leadT1ad

মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা নির্ধারণে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
সুপ্রিম কোর্ট। সংগৃহীত ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা তিনটি গেজেট ও পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।

আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন এবং ওই দিন শুনানিটি কার্যতালিকার শীর্ষে রাখার নির্দেশ দেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর সাদাত ও এ বি এম আলতাফ হোসেন। শুনানি শেষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক বিষয় এবং সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্ন উঠে এসেছে, যা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি প্রয়োজন।

বয়সসীমা নিয়ে বিতর্ক

রিটকারী পক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুনে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ বছর নির্ধারণ করে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর গেজেটে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে বয়স হতে হবে অন্তত ১৩ বছর। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সংশোধিত পরিপত্রে বয়সসীমা কমিয়ে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা হয়, যা ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রযোজ্য ধরা হয়।

এই গেজেট ও পরিপত্রগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধারা মোট ১৫টি পৃথক রিট করেন।

হাইকোর্টের রায়

২০১৯ সালের ১৯ মে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন। রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণের সরকারি গেজেট ও পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮–এর সংজ্ঞাসংক্রান্ত ২ ধারার ১১ উপধারার অংশবিশেষকে সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া যাঁদের সম্মানী ভাতা বন্ধ করা হয়েছিল, তাঁদের ভাতা রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের রায়ের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পৃথকভাবে লিভ টু আপিল করে। ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এ লিভ মঞ্জুর করে এবং হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ওমর সাদাত বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা কোনো নোটিশ ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র বয়সসীমার কারণে তাদের অমুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বীর প্রতীক শহীদুল ইসলাম লালুর বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল মাত্র ১০ বছর, অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছিলেন। সরকারের বয়সসীমা নির্ধারণের সিদ্ধান্তে তিনি এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, বয়সসীমা নির্ধারণে সরকারের এখতিয়ার ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কিত জটিলতা থাকায় বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়া প্রয়োজন।

আগামী ২৯ অক্টোবর এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত