ফিরে দেখা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
স্ট্রিম প্রতিবেদক
২৪ জুলাই, ২০২৪। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরেছে গত রাতেই। কিন্তু বিশেষ কিছু জায়গায়। আর গতিও অত্যন্ত ধীর। ২৪ তারিখ থেকে বরং জায়গায় জায়গায় মানুষ কিছুটা ইন্টারনেট পেতে থাকে। তবে এর গতিও তথৈবচ। সেই ধীরগতির ইন্টারনেটের মধ্যেই সবাই একে একে জানাতে থাকেন গত পাঁচ দিনে নিজেদের দুর্বিষহ যত স্মৃতি।
ওইদিন রাতে মানুষ জানতে পারে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র কথা। জানান ফারিয়া উলফাত সৈয়দ। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সবিস্তারে তুলে ধরেন মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটেছিল প্রিয়র সঙ্গে। আর মৃত্যুর পরেই-বা কী ঘটে।
ফারিয়া লেখেন, ‘তাহির জামান প্রিয় ভাই গুলি খাওয়ার আগে আমার পাশেই ছিলেন। আমি, আমার ডান পাশে প্রিয় ভাই। গুলি খাওয়ার জাস্ট ১/২মিনিট আগেই আমাকে বলে ‘‘আমরা কিন্তু একসাথে থাকব।’’’
‘গুলিটা প্রিয় ভাইয়ার মাথায় লেগেছিল। গ্রিন রোডে ছিলাম আমরা, ল্যাবএইডের পিছে৷ দাঁড়ায়েই ছিলাম, নো স্লোগান, নো চিল্লাচিল্লি, নাথিং। টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেডের পরপর অ্যাকশানের পরেও ছিলাম। এক সময় দেখি গ্রিন রোডের একপাশে অনেক পুলিশ একদম রেডি। আমরা সবার সামনে পড়ে যাই। তখন আমরা সেন্ট্রাল রোডের মুখে, মানে গ্রিন রোডে। কানের পাশে প্রচন্ড আওয়াজ শুনি হঠাৎ। ভেবেছিলাম সাউন্ড গ্রেনেড, একটু দৌড় দিয়ে সেন্ট্রাল রোডে ঢুকে পিছে তাকাই, দেখি গ্রিন রোডে মানে ল্যাবএইডের ঠিক পিছে একপাশ থেকে পুলিশের ঘেরাও করা রাস্তায় একজন একটা বডি টেনে সেন্ট্রাল রোডে আনার চেষ্টা করছে আর হাত দিয়ে ডাকছে উনাকে হেল্প করতে।’ লেখেন ফারিয়া। তিনি তখনও জানেন না নিথর এই দেহ তাহির জামান প্রিয়র।
‘আমি সবার পিছে পড়ে যাওয়াতে দেখতে পাই৷ সাহস করে তাকে হেল্প করতে একটু কাছে যেতেই দেখি মানুষটার মাথার পিছনজুড়ে রক্ত, নিথর দেহ, মানুষটা প্রিয় ভাই। দুই মিনিট আগে আমাকে যে একসাথে থাকতে বললো। ভাইয়ার কাছাকাছি যেতেই আবার ফায়ারিং হলো। আর আমি এবার সত্যিকারের দৌড় দিলাম। দৌড়ানোর সময় তাকালাম পিছে, রাস্তায় ভাইয়া পড়ে আছে একলা, কিন্তু আনতে পারলাম না। ভাইয়ার লাশ কই আছে খুঁজতে খুঁজতে ওইদিন রাত ১২/১টা বেজেছে। ভাইয়ার মাথায় গুলি লাগে বিকাল ৫.০৩ মিনিট থেকে ৫.০৫ মিনিটের মধ্যে।’
গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়৷
আগের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তিন সমন্বয়কের। তাঁরা হলেন, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ।
২৪ তারিখে খোঁজ মেলে তিনজনেরই। ফেসবুক পোস্টে আসিফ ও বাকের জানান, তাঁদের চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
আসিফ মাহমুদ লেখেন, ১৯ জুলাই রাতে হাতিরঝিল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য নানারকম চাপ দেওয়া হয়। এই প্রস্তাব না মানায় অচেতন করে রাখা হয় ইনজেকশন দিয়ে। যতবার জ্ঞান ফেরে, ততবারই ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে রাখা হয়। পরে বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয় তাঁকে।
গুম হওয়ার কথা জানান আবু বাকেরও। অন্যদিকে রিফাত রশীদ জানান, তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি বেঁচে আছি, আমি মরি নাই। আমি গুম হতে হতে অল্পের জন্যই বেঁচে গিয়েছিলাম। আমাকে সিনিয়ররা বলেছিল একটা সেইফ জোনে যাও আপাতত। রাতে আমরা কানেক্টেড হয়ে আবারও আগামীকালের আন্দোলন কীভাবে কী হবে, তা নিয়ে কথা বলব। তারপর আর কোনোভাবেই কারো সাথে কানেক্ট করতে পারিনি। সারা দেশের সকল প্রকার কানেক্টিভিটির শাটডাউন।’
২৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এ সভায় তিনি হামলা ও নাশকতার জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করেন।
শেখ হাসিনা দাবি করেন, সরকার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করায় এরকম একটি আঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য তৈরি স্থাপনা নাশকতাকারীরা ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ সময় অনেক সাংবাদিক সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক দিনে ডিএমপির আওতাধীন এলাকায় ১ হাজার ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ কয়দিনে আন্দোলনকারীদের হামলায় পুলিশের ৬১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
২৪ জুলাই, ২০২৪। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরেছে গত রাতেই। কিন্তু বিশেষ কিছু জায়গায়। আর গতিও অত্যন্ত ধীর। ২৪ তারিখ থেকে বরং জায়গায় জায়গায় মানুষ কিছুটা ইন্টারনেট পেতে থাকে। তবে এর গতিও তথৈবচ। সেই ধীরগতির ইন্টারনেটের মধ্যেই সবাই একে একে জানাতে থাকেন গত পাঁচ দিনে নিজেদের দুর্বিষহ যত স্মৃতি।
ওইদিন রাতে মানুষ জানতে পারে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র কথা। জানান ফারিয়া উলফাত সৈয়দ। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সবিস্তারে তুলে ধরেন মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটেছিল প্রিয়র সঙ্গে। আর মৃত্যুর পরেই-বা কী ঘটে।
ফারিয়া লেখেন, ‘তাহির জামান প্রিয় ভাই গুলি খাওয়ার আগে আমার পাশেই ছিলেন। আমি, আমার ডান পাশে প্রিয় ভাই। গুলি খাওয়ার জাস্ট ১/২মিনিট আগেই আমাকে বলে ‘‘আমরা কিন্তু একসাথে থাকব।’’’
‘গুলিটা প্রিয় ভাইয়ার মাথায় লেগেছিল। গ্রিন রোডে ছিলাম আমরা, ল্যাবএইডের পিছে৷ দাঁড়ায়েই ছিলাম, নো স্লোগান, নো চিল্লাচিল্লি, নাথিং। টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেডের পরপর অ্যাকশানের পরেও ছিলাম। এক সময় দেখি গ্রিন রোডের একপাশে অনেক পুলিশ একদম রেডি। আমরা সবার সামনে পড়ে যাই। তখন আমরা সেন্ট্রাল রোডের মুখে, মানে গ্রিন রোডে। কানের পাশে প্রচন্ড আওয়াজ শুনি হঠাৎ। ভেবেছিলাম সাউন্ড গ্রেনেড, একটু দৌড় দিয়ে সেন্ট্রাল রোডে ঢুকে পিছে তাকাই, দেখি গ্রিন রোডে মানে ল্যাবএইডের ঠিক পিছে একপাশ থেকে পুলিশের ঘেরাও করা রাস্তায় একজন একটা বডি টেনে সেন্ট্রাল রোডে আনার চেষ্টা করছে আর হাত দিয়ে ডাকছে উনাকে হেল্প করতে।’ লেখেন ফারিয়া। তিনি তখনও জানেন না নিথর এই দেহ তাহির জামান প্রিয়র।
‘আমি সবার পিছে পড়ে যাওয়াতে দেখতে পাই৷ সাহস করে তাকে হেল্প করতে একটু কাছে যেতেই দেখি মানুষটার মাথার পিছনজুড়ে রক্ত, নিথর দেহ, মানুষটা প্রিয় ভাই। দুই মিনিট আগে আমাকে যে একসাথে থাকতে বললো। ভাইয়ার কাছাকাছি যেতেই আবার ফায়ারিং হলো। আর আমি এবার সত্যিকারের দৌড় দিলাম। দৌড়ানোর সময় তাকালাম পিছে, রাস্তায় ভাইয়া পড়ে আছে একলা, কিন্তু আনতে পারলাম না। ভাইয়ার লাশ কই আছে খুঁজতে খুঁজতে ওইদিন রাত ১২/১টা বেজেছে। ভাইয়ার মাথায় গুলি লাগে বিকাল ৫.০৩ মিনিট থেকে ৫.০৫ মিনিটের মধ্যে।’
গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়৷
আগের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তিন সমন্বয়কের। তাঁরা হলেন, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ।
২৪ তারিখে খোঁজ মেলে তিনজনেরই। ফেসবুক পোস্টে আসিফ ও বাকের জানান, তাঁদের চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
আসিফ মাহমুদ লেখেন, ১৯ জুলাই রাতে হাতিরঝিল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য নানারকম চাপ দেওয়া হয়। এই প্রস্তাব না মানায় অচেতন করে রাখা হয় ইনজেকশন দিয়ে। যতবার জ্ঞান ফেরে, ততবারই ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে রাখা হয়। পরে বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয় তাঁকে।
গুম হওয়ার কথা জানান আবু বাকেরও। অন্যদিকে রিফাত রশীদ জানান, তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি বেঁচে আছি, আমি মরি নাই। আমি গুম হতে হতে অল্পের জন্যই বেঁচে গিয়েছিলাম। আমাকে সিনিয়ররা বলেছিল একটা সেইফ জোনে যাও আপাতত। রাতে আমরা কানেক্টেড হয়ে আবারও আগামীকালের আন্দোলন কীভাবে কী হবে, তা নিয়ে কথা বলব। তারপর আর কোনোভাবেই কারো সাথে কানেক্ট করতে পারিনি। সারা দেশের সকল প্রকার কানেক্টিভিটির শাটডাউন।’
২৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এ সভায় তিনি হামলা ও নাশকতার জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করেন।
শেখ হাসিনা দাবি করেন, সরকার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করায় এরকম একটি আঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য তৈরি স্থাপনা নাশকতাকারীরা ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ সময় অনেক সাংবাদিক সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক দিনে ডিএমপির আওতাধীন এলাকায় ১ হাজার ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ কয়দিনে আন্দোলনকারীদের হামলায় পুলিশের ৬১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিলের ঘোষণা এলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেছাত্রলীগের মতো ছাত্রশিবিরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক সংগঠনগুলো দখল করে নিচ্ছে। নানা সমালোচনার পরও থাকবে ছাত্রদলের হল কমিটি। উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাংবাদিকদের এসব জানিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেশুক্রবারের মধ্যে আন্দোলন বন্ধ না হলে শনিবার থেকে তাঁরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শেবাচিম কর্মচারীদের সংগঠন।
৫ ঘণ্টা আগেবুধবার রাতেই সাড়ে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থানে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সাদাপাথরবাহী আরও ১৩০টিরও বেশি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই পাথরগুলোও আগের জায়গায় বিছিয়ে রাখা হবে।
৫ ঘণ্টা আগে