leadT1ad

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

ফেনীতে ৪ আগস্ট একদিনেই ৯ জন নিহত, বিচারের দাবি পরিবারের

গত বছরের ৪ আগস্ট চারদিক ঘেরাও করে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এতে নিহত হন ৯ জন।

স্ট্রিম প্রতিবেদকফেনী
৪ আগস্ট ২০২৪-এ ফেনীর মহিপালে আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা। সংগৃহীত ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতারওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলার এক বছর আজ। গত বছরের ৪ আগস্ট চারদিক ঘেরাও করে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এতে নিহত হন ৯ জন।

যাঁরা নিহত হয়েছেন
ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামের নেছার আহম্মদের ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ (২০), সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম (১৯), পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ওয়াকিল আহম্মদ শিহাব (১৯), সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারি গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে জাকির হোসেন শাকিব (১৯), সোনাগাজী উপজেলার ছাড়াইতকান্দি গ্রামের মো: আহসান উল্লার ছেলে মো. আব্দুর গনি (৩৮), চরচান্দিয়া গ্রামের মো. নোমান হোসেনের ছেলে মো. মাহবুবুর হাসান (২১), দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর এলাকার শাহজাহান টিপুর ছেলে সরোয়ার জাহান মাসুদ (২১), লক্ষ্মীপুর জেলার আব্দুল মালেকের মালেকের ছেলে অটোরিকশা চালক মো. সবুজ (২০), নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের মো. আবুল হাসেমের ছেলে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৩৮)।

মামলা বিচারিক কার্যক্রম
জুলাই অভ্যুত্থানে ফেনীতে ৯ জন শহীদ হওয়ার ঘটনায় ৭টি হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়া হামলার ঘটনায় ১৫টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারভুক্ত আসামি, ৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। এসব মামলায় প্রায় এক হাজার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোনাগাজী উপজেরার চরচান্দিয়া গ্রামের মো. নোমান হোসেনের ছেলে মাহবুবুল হাসান হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ আওয়ামী লীগের ২২১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান।

অস্ত্রহাতে এক হামলাকারী
অস্ত্রহাতে এক হামলাকারী

পরিবারের প্রত্যাশা
সোনাগাজীর মান্দারী গ্রামে নিহত জাকির হোসেন শাকিরেব বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নীরব নিস্তব্ধ তার বাড়ি। সাংবাদিক এসেছে শুনেই ঘর থেকে বের হয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন তার মা কোহিনুর আক্তার। স্ত্রীর কান্না দেখে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারেননি শাকিবের বাবা আবদুল লতিফও। নিহতদের পিতামাতা তাদের সন্তানদের হত্যার বিচার চেয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন দেওয়ার আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের
জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা বলেন, সবাই রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন
চাচ্ছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া যাবে না।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাই পালিয়েছে। অল্প কয়েকজনকে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
নিহত জাকির হোসেন শাকিবের মা কহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে মহিপালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। এক বছর পার হয়ে গেলেও আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার পেলাম না। কান্না করতে করতে এখন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তবুও ছেলে হত্যার বিচার পাচ্ছি না।‘

সেদিন যেভাবে হত্যা করা হয়
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্ররা। এ সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।এ সময় আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ মানুষ মিছিলে শামিল হন। সড়ক অবরোধ করায় বন্ধ থাকে যান চলাচল।

বেলা দেড়টার দিকে শহরের ট্রাংক রোড থেকে দলবল নিয়ে শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক হয়ে মহিপাল যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় সড়কে গুলি তাক করে সাংবাদিকদের একটি ব্যাংকের ভেতর তাড়া করে মোবাইল, প্রেস জ্যাকেট ও আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে মারধর করে তারা। পরে মহিপাল এলাকায় পৌঁছালে ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত গুলি ও হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় আওয়ামীলীগের আরেকটি পক্ষ শহরের ইসলামপুর রোডে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ও হামলা করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে
অনেকে আহত হন। বিকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫০ জন ভর্তি হন।
আরিফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে গুলি ও হামলা চালিয়েছে। শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।‘

Ad 300x250

সম্পর্কিত