার পর যেন কেউ হলের বাইরে না থাকে। এমনকি দরকার হলে হলের গেটও বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধির দোহাই দিয়ে আসলে ছাত্রীদের ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে, ছেলেদের বেলায় এই নিয়ম কার্যকর হয়নি।

২০২২ সালে ঘটে আরেকটি বহুল আলোচিত ঘটনা। একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রাত ১০টার কিছু পরে হলে ফিরছিলেন এক ছাত্রী। তাঁকে প্রায় আধা ঘণ্টা গেটের বাইরে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে হলজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়, বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ছাত্রীরা। অবশেষে ঘটনার জেরে একজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষক বলেন, ‘ছাত্রীদের ব্যাপারে এই হুঁশিয়ারিগুলো আসলে গভীর এক মানসিকতার ফল, যেখানে নারীদের নিয়ন্ত্রণ করাকেই নিরাপত্তা ভাবা হয়। এটা একধরনের “ভিক্টিম ব্লেমিং” এর সংস্কৃতি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত