কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ
কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ
ছেলের সাথে গত পরশু ফোনে কথা বলেছিলাম। তখনও সে আমাকে বলেছিল, বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। একদিন পরেই আমার ছেলের মৃত্যুর খবর এলো- কথাগুলো যখন বলছিলেন তাঁর চোখমুখে চেপে রাখা কান্না যেন ফেটে বেড়িয়ে আসছে। ছেলের মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বাবা মো. ফখরুল আলম আফসোস করছিলেন।
ফখরুল আলম বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে শুধু বাইকে ধাক্কা লাগার মত তুচ্ছ কারণে এমন ঘটনা ঘটায়নি তাঁরা। ওকে মেরে ফেলার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবেই এটা করেছে। আমি ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম জানান, শাহরিয়ারের ডান পায়ের রানের পেছনের অংশে কাটা জখম আছে। পিঠের মাঝ বরাবর লালচে দাগ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার, ১৩ মে, রাত সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে শাহরিয়ারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে দূর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা কর।
শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শাহরিয়ার স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং ওই হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
জানাজা হয় বেলা ২ টায়
'আমার ভাই কারো কাছে কোন অন্যায় করে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী'- ভাইয়ের হয়ে এভাবেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সর্দার আমিরুল ইসলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মারা যাওয়া ২৫ বছর বয়সী তরুণ শাহরিয়ার আলমের আপন বড়ভাই তিনি। শাহরিয়ারের জানাজার দুই ঘন্টা আগে এই পোস্ট দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেলে শাহরিয়ারের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার, ১৪ মে বেলা ১১ টায় তাঁর লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দাফন করা হবে সাম্যকে।
কী ঘটেছিল রাতে
মঙ্গলবার রাতে উদ্যানের মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শাহরিয়ার। তাঁর সঙ্গে দুই বন্ধু্ও ছিল। পথে অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাঁদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। ওই মোটরসাইকেলের দু-তিন আরোহী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দু-তিনটি মোটরসাইকেলের আরোহীসহ মোট ১০-১২ জনের সঙ্গে শাহরিয়ারদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিরা শাহরিয়ারদের মারতে শুরু করেন। তাঁরাও আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
শাহরিয়ারের সঙ্গে থাকা বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি গণমাধ্যমকে এ সব ঘটনা জানান। আশরাফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
আশরাফুল আলম বলেন, তাঁরা তিনজন (সাম্য, রাফি ও মো. আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ) ছিলেন। অন্য মোটরসাইকেল আরোহীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁদের তিনজনের ওপর ওই ব্যক্তিরা আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সাম্যর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে। বলা যায়, ঘটনাস্থলেই সাম্য মারা যায়। অর্থাৎ স্পট ডেথ।’
দিনভর উত্তাল ক্যাম্পাস
শাহরিয়ার হত্যাকান্ডের এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বাইরে আসেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় নিয়াজ আহমদ বলেন, 'তোমরা যদি মনে করো, তুমি আর আমি আলাদা পক্ষ তাহলে আমি এখানে দাঁড়াই আছি, আমাকে মার ব্যাটা, মার।'
এরপর উপাচার্যকে নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দিকে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা শাহরিয়ার হত্যার বিচার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। পরে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রদল।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উদ্যানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল
শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করেছে ছাত্রদল। বুধবার দুপুরে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলেও প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে উপাচার্য ও প্রক্টর পদত্যাগ করবেন বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটায় একদল শিক্ষার্থী এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় উপাচার্য বেরিয়ে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিন, রিমান্ড আবেদন পুলিশের
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেটে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, শাহরিয়ারের বন্ধুদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন অভিযুক্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহতের মেজ ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌফিক হাসান গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন।
যেমন দেখা গেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির ফটকে পূজা সামগ্রীর সওদা করেন অচিন্ত্য কুমার ও তাঁর পরিবার। দোকানের কাছে যেতেই তীব্র গালিগালাজের শব্দ কানে আসে। আরেকটু এগোলে বোঝা যায়, অবৈধ দোকান উচ্ছেদকারীদের শাপশাপান্ত করছেন তাঁরা। দোকানিদের প্রশ্ন, তাঁদের উঠিয়ে দিলে মানুষ ভেতরে কী নিয়ে গিয়ে গিয়ে পূজা দেবেন?
কয়েকদিন ধরে রমনা মন্দিরের ফটক লাগোয়া দোকান উচ্ছেদ অভিযান চলছে। শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর অভিয়ান আরও জোরদার হবে, এমন আশঙ্কা করছেন দোকানিরা।
দোকানগুলোর ঠিক উল্টো পাশেই ব্যারিকেড টেপে মোড়া সেই জায়গা, যেখানে মঙ্গলবার রাতে শাহরিয়ার হামলার শিকার হন। এমনিতে বেশ নিরিবিলি, তবে কিছুক্ষণ পরপর উৎসুক মানুষ এসে উঁকি দিচ্ছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ ছবিও তুলছেন।
অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন উদ্যানে ভিড় বেশ কম। হকারের ডাক তেমন শোনা যায়নি, মুক্তমঞ্চ প্রায় ফাঁকা। কারো কারো মনে শঙ্কা, এই ঘটনার পর মন্দির ফটকের এই দোকানগুলো হয়তো স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হবে।
বদলে যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুধবার এক জরুরি সভা শেষে জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি ফটক স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৃহস্পতিবার থেকে উদ্যানে তল্লাশি অভিযান চলবে, এটিকে রমনা পার্কের মতো স্থায়ী উন্নয়নের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে ও পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ছাড়া উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, ডিএমপি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে। নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন, রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, রাত ৮টার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রশাসন।
তদন্ত কমিটি গঠন
শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আসিফ মাহমুদের আবেগঘন স্ট্যাটাস: আমরা দুঃখিত সাম্য
শাহরিয়ার আলম হত্যার ঘটনায় ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বুধবার দুপুরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সাম্য হত্যার বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, '২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সাথে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন।... প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই—এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।'তিন জনকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, 'হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু ব্যক্তি নয়—উদ্যান কেন্দ্রিক অপরাধচক্র, মাদক চক্র এবং উদ্যানের অনিরাপদ পরিবেশও এ ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবার কথা ছিল স্বস্তির জায়গা, অথচ অবৈধ দোকান, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধচক্রের কারণে এটি দীর্ঘদিন যাবৎ আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে। স্ট্যাটাসে তাঁর শেষ কথা ছিল, 'আমরা দুঃখিত সাম্য, তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তবে আর কারো সাথে যেন এমন কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।'
কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ
ছেলের সাথে গত পরশু ফোনে কথা বলেছিলাম। তখনও সে আমাকে বলেছিল, বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। একদিন পরেই আমার ছেলের মৃত্যুর খবর এলো- কথাগুলো যখন বলছিলেন তাঁর চোখমুখে চেপে রাখা কান্না যেন ফেটে বেড়িয়ে আসছে। ছেলের মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বাবা মো. ফখরুল আলম আফসোস করছিলেন।
ফখরুল আলম বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে শুধু বাইকে ধাক্কা লাগার মত তুচ্ছ কারণে এমন ঘটনা ঘটায়নি তাঁরা। ওকে মেরে ফেলার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবেই এটা করেছে। আমি ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম জানান, শাহরিয়ারের ডান পায়ের রানের পেছনের অংশে কাটা জখম আছে। পিঠের মাঝ বরাবর লালচে দাগ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার, ১৩ মে, রাত সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে শাহরিয়ারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে দূর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা কর।
শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শাহরিয়ার স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং ওই হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
জানাজা হয় বেলা ২ টায়
'আমার ভাই কারো কাছে কোন অন্যায় করে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী'- ভাইয়ের হয়ে এভাবেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সর্দার আমিরুল ইসলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মারা যাওয়া ২৫ বছর বয়সী তরুণ শাহরিয়ার আলমের আপন বড়ভাই তিনি। শাহরিয়ারের জানাজার দুই ঘন্টা আগে এই পোস্ট দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেলে শাহরিয়ারের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার, ১৪ মে বেলা ১১ টায় তাঁর লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দাফন করা হবে সাম্যকে।
কী ঘটেছিল রাতে
মঙ্গলবার রাতে উদ্যানের মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শাহরিয়ার। তাঁর সঙ্গে দুই বন্ধু্ও ছিল। পথে অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাঁদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। ওই মোটরসাইকেলের দু-তিন আরোহী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দু-তিনটি মোটরসাইকেলের আরোহীসহ মোট ১০-১২ জনের সঙ্গে শাহরিয়ারদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিরা শাহরিয়ারদের মারতে শুরু করেন। তাঁরাও আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
শাহরিয়ারের সঙ্গে থাকা বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি গণমাধ্যমকে এ সব ঘটনা জানান। আশরাফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
আশরাফুল আলম বলেন, তাঁরা তিনজন (সাম্য, রাফি ও মো. আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ) ছিলেন। অন্য মোটরসাইকেল আরোহীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁদের তিনজনের ওপর ওই ব্যক্তিরা আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সাম্যর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে। বলা যায়, ঘটনাস্থলেই সাম্য মারা যায়। অর্থাৎ স্পট ডেথ।’
দিনভর উত্তাল ক্যাম্পাস
শাহরিয়ার হত্যাকান্ডের এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বাইরে আসেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় নিয়াজ আহমদ বলেন, 'তোমরা যদি মনে করো, তুমি আর আমি আলাদা পক্ষ তাহলে আমি এখানে দাঁড়াই আছি, আমাকে মার ব্যাটা, মার।'
এরপর উপাচার্যকে নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দিকে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা শাহরিয়ার হত্যার বিচার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। পরে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রদল।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উদ্যানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল
শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করেছে ছাত্রদল। বুধবার দুপুরে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলেও প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে উপাচার্য ও প্রক্টর পদত্যাগ করবেন বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটায় একদল শিক্ষার্থী এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় উপাচার্য বেরিয়ে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিন, রিমান্ড আবেদন পুলিশের
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেটে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, শাহরিয়ারের বন্ধুদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন অভিযুক্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহতের মেজ ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌফিক হাসান গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন।
যেমন দেখা গেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির ফটকে পূজা সামগ্রীর সওদা করেন অচিন্ত্য কুমার ও তাঁর পরিবার। দোকানের কাছে যেতেই তীব্র গালিগালাজের শব্দ কানে আসে। আরেকটু এগোলে বোঝা যায়, অবৈধ দোকান উচ্ছেদকারীদের শাপশাপান্ত করছেন তাঁরা। দোকানিদের প্রশ্ন, তাঁদের উঠিয়ে দিলে মানুষ ভেতরে কী নিয়ে গিয়ে গিয়ে পূজা দেবেন?
কয়েকদিন ধরে রমনা মন্দিরের ফটক লাগোয়া দোকান উচ্ছেদ অভিযান চলছে। শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর অভিয়ান আরও জোরদার হবে, এমন আশঙ্কা করছেন দোকানিরা।
দোকানগুলোর ঠিক উল্টো পাশেই ব্যারিকেড টেপে মোড়া সেই জায়গা, যেখানে মঙ্গলবার রাতে শাহরিয়ার হামলার শিকার হন। এমনিতে বেশ নিরিবিলি, তবে কিছুক্ষণ পরপর উৎসুক মানুষ এসে উঁকি দিচ্ছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ ছবিও তুলছেন।
অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন উদ্যানে ভিড় বেশ কম। হকারের ডাক তেমন শোনা যায়নি, মুক্তমঞ্চ প্রায় ফাঁকা। কারো কারো মনে শঙ্কা, এই ঘটনার পর মন্দির ফটকের এই দোকানগুলো হয়তো স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হবে।
বদলে যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুধবার এক জরুরি সভা শেষে জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি ফটক স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৃহস্পতিবার থেকে উদ্যানে তল্লাশি অভিযান চলবে, এটিকে রমনা পার্কের মতো স্থায়ী উন্নয়নের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে ও পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ছাড়া উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, ডিএমপি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে। নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন, রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, রাত ৮টার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রশাসন।
তদন্ত কমিটি গঠন
শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আসিফ মাহমুদের আবেগঘন স্ট্যাটাস: আমরা দুঃখিত সাম্য
শাহরিয়ার আলম হত্যার ঘটনায় ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বুধবার দুপুরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সাম্য হত্যার বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, '২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সাথে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন।... প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই—এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।'তিন জনকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, 'হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু ব্যক্তি নয়—উদ্যান কেন্দ্রিক অপরাধচক্র, মাদক চক্র এবং উদ্যানের অনিরাপদ পরিবেশও এ ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবার কথা ছিল স্বস্তির জায়গা, অথচ অবৈধ দোকান, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধচক্রের কারণে এটি দীর্ঘদিন যাবৎ আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে। স্ট্যাটাসে তাঁর শেষ কথা ছিল, 'আমরা দুঃখিত সাম্য, তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তবে আর কারো সাথে যেন এমন কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।'
সাধারণত কোনো দেশের বাজেট প্রস্তাব হয়ে থাকে দেশটির সংসদেই। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো সংসদ ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার (২ জুন) বেলা ৩টায় উপস্থাপন করেছেন২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এই বাজেট
০৬ জুন ২০২৫প্রায় পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের মামলায় অবশেষে চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন দেশের উচ্চ আদালত। বহুল আলোচিত এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক
০৬ জুন ২০২৫সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় জামায়েতে ইসলামকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে জামায়াতের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক-দাঁড়িপাল্লা পুনর্বহাল হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ।
০৬ জুন ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ সোমবার (২ জুন) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হচ্ছে। কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই বৈঠকে , জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ৩১টি দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
০৬ জুন ২০২৫