leadT1ad

ফিরে দেখা ৪ আগস্ট

এক দিনে অন্তত ৯৩ মৃত্যু, ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা আসিফ মাহমুদের

৪ আগস্ট, ২০২৪। এ দিন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সারা দেশে এক দিনে অন্তত ৯৩ জন নিহত হন। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ঘোষণা দেন—‘পরশু নয়, আগামী কালই মার্চ টু ঢাকা’। এই একটি লাইনই বদলে দেয় ইতিহাসের গতিপথ। বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে রাস্তায় নামেন মোহাম্মত আসাদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রয়েছে অজস্র মানুষের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত স্মৃতি। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
‘আগামীকালই মার্চ টু ঢাকা। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করুন এখনই। চুড়ান্ত লড়াইয়ে শামিল হোন’—ক্যাপশন লিখে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন আসিফ মাহমুদ।

বাসা থেকে কাউকে না বলে বেরিয়েছেন মোহাম্মদ আহাদ। মা বারবার করে বলেছিলেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপ। এ অবস্থায় বাইরে না যেতে। কিন্তু আহাদ বাসায় বসে থাকতে পারলেন না। ভেতর থেকে কি এক বোধ যেন বসে থাকতে দিল না। রাজধানীর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহাদ। থাকেন মগবাজারে। সেদিন বাকি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে বাংলামোটর মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।

৪ আগস্ট, ২০২৪। বাংলামোটর মোড়। সময়টা তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁইছুঁই। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ তখন তুঙ্গে। অবশ্য শুধু পুলিশ বললে ভুল হবে। সেদিন পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও। বুলেট-বোমার বিরুদ্ধে ইট-পাটকেলের অসম এই লড়াইয়ে আন্দোলনকারীদের সহজেই পিছু হটে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা পিছু হটেননি।

রাস্তা থেকে ইট কুড়াতে কুড়াতে গুলির শব্দ কানে আসে আহাদের। অন্য সময় হলে হয়তো কানে তালা লেগে যেত। কিন্তু এখন সয়ে গেছে। তা ছাড়া, লড়াইয়ের মধ্যে এসব দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়? আহাদ তখন ইটের টুকরো খুঁজতে ব্যস্ত। ইট লাগবে, আরও ইট।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানাচ্ছে, গত বছর ৪ আগস্ট দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ৯৩ জন মানুষ নিহত হন।

সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে নিহতদের মরদেহ নিয়ে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। মিছিলটি ঢামেক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যায়।

৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকার ঘোষণা

এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকার’ ঘোষণা দেওয়া হয়। শুরুতে এটি ৬ আগস্ট আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা এগিয়ে আনা হয়। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিকেল সোয়া পাঁচটা নাগাদ এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘আজ প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে খুনি হাসিনা। চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশেপাশের জেলাগুলো থেকে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিয়ে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’

সবাইকে ইতিহাসের অংশ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ বলেন, ‘চূড়ান্ত লড়াই, এই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে। যে যেভাবে পারেন কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাব।’

এ ছাড়া ‘আগামীকালই মার্চ টু ঢাকা। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করুন এখনই। চুড়ান্ত লড়াইয়ে শামিল হোন’—ক্যাপশন লিখে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন আসিফ মাহমুদ। এতে মুক্তিকামী জনতাকে ঢাকায় আসার আহবান জানান তিনি।

৪ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক—বিজয় ছাড়া কিছু নয়। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি সহিংসতা চালিয়ে যেতে থাকে, আমরা জানিয়ে দিতে চাই, আমরা গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি।’

সরকারের পদক্ষেপ

৪ আগস্টে গণভবন নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভা আয়োজিত হয়। এ সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন যারা নাশকতা করছে, তারা কেউই ছাত্র নয়; তারা সন্ত্রাসী। এদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আন্দোলনের ব্যাপকতা দেখে সেদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় বলা হয়, রাজধানী, বিভাগীয় শহর, জেলা সদর, উপজেলা সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও শিল্পাঞ্চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ বলবৎ থাকবে। তা ছাড়া, ৫ আগস্ট থেকে তিন দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত