leadT1ad

সিলেটের যে পাথর কোটি বছর আগের বিরল ভূ-ঐতিহ্য

পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক অবস্থা গঠনের সময় ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ হয়। কয়েক কোটি বছর আগের ওই ঘটনায় বর্তমান হিমালয় পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি। ওই সময়ই সিলেটের জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পূর্ব তীরে বিশাল আকারের পাথররাজি মাটির ওপরে উঠে আসে। প্রাচীন এই চুনাপাথর ‘ইয়োসিন সিলেট লাইমস্টোন’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত।

স্ট্রিম গ্রাফিক

পাথর লুটের ঘটনায় সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ের ‘সাদা পাথর’ এলাকা ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। উজান থেকে ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা এই পাথররাজি নিয়ে আলোচনা হলেও মূলত পুরো জাফলংই প্রাচীন চুনাপাথর স্তরসমৃদ্ধ একটি এলাকা। প্রায় ৫ কোটি বছর আগের ইয়োসিন যুগের এই পাথর এখনও উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও এই পাললিক শিলা শুধু সিলেটেই রয়েছে। আট বছর আগে বিরল এই জায়গাটিকে সরকার ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ বলেও ঘোষণা করেছে।

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক অবস্থা গঠনের সময় ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ হয়। কয়েক কোটি বছর আগের ওই ঘটনায় বর্তমান হিমালয় পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি। ওই সময়ই সিলেটের জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পূর্ব তীরে বিশাল আকারের পাথররাজি মাটির ওপরে উঠে আসে। প্রাচীন এই চুনাপাথর ‘ইয়োসিন সিলেট লাইমস্টোন’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। সিলেটের ভূতাত্ত্বিক এই সম্পদ দীর্ঘকাল ধরে ভূতত্ত্ব, প্রকৃতি বিজ্ঞান ও খনিজ সম্পদ বিষয়ের দেশবিদেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের অন্যতম গবেষণার স্থান।

গুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহ্য যাতে কোনোভাবেই ধ্বংস না হয়, একারণে অঞ্চলটিতে একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানায় বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। আজও সেই জাদুঘর তৈরি সম্ভব হয়নি।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে বিরল চুনাপাথর সমৃদ্ধ জাফলংয়ের ২২.৫৯ একর জায়গাকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য (জিওলজিকাল হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে বিরল চুনাপাথর সমৃদ্ধ জাফলংয়ের ২২.৫৯ একর জায়গাকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য (জিওলজিকাল হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে।

গবেষকদের আশঙ্কা, এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকলে বিপন্ন হয়ে যেতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভূ-ঐতিহ্য। ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, জাফলংয়ের ওই অঞ্চলে থাকা মজুদ থাকা বিরল এই চুনাপাথরের দুই-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে তুলে নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, গত শতকের আশির দশক থেকে সিমেন্ট তৈরির কাজে পাথরগুলো তুলে নিচ্ছে ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা।

সরকারের ভূ-ঐতিহ্য ঘোষণা

২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জায়গাটিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য (জিওলজিকাল হেরিটেজ) হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের অনুকূলে জমির মালিকানা হস্তান্তরিত হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে।

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সিলেবাসের অংশ হিসেবে ও ভূতত্ত্ব গবেষকদের গবেষণা এবং ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন জাফলং-এ ডাউকি নদীর পাড়ে অবস্থিত বাংলাদেশের ইয়োসিন যুগের একমাত্র উন্মুক্ত লাইমস্টোন, কপিলি শেইল-এর স্তর এবং বোল্ডার বেডসহ নিম্নে তফসিলে বর্ণিত টিলাগুলোকে (মোট: ২২ দশমিক ৫৯ একর) ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য (জিওলজিকাল হেরিটেজ) হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হল।’

‘যারা সিমেন্ট তৈরি করে, কোম্পানিগুলা অথবা যারা লাইমস্টোনের ব্যবহার করে তারা অলরেডি ওই জায়গাটা কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলে গিয়েছিল। এখন যদি ওই টুকরাটাও কেউ ভেঙে ফেলে বা নিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশে আসলে এই ফসিল যেটা আসলে প্রায় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কোটি বছর আগেকার ফসিল এটা, এই সৃষ্টিটা আসলে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে।’

ওই প্রজ্ঞাপনে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার চৈলাখেল (৩য় খণ্ড) মৌজার বিভিন্ন খতিয়ান ও দাগ নম্বরের ২২ দশমকি ৫৯ একর জমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রজ্ঞাপন ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার।

ভূমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা

এরপর জায়গাটার মালিকানা বা ভোগ-দখলের অধিকার নিয়ে জটিলতা সামনে আসে। জাফলংকে ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া-বাংলাদেশের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) ঘোষণার পরেই আপত্তি জানায় ‘মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা প্রশাসনকে একটি চিঠি দিয়ে জাফলংয়ে ‘ইসিএ’ ও ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ১৯৭২ সালে তাদের অধিগ্রহণ করা বলে দাবি করে। এসময় তারা উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে এসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পাথর তোলার প্রস্তুতিও শুরু করে। সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৩২১৮/২০২০ এর আদেশ বলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজ চলিতেছে’।

এ নিয়ে তখন পত্রপত্রিকায় খবর ছাপা হয়। তখন বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানায়, উন্মুক্ত শিলাস্তর, চুনাপাথর সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য জাতীয় স্বার্থে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর ভূমিকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানকে সেখানে পাথর তুলতে অনুমতি দেওয়া যাবে না।

প্রাচীন এই চুনাপাথর ‘ইয়োসিন সিলেট লাইমস্টোন’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। সম্প্রতি তোলা ছবি।
প্রাচীন এই চুনাপাথর ‘ইয়োসিন সিলেট লাইমস্টোন’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। সম্প্রতি তোলা ছবি।

ওই সময় উপজেলা প্রশাসন সেই সাইনবোর্ড খুলে ফেলে দেয়। এই বিষয়টি নিয়ে তখন একাধিক প্রতিবেদন লিখেছিলেন সিলেটের সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদকে আদালত অবমাননার একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন সরকারের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করে। ওখান থেকে একটা দল এসে তদন্ত করে বলে, অধিগ্রহণের টাকা দিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। যারা মালিকানা দাবি করছিল, তাদের অস্বীকার করেননি তারা।’

এরপর থেকে জায়গাটা ওভাবেই পড়ে আছে বলে জানান সিলেটের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ এই সাংবাদিক। তাঁর মতে, আমলাতান্ত্রিক সমন্বয়ের অভাবে দেশের অমূল্য এই সম্পদ বিপন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। আজও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তবে জায়গাটা একেবারে সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির কিছুটা নজরদারি রয়েছে।

আগে থেকেই প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকা জাফলং

জাফলংয়ে পাথর তোলায় পরিবেশর ক্ষতি হচ্ছে মর্মে ২০১২ সালে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনায় জাফলংকে প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা থেকে জানা যায়, ইসিএ ঘোষণার পর জাফলংয়ে যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ যেকোনো খনিজ সম্পদ আহরণ করা নিষিদ্ধ। ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন সব কাজও নিষিদ্ধ। ওই জায়গায় মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণকারী কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের চোখে জায়গাটার গুরুত্ব ও ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

ভূতাত্ত্বিক এই ঐতিহ্য যাতে কোনভাবেই ধ্বংস না হয় একারণে ওই অঞ্চলে একটি ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে ২০০৯ সালে সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি জানান, মেঘালয় থেকে ডাউকি নদী হয়ে যে পাথরগুলো জাফলংয়ে গড়িয়ে আসে সেগুলো এখনো তোলা হচ্ছে। এমনাবস্থায় আশঙ্কা তৈরি হয়, ভূ-ঐতিহ্য ঘোষিত প্রাচীন পাথরগুলোও তুলে নিয়ে যায় কিনা।

স্ট্রিমকে সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ৫ কোটি বছর আগের এই পাথর অমূল্য। ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও সারা বিশ্বের গবেষকদের গবেষণার জন্য পাললিক শিলার স্তরসমৃদ্ধ ওই এলাকাকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জার্নালগুলোর একটি ‘জিয়ো হেরিটেজ’ জার্নালে সিলেটের এই প্রাচীন ভূ-ঐতিহ্য নিয়ে নিজের গবেষণা প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘চুনাপাথর দেশের অন্য জায়গাতেও রয়েছে। কিন্তু সিলেটের এই পাথরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এর ফসিল। এটা মূলত হলো মাইক্রো ফসিল। কিন্তু সিলেটের এই পাথরকে মেগাফসিল বলা হয়। কারণ এত বড় টাইপের মাইক্রো ফসিল বিশ্বে খুব কমই দেখা যায়। এই ফসিলগুলোসহ লাইমস্টোনের ব্লকটা এখনো টিকে আছে।’

পুরো জাফলংই প্রাচীন চুনাপাথর স্তরসমৃদ্ধ একটি এলাকা।
পুরো জাফলংই প্রাচীন চুনাপাথর স্তরসমৃদ্ধ একটি এলাকা।

এই জীবাশ্ম বাংলাদেশের আর কোথাও নেই জানিয়ে অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এমনকি রিজিওনালি এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভূতাত্ত্বিক হিস্টির জন্য এর গুরুত্ব অতুলনীয়।’

এই গবেষকের মতে, জায়গাটাকে ভূ-ঐতিহ্য ঘোষণা না করা হলে এতদিনে পাথরগুলো হারিয়ে যেতো। তিনি বলেন, ‘যারা সিমেন্ট তৈরি করে, কোম্পানিগুলা অথবা যারা লাইমস্টোনের ব্যবহার করে তারা অলরেডি ওই জায়গাটা কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলে গিয়েছিল। এখন যদি ওই টুকরাটাও কেউ ভেঙে ফেলে বা নিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশে আসলে এই ফসিল যেটা আসলে প্রায় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কোটি বছর আগেকার ফসিল এটা, এই সৃষ্টিটা আসলে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে।’

গত ডিসেম্বরে পাথরগুলো দেখে এসেছেন অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন। ওই অঞ্চল ঘুরে তাঁর মনে হয়েছে পাথরগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। যথাযথভাবে এটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। স্ট্রিমকে তিনি জানান, ‘ওই এলাকার প্রধান বৈশিষ্ট্য ইয়োসিন যুগের চুনাপাথর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। জরুরি ভিত্তিতে এর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও এলাকাটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’

সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার পরও কেন সেখানে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি জানতে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে ভূমিকম্প গবেষক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার স্ট্রিমকে জানান, ভূ-ঐতিহ্য ঘোষিত ২২.৫৯ একর জমির মধ্যে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ১০ একর জায়গা ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করেছে। এই জায়গায় রেস্ট হাউজ, গার্ড হাউজ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভূ-তাত্ত্বিক জাদুঘরসহ প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

জাফলংয়ের ইয়োসিন লাইমস্টোনকে ভূ-ঐতিহ্য ঘোষণার বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান প্রতিবেদনকারীর দায়িত্ব পালন করেছেন ড. সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার।

তবে সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী জানিয়েছেন, জায়গাটা শুধু নামেই সংরক্ষিত। সংরক্ষিত এলাকায় অস্থায়ী দোকানকোঠা বসানো হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছিন তিনি। এ নিয়ে স্ট্রিমের হাতে কিছু ছবি ও ভিডিও এসেছে।

সম্প্রতি সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর লুট করা নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। সাদাপাথরের পর জৈন্তাপুরের রাংপানির বিশাল আকারের পাথর কেটে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। সিলেটের সীমান্ত এলাকার নদীর স্রোতে গড়িয়ে আসা পাথর লুটের ফাঁকতালে কোটি বছরের ভূ-ঐতিহ্য ‘ইয়োসিন সিলেট লাইমস্টোন’ হারিয়ে গেলে অমূল্য সম্পদ হারাবে দেশ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত