সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে কামার আহমাদ সাইমনের সিনেমা ‘অন্যদিন’। সিনেমাটি প্রায় দুই বছর সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিল। আওয়ামী লীগের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এই সিনেমায়।
মাহমুদ নেওয়াজ জয়
‘অন্যদিন’ সিনেমটি নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের ‘জলত্রয়ী’ বা ওয়াটার ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। প্রথমটি ছিল ‘শুনতে কি পাও’? সেখানে নির্মাতা তুলে ধরেছিলেন ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিপর্যস্ত উপকূলবাসীর জীবনযাপন। আর ‘অন্যদিন’ সে জায়গা থেকে আরও বহুমাত্রিক পরিস্থিতিকে তুলে এনেছে। এই দুটি সিনেমারই প্রযোজক সারা আফরীন।
এবার সিনেমার গল্পে আসা যাক। এটা কোনো সরলরৈখিক গল্প নয়। কামার আহমাদ সাইমনের সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের সিনেমায় এসেছে নতুন ধাঁচ। যাকে বলা হয় ‘হাইব্রিড সিনেমা’। এই ধরনের ছবির বিশেষত্ব হলো, এর কিছু অংশ আগেই পরিকল্পনা করে শ্যুট করা হয়। আর কিছু অংশ ধারণ করা হয় সরাসরি বাস্তব ঘটনা বা চরিত্র নিয়ে। ফলে সম্পাদনার পর যে সিনেমাটা পর্দায় আসে, তা কি ‘ফিচার ফিল্ম’ নাকি ‘ফিকশন’ বা ‘ডকুমেন্টরি’—সেটা সহজে বলা যায় না।
এই ধারার সিনেমা দেখে দর্শকের মনে হবে, তিনি যেন তাঁর আশপাশের জগৎটাকেই নতুন চোখে দেখছেন। পর্দার অভিজ্ঞতা আর বাস্তবের অভিজ্ঞতা এখানে এমনভাবে মিলেমিশে যায় যে চোখের পর্দা আর সিনেমার পর্দা একাকার হয়ে যায়। আর এই অভিজ্ঞতাটাই দর্শক পাবেন ‘অন্যদিন’ দেখতে গিয়ে৷
সিনেমায় দেখা যায় একটি প্যাডেল স্টিমার, যার ইতিহাস প্রায় এক শ বছরের। সেই স্টিমার চলতে থাকে, আর যাত্রাপথে একে একে ঘটে যায় নানা ঘটনা। সেই সব ঘটনা আমাদের আশপাশের মানুষদেরই। স্টিমারে আছেন ট্যুর দিতে আসা কয়েকজন যাত্রী, অ্যাসাইনমেন্ট করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কয়েকজন বিদেশি পর্যটক, এক তরুণ ইউটিউবার, এক অন্ধ গায়ক, অভিজ্ঞ এক মুরুব্বি সারেং, পা ভেঙে রুজি-রোজগার বন্ধ হওয়া এক অসহায় মানুষ ও তার স্ত্রী, এক ধনী পরিবার, এলাকার চেয়ারম্যান, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের এক রাজনৈতিক নেতা ও তার অনুসারী। আর তাই স্টিমারটি যেন হয়ে উঠেছে আমাদের দেশেরই প্রতীক।
স্টিমারে এসব মানুষদের আমরা নানান ভূমিকায় দেখতে পাই। এখানে আছে ধর্ম নিয়ে বৃদ্ধ এক যাত্রীর তার পাশের সহযাত্রীর সঙ্গে আলোচনার দৃশ্য। বাস্তব সমস্যাকে এড়ানোর জন্য ধর্মের আশ্রয় নেয়ার মতো ব্যাপারগুলোও এসেছে সেখানে। এরপর দেখা যায় যে মানুষটি ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছেন, তিনি আবার তত্ত্বগান শুনে কাঁদছেনও! এভাবে ধর্ম আর সংস্কৃতির বিরোধ ঘুচে গেছে।
আবার, অভিজাত কেবিনের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেটে ঢুকতে না পেরে এক সাধারণ যাত্রীর গার্ডের সঙ্গে তর্কের দৃশ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে সমাজের শ্রেণিবৈষম্যকে। তাদের ‘হাগু’তে যে কোনো পার্থক্য নেই, সেটা বেশ জোর দিয়েই তাকে আমরা বলতে দেখি।
আরেকটা ব্যাপার হলো, নদীমাতৃক এই দেশের নদীসংক্রান্ত সমস্যাকে তুলে ধরা। বালু উত্তোলনের ফলে নদীপথ সংকীর্ণ হওয়া, নাব্যতা সংকট, চরে স্টিমার আটকে যাওয়া—এসব কিছুও এই সিনেমাতে উঠে এসেছে।
এর বাইরে স্বল্প পরিসরে এসেছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুও। আরোপিত কোনো সংলাপ নয়, বরং আটপৌরে সাধারণ জীবনে মানুষ যেভাবে, যে ভাষায় এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা-ই উঠে এসেছে সিনেমাটিতে।
সিনেমাটিতে সরাসরি দেখা যায়, আমাদের রাজনীতিতে প্রচলিত 'ভাই গ্রুপ'ও। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নাম সরাসরি উল্লেখ করেই দেওয়া স্লোগানও এখানে রয়েছে৷ সাংবাদিকেরা সরাসরি আওয়ামী লীগের নাম নিয়েই, এক নেতা ও তার অনুসারীকে প্রশ্ন করছে টাকা পাচার আর ব্যাংক লুট নিয়ে। এটি একেবারে জীবন্ত ও বাস্তব দৃশ্য৷ কোনো সাংকেতিক নাম নয়, নয় কোনো আরোপিত সংলাপ। একদম মনের ভেতর থেকে উঠে আসা জনমানুষের কথা এগুলো।
অন্যদিন সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। বছর চারেক পর, ২০১৭ সালে শুটিং শেষ হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে চলে সম্পাদনার কাজ। শেষ পর্যন্ত সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় দুই বছর। অবশেষে সিনেমাটি গত ১১ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের 'সীমান্ত সম্ভার' শাখায় প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত।
সেন্সর বোর্ডে কেন সিনেমাটি আটকে থাকল, তার কারণ বোঝা কঠিন কিছু নয়। যখনই কোনো সিনেমা ক্ষমতাকাঠামোকে প্রশ্ন করে, তখন যদি তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, তখন সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে সেই সময়টাও গুম হয়ে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়৷ আর তা হলে আর যাই হোক, জনগণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না।
‘অন্যদিন’ সিনেমটি নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের ‘জলত্রয়ী’ বা ওয়াটার ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। প্রথমটি ছিল ‘শুনতে কি পাও’? সেখানে নির্মাতা তুলে ধরেছিলেন ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিপর্যস্ত উপকূলবাসীর জীবনযাপন। আর ‘অন্যদিন’ সে জায়গা থেকে আরও বহুমাত্রিক পরিস্থিতিকে তুলে এনেছে। এই দুটি সিনেমারই প্রযোজক সারা আফরীন।
এবার সিনেমার গল্পে আসা যাক। এটা কোনো সরলরৈখিক গল্প নয়। কামার আহমাদ সাইমনের সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের সিনেমায় এসেছে নতুন ধাঁচ। যাকে বলা হয় ‘হাইব্রিড সিনেমা’। এই ধরনের ছবির বিশেষত্ব হলো, এর কিছু অংশ আগেই পরিকল্পনা করে শ্যুট করা হয়। আর কিছু অংশ ধারণ করা হয় সরাসরি বাস্তব ঘটনা বা চরিত্র নিয়ে। ফলে সম্পাদনার পর যে সিনেমাটা পর্দায় আসে, তা কি ‘ফিচার ফিল্ম’ নাকি ‘ফিকশন’ বা ‘ডকুমেন্টরি’—সেটা সহজে বলা যায় না।
এই ধারার সিনেমা দেখে দর্শকের মনে হবে, তিনি যেন তাঁর আশপাশের জগৎটাকেই নতুন চোখে দেখছেন। পর্দার অভিজ্ঞতা আর বাস্তবের অভিজ্ঞতা এখানে এমনভাবে মিলেমিশে যায় যে চোখের পর্দা আর সিনেমার পর্দা একাকার হয়ে যায়। আর এই অভিজ্ঞতাটাই দর্শক পাবেন ‘অন্যদিন’ দেখতে গিয়ে৷
সিনেমায় দেখা যায় একটি প্যাডেল স্টিমার, যার ইতিহাস প্রায় এক শ বছরের। সেই স্টিমার চলতে থাকে, আর যাত্রাপথে একে একে ঘটে যায় নানা ঘটনা। সেই সব ঘটনা আমাদের আশপাশের মানুষদেরই। স্টিমারে আছেন ট্যুর দিতে আসা কয়েকজন যাত্রী, অ্যাসাইনমেন্ট করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কয়েকজন বিদেশি পর্যটক, এক তরুণ ইউটিউবার, এক অন্ধ গায়ক, অভিজ্ঞ এক মুরুব্বি সারেং, পা ভেঙে রুজি-রোজগার বন্ধ হওয়া এক অসহায় মানুষ ও তার স্ত্রী, এক ধনী পরিবার, এলাকার চেয়ারম্যান, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের এক রাজনৈতিক নেতা ও তার অনুসারী। আর তাই স্টিমারটি যেন হয়ে উঠেছে আমাদের দেশেরই প্রতীক।
স্টিমারে এসব মানুষদের আমরা নানান ভূমিকায় দেখতে পাই। এখানে আছে ধর্ম নিয়ে বৃদ্ধ এক যাত্রীর তার পাশের সহযাত্রীর সঙ্গে আলোচনার দৃশ্য। বাস্তব সমস্যাকে এড়ানোর জন্য ধর্মের আশ্রয় নেয়ার মতো ব্যাপারগুলোও এসেছে সেখানে। এরপর দেখা যায় যে মানুষটি ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছেন, তিনি আবার তত্ত্বগান শুনে কাঁদছেনও! এভাবে ধর্ম আর সংস্কৃতির বিরোধ ঘুচে গেছে।
আবার, অভিজাত কেবিনের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেটে ঢুকতে না পেরে এক সাধারণ যাত্রীর গার্ডের সঙ্গে তর্কের দৃশ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে সমাজের শ্রেণিবৈষম্যকে। তাদের ‘হাগু’তে যে কোনো পার্থক্য নেই, সেটা বেশ জোর দিয়েই তাকে আমরা বলতে দেখি।
আরেকটা ব্যাপার হলো, নদীমাতৃক এই দেশের নদীসংক্রান্ত সমস্যাকে তুলে ধরা। বালু উত্তোলনের ফলে নদীপথ সংকীর্ণ হওয়া, নাব্যতা সংকট, চরে স্টিমার আটকে যাওয়া—এসব কিছুও এই সিনেমাতে উঠে এসেছে।
এর বাইরে স্বল্প পরিসরে এসেছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুও। আরোপিত কোনো সংলাপ নয়, বরং আটপৌরে সাধারণ জীবনে মানুষ যেভাবে, যে ভাষায় এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা-ই উঠে এসেছে সিনেমাটিতে।
সিনেমাটিতে সরাসরি দেখা যায়, আমাদের রাজনীতিতে প্রচলিত 'ভাই গ্রুপ'ও। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নাম সরাসরি উল্লেখ করেই দেওয়া স্লোগানও এখানে রয়েছে৷ সাংবাদিকেরা সরাসরি আওয়ামী লীগের নাম নিয়েই, এক নেতা ও তার অনুসারীকে প্রশ্ন করছে টাকা পাচার আর ব্যাংক লুট নিয়ে। এটি একেবারে জীবন্ত ও বাস্তব দৃশ্য৷ কোনো সাংকেতিক নাম নয়, নয় কোনো আরোপিত সংলাপ। একদম মনের ভেতর থেকে উঠে আসা জনমানুষের কথা এগুলো।
অন্যদিন সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। বছর চারেক পর, ২০১৭ সালে শুটিং শেষ হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে চলে সম্পাদনার কাজ। শেষ পর্যন্ত সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় দুই বছর। অবশেষে সিনেমাটি গত ১১ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের 'সীমান্ত সম্ভার' শাখায় প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত।
সেন্সর বোর্ডে কেন সিনেমাটি আটকে থাকল, তার কারণ বোঝা কঠিন কিছু নয়। যখনই কোনো সিনেমা ক্ষমতাকাঠামোকে প্রশ্ন করে, তখন যদি তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, তখন সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে সেই সময়টাও গুম হয়ে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়৷ আর তা হলে আর যাই হোক, জনগণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না।
খাইরুল বাসারের গান ইউটিউবে শুনতে গিয়ে কমেন্টবক্সে চোখ পড়ল। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘খাইরুল বাসারের গানে আলাদা একটা পিনিক আছে।’ এই ‘পিনিক’ আসলে 'ক্যাচি' আর লিরিকে-টিউনে রেপিটেটিভ ফর্মের কারণে হুকলাইন মুখস্ত হয়ে যাওয়া। আর সঙ্গে বাংলা ঢোলের মাথাদোলানো সাউন্ডস্কেপ।
৫ ঘণ্টা আগে‘ঘরে না থাকলে লাইট-ফ্যান বন্ধ রাখুন’—মোটামুটি সকলেই এ বাক্যটির সঙ্গে পরিচিত। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে টিভি, রেডিও, পত্রিকা- কোথায় ছিল না এই বিজ্ঞাপন?
৬ ঘণ্টা আগেবাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় ও আধুনিকতার এক উজ্জ্বল ভাষ্যকার রশীদ করীম। উপন্যাসের আখ্যানে ধারণ করেছেন বাংলা অঞ্চলের মানুষের নৈমিত্তিক ছবি-ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বাসনার রূপকল্প।
৯ ঘণ্টা আগেদুটি হাতের মধ্যে আমরা ডানহাতকেই বেশি এগিয়ে রাখি তাই না! ডান হাতই যেন সঠিক। বাম হাত দিয়ে কাউকে কোনো কিছু দিলেই তো মা দিতো বকা! তবে কেউ কেউ আমাদের আশপাশে ছিল যাঁরা বাম হাতে লিখতেন বা কাজ করতেন।
১ দিন আগে