leadT1ad

সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই: সেনাবাহিনী

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫, ১২: ৫৪

স্ট্রিম প্রতিবেদক

সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, তা সত্য নয় বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

আজ সোমবার (২৬ মে)  ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানিয়েছে সেনাসদর।

সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ দৌলা বলেন, ‘সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, তা সত্য নয়।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী সব সময় দেশের সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। সরকারের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’

এরপর বন্দর-করিডর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ দৌলা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী কখনোই সম্পৃক্ত হবে না। দেশের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সেনাবাহিনী কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।

অন্যদিকে মব তৈরির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ যদি মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সেনাবাহিনী।’

নির্বাচন নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করবে—এমন গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই, এমনকি এ বিষয়ে আমাদের অভ্যন্তরেও কোনো আলোচনা হয়নি।’

‘করিডোর, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে সেনাবাহিনী আপোষহীন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে' বলেন কর্নেল শফিকুল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া গত ২০ মে ভাষানটেক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ২৮টি গুলিসহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিটলু বাবু ও তাঁর গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিগত ৪০ দিনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।

শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়ে সেনাবাহিনী জানায়, গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিগত এক মাসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিপননের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জেলি মিশ্রিত চিংড়িসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযান স্থানীয় জনগণের মাঝে স্বস্তির আস্থা সৃষ্টি করেছে।

সেনাবাহিনী জানায়, জুলাই অভ্যুথ্যানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৩৬ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সম্মেলনে ঈদুল আজহায় মানুষের যাতায়াতের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সেনাবাহিনী জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি অথবা অধিক দামে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ঈদুল ফিতরের মতোই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা হবে।

বিষয়:

Ad 300x250

সম্পর্কিত