leadT1ad

বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম, এক সপ্তাহে পেঁয়াজ-ডিমে উল্লম্ফন

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
স্ট্রিম গ্রাফিক

চালের বাজার আগেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল, এখন তাতে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, ডিম, সবজি, মসলা ও কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব পণ্য। নিত্যপণ্যের দামের এই উল্লম্ফনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। টানা বৃষ্টি, সরবরাহ সংকট ও অযৌক্তিক মজুদ—এই তিন কারণ মিলিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ধারা।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর শাহজাদপুর, বাড্ডা, হাতিরপুল ও কাওরানবাজারসহ কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের কেজি এখন ৮০-৮৫ টাকা। অর্থাৎ, মাত্র সাত দিনে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা।

কাওরানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘সংকট তেমন নেই, কিন্তু মজুদ কমে গেছে। প্রতিবছরই এ সময়ে দাম কিছুটা বাড়ে, তবে এবার হঠাৎ পাইকারিতে দাম লাফিয়ে উঠেছে। যাদের মজুদ শেষ, তারা নতুন দরে কিনে বিক্রি করছেন; আর যাদের মজুদ আছে, তারা সুযোগ নিচ্ছেন।’

এদিকে, ডিমের বাজারেও লাগাম নেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে ফার্মের বাদামি ডিমের এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা, আর সোনালি মুরগি ৩০০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সবজির চাহিদা কমে ডিমের দিকে ঝুঁকছেন অনেক ক্রেতা, ফলে ডিমের দামও বেড়েছে।

সবজির বাজারও ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে জুলাই থেকে দাম বেশি থাকলেও এখন প্রায় সবগুলোর কেজি ৮০ টাকার ওপরে। বেগুনের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-১২০ টাকা কেজিতে। করলা, কাঁকরোল, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০-২০০ টাকা, আমদানি করা টমেটো ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। শাকের আঁটি যেখানে আগে ১৫-২০ টাকায় মিলত, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।

মসলার বাজারেও ঊর্ধ্বগতি। প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচ আগে বিক্রি হতো ৪০০ টাকায়, এখন ৫৫০-৬০০ টাকায়। আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা কেজিতে।

কাওরান বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমতিয়াজ মাহমুদ। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট বেতন। প্রতিটি জিনিসের জন্যই হিসাব করে রাখতে হয়। হুট করে কোনও কিছুর দাম বাড়লে হয় প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনতে হয়, নতুবা অন্য কিছুর চাহিদা কমিয়ে ফেলতে হয়। বাজারে অনেক দিন ধরেই সবকিছুর দাম বাড়তি, বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে ডিমের দাম যেভাবে বেড়েছে। সবমিলিয়ে আসলে সংসার চালানোটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।’

চালের বাজারও কোনো স্বস্তি দিচ্ছে না। টিসিবির তথ্যমতে, রাজধানীতে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৫-৬০ টাকা, মাঝারি ব্রি-২৮ ও পাইজাম ৬০-৭৫ টাকা, আর সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৭৫-৮৫ টাকা দরে। প্রায় দেড় মাস ধরে এই দাম অপরিবর্তিত রয়েছে, কিন্তু নিম্নমুখী কোনো প্রবণতা নেই।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘আগস্ট-অক্টোবর মাসে সাধারণত খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এবার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। উৎপাদন বেশি হলেও একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে কেন এভাবে দাম বাড়ছে।’

ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোর মতে, কার্যকর বাজার মনিটরিং, সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হবে না। নতুবা দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সংকটে ফেলবে।

রবিবার থেকে ট্রাক-সেল শুরু করবে টিসিবি

টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে রবিবার থেকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

শনিবার টিসিবির উপ-পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫টি, গাজীপুর মহানগরীতে ছয়টি, কুমিল্লা মহানগরীতে তিনটি এবং ঢাকা জেলায় আটটি, কুমিল্লা জেলায় ১২টি, ফরিদপুর জেলায় চারটি, পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি ও বাগেরহাট জেলায় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে দৈনিক ট্রাক প্রতি ৫০০ জন সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য ভোজ্যতেল, চিনি ও মশুর ডাল বিক্রির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোন ভোক্তা ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

ভোক্তা প্রতি ২ লিটার ভোজ্যতেল ২৩০ টাকা, চিনি ১ কেজি ৮০ টাকা ও মশুর ডাল ২ কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হবে।

উল্লেখ্য, স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর কাছে বিক্রি মূল্য আগের মতোই বহাল থাকবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত