leadT1ad

১৫ আগস্ট সারা দিনে ধানমন্ডি বত্রিশে যা ঘটল

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
শেখ মুজিবুর রহমানের ভেঙে দেওয়া বাড়ি, ধানমন্ডি ৩২। স্ট্রিম ছবি

১৫ আগস্ট। দুই বছর আগেও এ দিনে আয়োজন করে পালন করা হতো জাতীয় শোক দিবস। শোক পালন হতো আগস্ট মাসজুড়েই। আর শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতার কেন্দ্রে থাকত ধানমন্ডি ৩২। এবার তার কিছুই হয়নি। বরং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিনে ধানমন্ডি ৩২-এ হয়েছে ডিজে গান ও নাচ।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ৩২ নম্বর সড়কটি বন্ধ। দুই পাশে ভিড় করেছেন উৎসুক জনতা। তাঁদের কেউ কেউ ভিডিও করছেন। কেউ সাংবাদিকের ক্যামেরায় দিচ্ছেন ‘বিপ্লবী ভাষণ’।

তবে সাংবাদিক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ৩২ নম্বর সড়কে। দুই পাশে দেওয়া ব্যারিকেটের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। প্রস্তুত রেখেছেন অস্ত্র, সাঁজোয়া যান, জলকামান ও আর্মাড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি)।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভেতর ঢুকে দেখা যায়, একটা পিকাপ ভ্যানের ওপর বসানো হয়েছে এলইডি স্ক্রিন। লাগানো হয়েছে সাউন্ড বক্স। সেসব দেখভাল করার জন্য রয়েছেন কয়েকজন যুবক। তবে তাঁরা নিজেরদের নাম বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, ‘আমরা সব ধানমন্ডিবাসী মিলে “৩৬ জুলাই ডকুমেন্টারি” প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।‘

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় গান। ‘কিলার হাসিনা’ গানের তালে মেতে ওঠেন উপস্থিত জনতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই চলছিল এই স্ক্রিন। বাজছিল হিন্দি, বাংলা, দেশত্মবোধকসহ নানা গান।

হেনস্থা, মারধর

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২১ বছর পর দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করলে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তা পুনর্বহাল করা হয়।

২০২৪ সালের অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার আবার সেই স্বীকৃতি বতিল করে। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছিলেন, ‘১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমন্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তারপর টানা দুই বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনে বাধা দেওয়া হয়। এবারও ৩২ নম্বর সড়কের সামনে ঘটেছে বেশ কিছু হেনস্তার ঘটনা। সেব ঘটনার ভিডিও সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে একটিতে দেখা গেছে, ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন আজিজুর রহমান নামে একজন। ওই ব্যক্তি নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দেন। তবে উপস্থিত জনতার কারণে আর শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি তিনি। তাঁকে দেখেই `আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ‘ বলে চিৎকার করতে থাকে লোকজন। একপর্যায়ে তাঁর হাতে থাকা ফুলের তোড়া টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন একজন।

তখন কাঁদতে কাঁদতে আজিজুর রহমান বলছিলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি একটা ফুলের তোড়া কিনছিলাম শাহবাগ থেকে ৪ শ টাকা দিয়ে। আমি শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমি কোনো রাজনীতি বা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না।’

শেখ মুজিবুর রহমানের ভেঙে দেওয়া বাড়িতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন হালিমা নামের আরেক নারী। তাঁকেও ঢুকতে দেয়নি উপস্থিত ‘জনতা’।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এসে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান ওই নারী। নিজেকে তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেন। ওই নারী বলেন, ‘আজ ১৫ই অগাস্ট, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস। আমি এখানে ফুল দিতে আইছি। এটা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। আমি ফুল দিয়াই যামু।‘

পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে নারীর হাতে থাকা ফুল কেড়ে নেন সেখানে উপস্থিত কয়েকজন। পরে সেটি মাটিতে ফেলে দেন।

শ্রদ্ধা জানাতে আসা একজনের হাতে থাকা ফুলের তোড়া টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন উপস্থিত ‘জনতা’। সংগৃহীত ছবি
শ্রদ্ধা জানাতে আসা একজনের হাতে থাকা ফুলের তোড়া টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন উপস্থিত ‘জনতা’। সংগৃহীত ছবি

এমন আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ গণমাধ্যমে বলছেন, `দাঁড়িয়ে থাকাটাই আমার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।‘

এ ছাড়া স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসেন এক ব্যক্তি। তিনিও উপস্থিত জনতার তোপের মুখে পড়েন। তখন তিনি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন শেখ হাসিনা দেশের মানুষ মেরেছে কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হাসিনা মারেননি। তাঁর চাটুকাররা মানুষ মেরেছে।’

একইভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তোপের মুখে পড়েন আরও এক দম্পতি।

নিজেকে কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও এনসিপি আবার কখনো বিএনপির ওলামা দলের নেতা বলে দাবি করে ভাইরাল হয়েছেন সিদ্দিক। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় উল্লাস করে নাম পান ‘ভাইরাল সিদ্দিক’। শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনিও ধাওয়া খেয়েছেন।

যা বলছে পুলিশ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার থেকে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাঁদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আজ শনিবার (১৬ আগস্ট) ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা স্ট্রিমকে বলেন, ‘যাঁদের সন্দেহ হয়েছে, তাঁদের আমরা আটক করেছি। গতকাল মোট সাতজনকে ধানমন্ডি থেকে থানায় আনা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাঁচজনের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর দুজনের সঙ্গে মামলার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কোর্টে চালান করা হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত