চীনের কুইংদাওয়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এসসিও বৈঠকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ বিবৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় ভারত—এর একটি হলো ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা, অপরটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী ঘোষণা। পাকিস্তান ও চীনের প্রভাবকে ইঙ্গিত করে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে পক্ষপাতিত্বের। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—ভারত কি জোট থেকে নিজেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছে, নাকি এ তার সচেতন কূটনৈতিক কৌশল?
রাতুল আল আহমেদ
গত ২৫-২৬ জুন চীনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের কুইংদাও শহরে এসসিওভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের এই বৈঠকে পরপর দুটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে ভারত। এর একটি হলো ইরানে ইসরায়েলের হামলায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত নিন্দাপ্রস্তাব। অপরটি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যৌথ বিবৃতি। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ভারতের অভিযোগ, সংস্থাটি একটি নির্দিষ্ট দেশের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি এই জোট থেকে ক্রমাগতভাবে নিজেদের আলাদা করে নিচ্ছে? কেন ঐতিহাসিক মিত্র ইরানের পাশে না দাঁড়িয়ে ইরান-ইসরায়েল হামলায় ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিল ভারত?
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে এসসিও গঠিত হয় ২০০১ সালে। চীন, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার চারটি দেশ কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান একত্রিত হয়ে গঠিত হয় সংস্থাটি। এ সংস্থার উদ্দেশ্য মার্কিন ও পশ্চিমা ব্লকের বাইরে থেকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। ভারত ও পাকিস্তান একযোগে সংস্থাটির সদস্যপদ পায় ২০১৭ সালে। ২০২৩ সালে ভারতের সভাপতিত্বে সংস্থাটির কনিষ্ঠতম সদস্য ইরান যোগ দেয়।
ভারতের যোগদান এই জোটকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও বহুমুখী করতে চেয়েছিল। তবে ভারতের জন্য এই জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই একপ্রকার রাজনৈতিক দ্বিধা ছিল বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। এ জোটে একদিকে রয়েছে চীন-পাকিস্তানের বলয়, অন্যদিকে ভারতের হাতে রয়েছে রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ।
এসসিওভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে শেষ মুহূর্তে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংস্থাটির যৌথ বিবৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের মারফত জানা যায়, পহেলগামে সশস্ত্র হামলার উল্লেখ এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অনুরোধ বিবৃতিতে উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, পাকিস্তানের অনুরোধে বিবৃতিতে বেলুচিস্তানের ‘অশান্তি’র উল্লেখ করা হলেও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ বা ‘পাকিস্তানের তরফ থেকে আসা হামলার’ কোনো উল্লেখ ছিল না। ভারতের অভিযোগ, এসসিওর অভ্যন্তরে পাকিস্তানের স্বার্থ ও চীনের ছায়া প্রাধান্য পাচ্ছে।
ভারতের জন্য এটি কেবল কূটনৈতিক অপমান নয়। ভারত যেখানে ‘গ্লোবাল সাউথের’ সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে চাইছে, সেখানে এটি বেশ বড়সড় ধাক্কা বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। ভারত তার ক্ষুদ্র স্বার্থের রাজনীতির কারণেই ‘ঐতিহ্যগত উদার’ চরিত্র হারিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসছে বলেও বলছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এসসিও এক জোরালো বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে। ইরানের দীর্ঘদিনের ‘কৌশলগত বন্ধু’ হওয়া সত্ত্বেও ভারত কিন্তু নিজেকে ওই বিবৃতি থেকে সরিয়ে রেখেছে।
কারণ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তেজনা কমাতে এবং কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে তারা এর সমাধান চায়। কিন্তু মুখে সমাধানের কথা বললেও ভারত ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি; বরং আহ্বান জানিয়েছে ‘দুই পক্ষকেই উত্তেজনা থামানোর।’
সংঘাত চলছে এমন দুই দেশকে থামাতে বলার ‘রাজনীতি’ ব্যাখ্যা করেছেন নৃবিজ্ঞানী তালাল আসাদ। তাঁর মতে, দুই পক্ষকে উত্তেজনা থামানোর এই বক্তব্য আপাত ঠিকঠাক মনে হলেও সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গায়। সেটি হলো, ‘দুই পক্ষকেই উত্তেজনা থামানোর’ আহ্বান জানালে কেন যেন মনে হয় ‘ফেয়ার প্লে’ চলছে। আসাদ প্রশ্ন তোলেন, গুলি ও ঢিলের মধ্যে কি তুলনা চলতে পারে?
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান যেন সেই ‘ফেয়ার প্লে’-এর পক্ষেই সাফাই দেয়। তবে ইরান এই হামলাকে ‘অনৈতিক যুদ্ধ’ বলছে। ফলে ভারত যখন তার মিত্র ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, তখন সে মূলত যুদ্ধে ইসরায়েলকেই সমর্থন করছে, এমনটাই বলছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মত, এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ‘গ্লোবাল সাউথের’ ভরসার জায়গা হারাচ্ছে ভারত।
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, সাইবার প্রযুক্তি, কৃষি, এবং মোদি-নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মিলিয়ে এই মিত্রতা বেশ শক্তিশালী। একইসঙ্গে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ইসরায়েলের ‘মুসলিমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি’কেও অনুকরণ করছে বলে অভিযোগ ভারতের বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দের।
অন্যদিকে, ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, মধ্য এশিয়ায় সংযোগ হিসেবে চাবাহার বন্দর ও আফগানিস্তানের প্রবেশদ্বার হিসেবে ইরান গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ভারতে প্রায় ১৫ শতাংশ শিয়া মুসলমান বসবাস করে, যাঁদের ওপর ইরানের ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। ফলে কূটনৈতিকভাবে ইরানকে একঘরে করা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মায়া টিউডর ২০২৪ সালে ‘জার্নাল অব ডেমোক্রেসিতে’ লিখেছেন, ‘ভারত এখন আর প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রী নয়; বরং এক ধরনের নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদ’। তাঁর মতে, হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমননীতিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে। তাই তার বিদেশনীতিতেও ঢুকে পড়ছে সেই পক্ষপাত।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, ইরান একটি মুসলিম দেশ বলেই কি তার পাশে দাঁড়াচ্ছে না ভারত? এসসিওর বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করা, জাতিসংঘে গাজা ইস্যুতে ভোটদান থেকে বিরত থাকা এবং একাধিকবার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রশ্নে নীরব থাকা—সব মিলিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে একপ্রকার ‘ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচয় দাঁড় করিয়ে ফেলেছে, এমন অভিযোগ সমালোচকদের।
গত ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরায়েল প্রকাশ্যে ভারতের পাশে দাঁড়ায়। প্রশ্ন উঠছে, এই সমর্থনের প্রতিদান দিতেই কি ভারত ইরান প্রসঙ্গে ‘নিরপেক্ষতা’ দেখাচ্ছে? কিন্তু একই সময়ে এসসিওর ইরানবিষয়ক বিবৃতিতে অংশ না নেওয়া এবং জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধের নিন্দা ভোটে অনুপস্থিত থাকা ভারতকে এক ধরনের পক্ষপাতী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ভারত কূটনীতিতে নানা রকম বক্তব্য দিলেও বাস্তবে দেশটি ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। একদিকে রাশিয়া-ইরান-চীন বলয়ের কাছে ভারত অবিশ্বস্ত হয়ে উঠছে, আবার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের বলয়ের কাছেও দেশটির বিশ্বস্ততা প্রশ্নহীন নয়। এই পরিস্থিতিতে এসসিওর মতো গুরুত্বপূর্ণ জোটেও ভারত কি নিজেকে একঘরে করে ফেলছে, প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
যদি ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ হয় তাহলে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের একটি অন্তরায় হয়তো দূর হতে পারে। কিন্তু তার পরিণতিতে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি এবং আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রবেশ করাটা দুঃসাধ্য হতে পারে। ফলে ভারতের কৌশল যদিও ইসরায়েলপন্থী, কিন্তু তা হয়ে উঠতে পারে আত্মঘাতী।
এখন ভারত যদি সত্যিই একটি উদীয়মান আঞ্চলিক শক্তি হতে চায়, তবে তাকে আদর্শিক স্পষ্টতা ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে হবে। দেশটি যদি শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে মুসলিম মিত্রদের উপেক্ষা করে, তবে তা তার নিজের জন্যই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। আর এমন হলে ভারতের কূটনীতির ‘গ্লোবাল সাউথ’-কেন্দ্রিক নেতৃত্বের উচ্চাশা বাস্তবায়িত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
গত ২৫-২৬ জুন চীনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের কুইংদাও শহরে এসসিওভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের এই বৈঠকে পরপর দুটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে ভারত। এর একটি হলো ইরানে ইসরায়েলের হামলায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত নিন্দাপ্রস্তাব। অপরটি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যৌথ বিবৃতি। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ভারতের অভিযোগ, সংস্থাটি একটি নির্দিষ্ট দেশের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি এই জোট থেকে ক্রমাগতভাবে নিজেদের আলাদা করে নিচ্ছে? কেন ঐতিহাসিক মিত্র ইরানের পাশে না দাঁড়িয়ে ইরান-ইসরায়েল হামলায় ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিল ভারত?
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে এসসিও গঠিত হয় ২০০১ সালে। চীন, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার চারটি দেশ কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান একত্রিত হয়ে গঠিত হয় সংস্থাটি। এ সংস্থার উদ্দেশ্য মার্কিন ও পশ্চিমা ব্লকের বাইরে থেকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। ভারত ও পাকিস্তান একযোগে সংস্থাটির সদস্যপদ পায় ২০১৭ সালে। ২০২৩ সালে ভারতের সভাপতিত্বে সংস্থাটির কনিষ্ঠতম সদস্য ইরান যোগ দেয়।
ভারতের যোগদান এই জোটকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও বহুমুখী করতে চেয়েছিল। তবে ভারতের জন্য এই জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই একপ্রকার রাজনৈতিক দ্বিধা ছিল বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। এ জোটে একদিকে রয়েছে চীন-পাকিস্তানের বলয়, অন্যদিকে ভারতের হাতে রয়েছে রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ।
এসসিওভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে শেষ মুহূর্তে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংস্থাটির যৌথ বিবৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের মারফত জানা যায়, পহেলগামে সশস্ত্র হামলার উল্লেখ এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অনুরোধ বিবৃতিতে উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, পাকিস্তানের অনুরোধে বিবৃতিতে বেলুচিস্তানের ‘অশান্তি’র উল্লেখ করা হলেও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ বা ‘পাকিস্তানের তরফ থেকে আসা হামলার’ কোনো উল্লেখ ছিল না। ভারতের অভিযোগ, এসসিওর অভ্যন্তরে পাকিস্তানের স্বার্থ ও চীনের ছায়া প্রাধান্য পাচ্ছে।
ভারতের জন্য এটি কেবল কূটনৈতিক অপমান নয়। ভারত যেখানে ‘গ্লোবাল সাউথের’ সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে চাইছে, সেখানে এটি বেশ বড়সড় ধাক্কা বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। ভারত তার ক্ষুদ্র স্বার্থের রাজনীতির কারণেই ‘ঐতিহ্যগত উদার’ চরিত্র হারিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসছে বলেও বলছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এসসিও এক জোরালো বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে। ইরানের দীর্ঘদিনের ‘কৌশলগত বন্ধু’ হওয়া সত্ত্বেও ভারত কিন্তু নিজেকে ওই বিবৃতি থেকে সরিয়ে রেখেছে।
কারণ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তেজনা কমাতে এবং কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে তারা এর সমাধান চায়। কিন্তু মুখে সমাধানের কথা বললেও ভারত ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি; বরং আহ্বান জানিয়েছে ‘দুই পক্ষকেই উত্তেজনা থামানোর।’
সংঘাত চলছে এমন দুই দেশকে থামাতে বলার ‘রাজনীতি’ ব্যাখ্যা করেছেন নৃবিজ্ঞানী তালাল আসাদ। তাঁর মতে, দুই পক্ষকে উত্তেজনা থামানোর এই বক্তব্য আপাত ঠিকঠাক মনে হলেও সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গায়। সেটি হলো, ‘দুই পক্ষকেই উত্তেজনা থামানোর’ আহ্বান জানালে কেন যেন মনে হয় ‘ফেয়ার প্লে’ চলছে। আসাদ প্রশ্ন তোলেন, গুলি ও ঢিলের মধ্যে কি তুলনা চলতে পারে?
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান যেন সেই ‘ফেয়ার প্লে’-এর পক্ষেই সাফাই দেয়। তবে ইরান এই হামলাকে ‘অনৈতিক যুদ্ধ’ বলছে। ফলে ভারত যখন তার মিত্র ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, তখন সে মূলত যুদ্ধে ইসরায়েলকেই সমর্থন করছে, এমনটাই বলছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মত, এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ‘গ্লোবাল সাউথের’ ভরসার জায়গা হারাচ্ছে ভারত।
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, সাইবার প্রযুক্তি, কৃষি, এবং মোদি-নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মিলিয়ে এই মিত্রতা বেশ শক্তিশালী। একইসঙ্গে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ইসরায়েলের ‘মুসলিমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি’কেও অনুকরণ করছে বলে অভিযোগ ভারতের বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দের।
অন্যদিকে, ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, মধ্য এশিয়ায় সংযোগ হিসেবে চাবাহার বন্দর ও আফগানিস্তানের প্রবেশদ্বার হিসেবে ইরান গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ভারতে প্রায় ১৫ শতাংশ শিয়া মুসলমান বসবাস করে, যাঁদের ওপর ইরানের ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। ফলে কূটনৈতিকভাবে ইরানকে একঘরে করা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মায়া টিউডর ২০২৪ সালে ‘জার্নাল অব ডেমোক্রেসিতে’ লিখেছেন, ‘ভারত এখন আর প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রী নয়; বরং এক ধরনের নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদ’। তাঁর মতে, হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমননীতিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে। তাই তার বিদেশনীতিতেও ঢুকে পড়ছে সেই পক্ষপাত।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, ইরান একটি মুসলিম দেশ বলেই কি তার পাশে দাঁড়াচ্ছে না ভারত? এসসিওর বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করা, জাতিসংঘে গাজা ইস্যুতে ভোটদান থেকে বিরত থাকা এবং একাধিকবার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রশ্নে নীরব থাকা—সব মিলিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে একপ্রকার ‘ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচয় দাঁড় করিয়ে ফেলেছে, এমন অভিযোগ সমালোচকদের।
গত ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরায়েল প্রকাশ্যে ভারতের পাশে দাঁড়ায়। প্রশ্ন উঠছে, এই সমর্থনের প্রতিদান দিতেই কি ভারত ইরান প্রসঙ্গে ‘নিরপেক্ষতা’ দেখাচ্ছে? কিন্তু একই সময়ে এসসিওর ইরানবিষয়ক বিবৃতিতে অংশ না নেওয়া এবং জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধের নিন্দা ভোটে অনুপস্থিত থাকা ভারতকে এক ধরনের পক্ষপাতী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ভারত কূটনীতিতে নানা রকম বক্তব্য দিলেও বাস্তবে দেশটি ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। একদিকে রাশিয়া-ইরান-চীন বলয়ের কাছে ভারত অবিশ্বস্ত হয়ে উঠছে, আবার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের বলয়ের কাছেও দেশটির বিশ্বস্ততা প্রশ্নহীন নয়। এই পরিস্থিতিতে এসসিওর মতো গুরুত্বপূর্ণ জোটেও ভারত কি নিজেকে একঘরে করে ফেলছে, প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
যদি ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ হয় তাহলে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের একটি অন্তরায় হয়তো দূর হতে পারে। কিন্তু তার পরিণতিতে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি এবং আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রবেশ করাটা দুঃসাধ্য হতে পারে। ফলে ভারতের কৌশল যদিও ইসরায়েলপন্থী, কিন্তু তা হয়ে উঠতে পারে আত্মঘাতী।
এখন ভারত যদি সত্যিই একটি উদীয়মান আঞ্চলিক শক্তি হতে চায়, তবে তাকে আদর্শিক স্পষ্টতা ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে হবে। দেশটি যদি শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে মুসলিম মিত্রদের উপেক্ষা করে, তবে তা তার নিজের জন্যই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। আর এমন হলে ভারতের কূটনীতির ‘গ্লোবাল সাউথ’-কেন্দ্রিক নেতৃত্বের উচ্চাশা বাস্তবায়িত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে বসবে পরাশক্তি দুই দেশ। কিন্তু স্থান হিসেবে ট্রাম্প কেন আলাস্কাকেই বেছে নিলেন?
৪ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়ায় যান। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সফরের মূল লক্ষ্য অভিবাসন সহজ করা এবং বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
১ দিন আগেগত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিল।
১ দিন আগেভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন প্রভাবশালী এক চরিত্র। বাবা জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ‘প্রিয়দর্শিনী’ ইন্দিরা। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য থেকে রাজনীতির জীবন শুরু করে টানা ১১ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২ দিন আগে