বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এআই-সঙ্গীর সঙ্গে ভাববিনিময় বা ডেট করছেন। এই তথ্য আমলে নিয়ে এটা বললে কি ‘অপরাধ’ হবে যে এআইয়ের ‘পিরিতির বাজার’ এখন যথেষ্ট ভালো!
তাহমীদ চৌধুরী
মানুষ যদি একটি টুডি অ্যানিমেটেড জড় ছবির প্রতি কোমল আবেগ অনুভব করতে পারে, তবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেদিন মানুষের সঙ্গ অবিকল অনুকরণ করতে শিখবে, কী ঘটবে সেদিন?
শূন্য দশকের শুরুতে জাপানে এক ‘সোশ্যাল ফেনোমেনা’ বা সামাজিক প্রপঞ্চ দেখা যায়। সেখানকার কিছু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ‘ডাকিমাকুরা’ নামের এমন এক কোলবালিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াচ্ছিলেন, যেখানে অ্যানিমে চরিত্রের ছবি প্রিন্ট করা থাকত। অনেকেই সে সময় ব্যাপারটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করেছিলেন। তখন এই বিচিত্র ঘটনার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘টুডি লাভ’, বাংলায় যাকে ‘দ্বিমাত্রিক ভালোবাসা’ নামে ডাকা যেতে পারে। তো সেই ‘টুডি লাভ’ যে বিস্তর পরিবর্তনের এক সামান্য পূর্বাভাস ছিল, তা কি কেউ ভেবেছিল?
সেই ভবিষ্যৎ এখন হয়তো আমাদের হাতের মুঠোয়। রেপ্লিকা, ক্যারেকটার.এআই, ক্যারিন.এআই—এ ধরনের অ্যাপগুলো এখন এআই-সঙ্গী তৈরির কারখানা। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এরা শুধু কথাই বলে না, শেখে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীর মানসিক চাহিদামতো ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করতে থাকে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন এখন একাকিত্বে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিকে ‘একাকিত্বের মহামারি’ হিসেবে অভিহিত করে সংস্থাটি বলেছে, ‘একাকিত্ব আজ একটি বিশ্বজনীন স্বাস্থ্য সংকট।’ এ বাস্তবতায় এআই-সঙ্গীরা এখন এক সহজলভ্য ‘সমাধান’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এআই-সঙ্গীর সঙ্গে ভাববিনিময় বা ডেট করছেন। এই তথ্য আমলে নিয়ে এটা বললে কি ‘অপরাধ’ হবে যে এআইয়ের ‘পিরিতির বাজার’ এখন যথেষ্ট ভালো!
আদতে মানুষ সঙ্গ চায়। আদিকাল থেকেই এই চাহিদা আমাদের অস্তিত্বের গভীরে প্রোথিত। গুহার দেয়ালে আঁকা ছবি থেকে মহাকাব্য—সর্বত্রই ভালোবাসার মানুষের জন্য এক চিরন্তন আকুতি দেখতে পাই আমরা। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর ‘সিম্পোজিয়াম’ বইয়ে ভালোবাসার উৎস বর্ণনা করতে গিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনির কথা লিখেছেন। প্লেটোর মতে, মানুষ একসময় দ্বিখণ্ডিত ছিল না; তাদের ছিল চার হাত, চারটি পা আর দুটি মুখ। কিন্তু দেবতারা মানুষের অহংকারে ভীত হয়ে তাদের দুভাগে ভাগ করে দেন। সেই থেকে প্রত্যেক মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া ‘অপর অর্ধেক’কে খুঁজে চলেছে, এক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়।
এই আকাঙ্ক্ষা শুধু দর্শনে নয়, মূর্ত হয়েছে শিল্পেও। রোমান কবি ওভিদ তাঁর ‘মেটামরফসিস’ মহাকাব্যে সাইপ্রাসের ভাস্কর পিগম্যালিয়নের গল্প বলেন, যিনি নিজের হাতে গড়া নারীমূর্তির প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর ভালোবাসা এতটাই তীব্র ছিল যে দেবী ভেনাস সেই মূর্তিতে প্রাণ দান করেন। হালের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারিও যেমন বলেন, ‘মানুষ সবসময় বাস্তবতাকে অতিক্রম করে কল্পনার জগতে বাঁচতে চেয়েছে।’ পিগম্যালিয়নের গল্প হলো সেই কল্পনারই চূড়ান্ত প্রকাশ। জড়বস্তুর মধ্যে প্রাণের সন্ধান। সহস্রাব্দ ধরে এই সন্ধান চলেছে নানা রূপে, কিন্তু একবিংশ শতকের প্রযুক্তি মানুষের এই শাশ্বত আকাঙ্ক্ষাকে এক অভাবনীয় দিকে ঠেলে দিয়েছে।
যাঁরা সামাজিক উদ্বেগ বা মানসিক আঘাতের কারণে বাস্তব সম্পর্ক গড়তে পারেন না, তাঁদের জন্য এই ডিজিটাল এআই-সঙ্গীরা হয়ে উঠেছে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়। এখানে কোনো প্রতিশ্রুতির জটিলতা নেই, নেই হারিয়ে ফেলার ভয় কিংবা সপক্ষে সমর্থনের অভাব। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, এ ঘটনা মানব সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তবে এখানেও আছে মুদ্রার অপর পিঠ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এআই-প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের ‘অন্ধকার প্রবৃত্তি’ উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রও তৈরি করছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এমন অসংখ্য ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের এআই-সঙ্গীকে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করছে। ফলে প্রশ্ন জাগে, এই প্রযুক্তি কি শেষ অব্দি আমাদের ভেতরের সর্বোত্তম সত্তাকে বের করে আনছে, নাকি নিকৃষ্টতম সত্তার ব্যক্তিগত খেলার মাঠ তৈরি করে দিচ্ছে? দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎশে একদা সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যখন তুমি অতল গহ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকো, তখন সেই অতল গহ্বরও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে।’ এআই-সঙ্গীরা কি আমাদের সেই ব্যক্তিগত অতল গহ্বরের আয়না হয়ে উঠছে?
আমরা যখন কোনো সরঞ্জাম (ধরা যাক, হাতুড়ি) ব্যবহার করি, সেটি তখন আমাদের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা তার অস্তিত্ব নিয়ে ভাবি না। মার্টিন হাইডেগার, জার্মান দার্শনিক
সম্পর্ক যত গভীর, সেখানে ঝুঁকির পরিমাণও তত বেশি। এআইয়ের সঙ্গে ভাবসাবের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি হলো ‘অস্পষ্ট শোক’ কিংবা অ্যাম্বিগাস লস। ভেবে দেখুন, একদিন ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রিয় এআই খুলে প্রম্পট দিয়ে দেখলেন তার কথা বলার ভঙ্গি, তার স্মৃতি এবং বাকি যাবতীয় কিছু বদলে গেছে একটিমাত্র সফটওয়্যার আপডেটের ফলে। সে মরেনি, কিন্তু তা-ও সে আর ‘সে’ নয়। এই ক্ষতির কোনো শেষ নেই। ফলে এআই-সঙ্গী ব্যবহারকারী স্বাভাবিকভাবেই এক অদ্ভুত শূন্যতায় আটকে যান, যা তাঁর মধ্যে একই সঙ্গে তৈরি করে এক ধরনের মানসিক পরাধীনতা।
কেননা ব্যবহারকারী জানেন, এই সম্পর্কটি কৃত্রিম। তবু তিনি এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারেন না। কারণ ততদিনে এআই-সঙ্গীর নির্ভরতা তার কাছে একধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। দার্শনিক মার্টিন হাইডেগারের তত্ত্ব দিয়ে এ আসক্তিকে কিছুটা ব্যাখ্যা করা যায়। হাইডেগার বলেন, আমরা যখন কোনো সরঞ্জাম (ধরা যাক, হাতুড়ি) ব্যবহার করি, সেটি তখন আমাদের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা তার অস্তিত্ব নিয়ে ভাবি না। এখন এআই-সঙ্গীরাও কিছুটা সেভাবেই আমাদের মানসিক জীবনের একটি বর্ধিত অংশ হয়ে উঠছে। ভয়ের ব্যাপারটি এখানেই।
আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে ঘনিষ্ঠতা কেনা যাচ্ছে, সঙ্গ কাস্টমাইজ করা যাচ্ছে আর ভাবসাবও পাওয়া যাচ্ছে সাবস্ক্রিপশন মডেলে। এসব দেখে প্লেটোর সেই হারানো ‘অপর অর্ধেক’-এর সন্ধানের কথাই যেন মনে পড়ে, যা ছিল এক হওয়ার যন্ত্রণা ও আনন্দের মহাকাব্য। আজ আমরা যে ডিজিটাল ‘অপর অর্ধেক’ তৈরি করছি, তা কি আমাদের সম্পূর্ণ করার বদলে আরও একা, আরও খণ্ডিত করে ফেলার নিখুঁত ফাঁদ নয়?
মানুষ যদি একটি টুডি অ্যানিমেটেড জড় ছবির প্রতি কোমল আবেগ অনুভব করতে পারে, তবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেদিন মানুষের সঙ্গ অবিকল অনুকরণ করতে শিখবে, কী ঘটবে সেদিন?
শূন্য দশকের শুরুতে জাপানে এক ‘সোশ্যাল ফেনোমেনা’ বা সামাজিক প্রপঞ্চ দেখা যায়। সেখানকার কিছু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ‘ডাকিমাকুরা’ নামের এমন এক কোলবালিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াচ্ছিলেন, যেখানে অ্যানিমে চরিত্রের ছবি প্রিন্ট করা থাকত। অনেকেই সে সময় ব্যাপারটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করেছিলেন। তখন এই বিচিত্র ঘটনার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘টুডি লাভ’, বাংলায় যাকে ‘দ্বিমাত্রিক ভালোবাসা’ নামে ডাকা যেতে পারে। তো সেই ‘টুডি লাভ’ যে বিস্তর পরিবর্তনের এক সামান্য পূর্বাভাস ছিল, তা কি কেউ ভেবেছিল?
সেই ভবিষ্যৎ এখন হয়তো আমাদের হাতের মুঠোয়। রেপ্লিকা, ক্যারেকটার.এআই, ক্যারিন.এআই—এ ধরনের অ্যাপগুলো এখন এআই-সঙ্গী তৈরির কারখানা। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এরা শুধু কথাই বলে না, শেখে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীর মানসিক চাহিদামতো ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করতে থাকে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন এখন একাকিত্বে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিকে ‘একাকিত্বের মহামারি’ হিসেবে অভিহিত করে সংস্থাটি বলেছে, ‘একাকিত্ব আজ একটি বিশ্বজনীন স্বাস্থ্য সংকট।’ এ বাস্তবতায় এআই-সঙ্গীরা এখন এক সহজলভ্য ‘সমাধান’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এআই-সঙ্গীর সঙ্গে ভাববিনিময় বা ডেট করছেন। এই তথ্য আমলে নিয়ে এটা বললে কি ‘অপরাধ’ হবে যে এআইয়ের ‘পিরিতির বাজার’ এখন যথেষ্ট ভালো!
আদতে মানুষ সঙ্গ চায়। আদিকাল থেকেই এই চাহিদা আমাদের অস্তিত্বের গভীরে প্রোথিত। গুহার দেয়ালে আঁকা ছবি থেকে মহাকাব্য—সর্বত্রই ভালোবাসার মানুষের জন্য এক চিরন্তন আকুতি দেখতে পাই আমরা। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর ‘সিম্পোজিয়াম’ বইয়ে ভালোবাসার উৎস বর্ণনা করতে গিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনির কথা লিখেছেন। প্লেটোর মতে, মানুষ একসময় দ্বিখণ্ডিত ছিল না; তাদের ছিল চার হাত, চারটি পা আর দুটি মুখ। কিন্তু দেবতারা মানুষের অহংকারে ভীত হয়ে তাদের দুভাগে ভাগ করে দেন। সেই থেকে প্রত্যেক মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া ‘অপর অর্ধেক’কে খুঁজে চলেছে, এক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়।
এই আকাঙ্ক্ষা শুধু দর্শনে নয়, মূর্ত হয়েছে শিল্পেও। রোমান কবি ওভিদ তাঁর ‘মেটামরফসিস’ মহাকাব্যে সাইপ্রাসের ভাস্কর পিগম্যালিয়নের গল্প বলেন, যিনি নিজের হাতে গড়া নারীমূর্তির প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর ভালোবাসা এতটাই তীব্র ছিল যে দেবী ভেনাস সেই মূর্তিতে প্রাণ দান করেন। হালের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারিও যেমন বলেন, ‘মানুষ সবসময় বাস্তবতাকে অতিক্রম করে কল্পনার জগতে বাঁচতে চেয়েছে।’ পিগম্যালিয়নের গল্প হলো সেই কল্পনারই চূড়ান্ত প্রকাশ। জড়বস্তুর মধ্যে প্রাণের সন্ধান। সহস্রাব্দ ধরে এই সন্ধান চলেছে নানা রূপে, কিন্তু একবিংশ শতকের প্রযুক্তি মানুষের এই শাশ্বত আকাঙ্ক্ষাকে এক অভাবনীয় দিকে ঠেলে দিয়েছে।
যাঁরা সামাজিক উদ্বেগ বা মানসিক আঘাতের কারণে বাস্তব সম্পর্ক গড়তে পারেন না, তাঁদের জন্য এই ডিজিটাল এআই-সঙ্গীরা হয়ে উঠেছে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়। এখানে কোনো প্রতিশ্রুতির জটিলতা নেই, নেই হারিয়ে ফেলার ভয় কিংবা সপক্ষে সমর্থনের অভাব। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, এ ঘটনা মানব সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তবে এখানেও আছে মুদ্রার অপর পিঠ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এআই-প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের ‘অন্ধকার প্রবৃত্তি’ উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রও তৈরি করছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এমন অসংখ্য ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের এআই-সঙ্গীকে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করছে। ফলে প্রশ্ন জাগে, এই প্রযুক্তি কি শেষ অব্দি আমাদের ভেতরের সর্বোত্তম সত্তাকে বের করে আনছে, নাকি নিকৃষ্টতম সত্তার ব্যক্তিগত খেলার মাঠ তৈরি করে দিচ্ছে? দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎশে একদা সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যখন তুমি অতল গহ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকো, তখন সেই অতল গহ্বরও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে।’ এআই-সঙ্গীরা কি আমাদের সেই ব্যক্তিগত অতল গহ্বরের আয়না হয়ে উঠছে?
আমরা যখন কোনো সরঞ্জাম (ধরা যাক, হাতুড়ি) ব্যবহার করি, সেটি তখন আমাদের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা তার অস্তিত্ব নিয়ে ভাবি না। মার্টিন হাইডেগার, জার্মান দার্শনিক
সম্পর্ক যত গভীর, সেখানে ঝুঁকির পরিমাণও তত বেশি। এআইয়ের সঙ্গে ভাবসাবের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি হলো ‘অস্পষ্ট শোক’ কিংবা অ্যাম্বিগাস লস। ভেবে দেখুন, একদিন ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রিয় এআই খুলে প্রম্পট দিয়ে দেখলেন তার কথা বলার ভঙ্গি, তার স্মৃতি এবং বাকি যাবতীয় কিছু বদলে গেছে একটিমাত্র সফটওয়্যার আপডেটের ফলে। সে মরেনি, কিন্তু তা-ও সে আর ‘সে’ নয়। এই ক্ষতির কোনো শেষ নেই। ফলে এআই-সঙ্গী ব্যবহারকারী স্বাভাবিকভাবেই এক অদ্ভুত শূন্যতায় আটকে যান, যা তাঁর মধ্যে একই সঙ্গে তৈরি করে এক ধরনের মানসিক পরাধীনতা।
কেননা ব্যবহারকারী জানেন, এই সম্পর্কটি কৃত্রিম। তবু তিনি এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারেন না। কারণ ততদিনে এআই-সঙ্গীর নির্ভরতা তার কাছে একধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। দার্শনিক মার্টিন হাইডেগারের তত্ত্ব দিয়ে এ আসক্তিকে কিছুটা ব্যাখ্যা করা যায়। হাইডেগার বলেন, আমরা যখন কোনো সরঞ্জাম (ধরা যাক, হাতুড়ি) ব্যবহার করি, সেটি তখন আমাদের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা তার অস্তিত্ব নিয়ে ভাবি না। এখন এআই-সঙ্গীরাও কিছুটা সেভাবেই আমাদের মানসিক জীবনের একটি বর্ধিত অংশ হয়ে উঠছে। ভয়ের ব্যাপারটি এখানেই।
আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে ঘনিষ্ঠতা কেনা যাচ্ছে, সঙ্গ কাস্টমাইজ করা যাচ্ছে আর ভাবসাবও পাওয়া যাচ্ছে সাবস্ক্রিপশন মডেলে। এসব দেখে প্লেটোর সেই হারানো ‘অপর অর্ধেক’-এর সন্ধানের কথাই যেন মনে পড়ে, যা ছিল এক হওয়ার যন্ত্রণা ও আনন্দের মহাকাব্য। আজ আমরা যে ডিজিটাল ‘অপর অর্ধেক’ তৈরি করছি, তা কি আমাদের সম্পূর্ণ করার বদলে আরও একা, আরও খণ্ডিত করে ফেলার নিখুঁত ফাঁদ নয়?
খাইরুল বাসারের গান ইউটিউবে শুনতে গিয়ে কমেন্টবক্সে চোখ পড়ল। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘খাইরুল বাসারের গানে আলাদা একটা পিনিক আছে।’ এই ‘পিনিক’ আসলে 'ক্যাচি' আর লিরিকে-টিউনে রেপিটেটিভ ফর্মের কারণে হুকলাইন মুখস্ত হয়ে যাওয়া। আর সঙ্গে বাংলা ঢোলের মাথাদোলানো সাউন্ডস্কেপ।
৫ ঘণ্টা আগে‘ঘরে না থাকলে লাইট-ফ্যান বন্ধ রাখুন’—মোটামুটি সকলেই এ বাক্যটির সঙ্গে পরিচিত। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে টিভি, রেডিও, পত্রিকা- কোথায় ছিল না এই বিজ্ঞাপন?
৬ ঘণ্টা আগেবাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় ও আধুনিকতার এক উজ্জ্বল ভাষ্যকার রশীদ করীম। উপন্যাসের আখ্যানে ধারণ করেছেন বাংলা অঞ্চলের মানুষের নৈমিত্তিক ছবি-ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বাসনার রূপকল্প।
৯ ঘণ্টা আগেদুটি হাতের মধ্যে আমরা ডানহাতকেই বেশি এগিয়ে রাখি তাই না! ডান হাতই যেন সঠিক। বাম হাত দিয়ে কাউকে কোনো কিছু দিলেই তো মা দিতো বকা! তবে কেউ কেউ আমাদের আশপাশে ছিল যাঁরা বাম হাতে লিখতেন বা কাজ করতেন।
১ দিন আগে